প্রায় সম্পূর্ণ কাজে আকস্মিক বিঘ্ন আসতে পারে। কর্মে অধিক পরিশ্রমে স্বাস্থ্যহানির আশঙ্কা। ... বিশদ
জিরাটের নট্ট-নন্দীপাড়ার কালীপুজো অবশ্য শুধুই কালীপুজো নয়, পুজোর সঙ্গে জুড়ে আছে স্বাধীনতা সংগ্রাম, দেশভাগের যন্ত্রণা, উদ্বাস্তুদের কাহিনি। গায়ন ও বাদ্য শিল্পের এক পুরনো ধারাও মিশে আছে। শোনা যায়, একবার পুজোর প্রসাদ নিতে এসেছিলেন শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় নিজেই। আর স্বয়ং মুকুন্দ দাসও এসেছিলেন নট্ট-নন্দীদের পাড়ায়। এসেছিলেন আরেক বিপ্লবী কবি নজরুল ইসলাম। সেসব আজ ইতিহাস। শুধু তার সাক্ষী হয়ে রয়ে গিয়েছেন এক দেবীমূর্তি, যাঁর সঙ্গে একই পংক্তিতে রয়ে গিয়েছেন এক কালীসাধক কবি।
মন্দিরের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে আছে মানুষের ইতিহাস। আছে দেশের স্বাধীনতার এক অমলিন অধ্যায়। বর্তমান বাংলাদেশের বরিশালের মাটিতে তখন তীব্র হয়ে উঠেছে স্বদেশি আন্দোলনের ঢেউ। তাতে মেতে উঠেছেন চারণকবি মুকুন্দও। নিজস্ব শৈলীতে কালীমাতা ও দেশমাতৃকাকে জুড়ে গান বাঁধছেন। সুরের জোয়ারে সেসব জ্বালাময়ী হয়ে উঠছে। বিপ্লবের আগুন জ্বলছে প্রতিদিন। যাত্রাপালা আর উজ্জীবনের গানে জোরালো হয়ে উঠছে স্বদেশভক্তি। সেইসময় চারণকবির সহচর ছিলেন কালীকৃষ্ণ নট্ট, সতীশচন্দ্র নন্দীরা। তারপর এপার এবং ওপার বাংলা দিয়ে গড়িয়েছে অনেক জল। স্বাধীনতার পরে পূর্ব পাকিস্তানের বসত ছেড়ে এপার বাংলায় চলে আসেন নট্ট-নন্দী পরিবারের অনেকেই। দেশভক্তি থেকে দেবভক্তিতে মেতে ওঠেন নট্ট-নন্দীরা। গায়ন ও বাদ্যচর্চা চলতেই থাকে। সেই পর্বেই গড়ে ওঠে জিরাটের মন্দির।
দেশের জন্য রক্ত দিতে প্রস্তুত ছিলেন কালীকৃষ্ণ। আর মন্দির প্রতিষ্ঠার পরে বুকের রক্তে দেবীকে অর্পণ করতেন। রক্তাম্বরী পরিহিত কালীকৃষ্ণ বুকের রক্ত দিয়ে পুজোর দৃশ্য আজও অনেকের স্মৃতিতে রয়ে গিয়েছে। দীপবলিতে সাড়ম্বরে পুজো হয় সেই দেবীর। আগে হরিনাম সংকীর্তনের জমাট আসর বসত। এখন সেসব পাট উঠে গিয়েছে। কালীকৃষ্ণের পুত্র কালিদাস নট্ট একদা সুরসাধক মান্না দে, শ্যামল মিত্র, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়দের সঙ্গে তবলা বাজিয়েছেন। সেই জমানার গরিমার মতো জৌলুস হারিয়ে যাওয়ার মুখে এসে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু জনমানসে থিতু হয়ে আছে একটা সময়ের সোনালি ইতিহাস। স্বাধীনতার, দেশভক্তির আর দেবভক্তি ও শিল্পচর্চার এক অনবদ্য সঙ্গমের ইতিহাস। আর পুরাতন ঠাকুরদালান দেবী আর চারণকবি আগের মতোই আছেন।