নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: খুনের জন্য পাসপোর্ট! বাংলাদেশের ঝিনাইদহ-৪ আসনের আওয়ামি লিগ এমপি আনোয়ারুল আজিম আনারকে খুনের বরাত পাওয়া গ্যাংয়ের সদস্য ফয়জল আলি সাজি ও মুস্তাফিজুর ফকিরের পাসপোর্ট তৈরি হয় চলতি বছরের এপ্রিলে। গত ৮ এপ্রিল তাদের পাসপোর্ট ইস্যু হয়। আখতারুজ্জামান শাহিনের নির্দেশে দ্রুত পাসপোর্ট তৈরির ব্যবস্থা করে নিষিদ্ধ ঘোষিত মাওবাদী সংগঠন পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির হিটম্যান সৈয়দ আমানুল্লা ওরফে আমান। এই আমানকেই এমপি’র খুনের ৫ কোটি টাকার (বাংলাদেশি মুদ্রায়) সুপারি দিয়েছিলেন শাহিন। তদন্তে নেমে চাঞ্চল্যকর এই তথ্য পেয়েছে বাংলাদেশ পুলিসের ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চ (ডিবি)। এমপি খুনের ঘটনায় যে তিনজনকে ডিবি গ্রেপ্তার করেছে, তাদের জেরা করে জানা গিয়েছে, সোনার বেআইনি কারবারে শাহিন সম্প্রতি ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন। দুবাই থেকে আনা ওই সোনা চোরাপথে ভারতে পৌঁছে যায়। কিন্তু গোটা লেনদেন বাবদ যে লভ্যাংশ, তা হাতিয়ে নিয়েছিলেন তাঁর বাল্যবন্ধু আনার। বিষয়টি নিয়ে শাহিন ও আনারের বিরোধ চরমে পৌঁছয়। আনারকে খুন করার ছক কষে শাহিন। তদন্তকারীরা বলছেন, রাজনৈতিক প্রভাবশালী হওয়ায় শাসকদলের এমপিকে বাংলাদেশে খুন করা সম্ভব নয়। তাই গত তিনমাস আগে ঢাকার বসুন্ধরা ও গুলশানে খুনের ব্লুপ্রিন্ট তৈরির সময় কলকাতাকে বেছে নেওয়া হয়। এদিকে খুনের ঘটনায় ধৃত আমানুল্লা আমন, ফয়জল কাজি সাজি ও শাহিনের গার্লফ্রেন্ড তথা পেশায় এসকর্ট গার্ল সিলিস্তা রহমানকে শুক্রবার ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক দিলরুবা আফরোজ তিথির এজলাসে তোলা হয়। বিচারক তিনজনকেই আট দিনের পুলিসি হেফাজতে পাঠান।
বাংলাদেশ পুলিস জেনেছে, খুনের বরাত পাওয়ার পর আমানুল্লা তার গ্যাং বাছাই করে। বাকিদের পাসপোর্ট থাকলেও, ফয়সল ও মুস্তাফিজুরের তা ছিল না। পাসপোর্ট তৈরি করে ভারতের ভিসা পাইয়ে দেওয়ার দায়িত্ব নেয় আমান। সেই পাসপোর্ট-ভিসাতেই ১১ মে কলকাতায় আসে ফয়সল ও মুস্তাফিজুর। এমপিকে খুনের পর ফয়সল ১৭ মে এবং মুস্তাফিজুর ১৮ তারিখ বাংলাদেশে ফিরে যায়।
ডিবির তদন্তে উঠে এসেছে, বেআইনি সোনার যৌথ কারবার ছিল শাহিন ও আনারের। চলতি বছরে গোড়ার দিকে দুবাই থেকে যে বিপুল পরিমাণ সোনা কার্গোতে ডিপ্লোমেটিক ট্যাগ লাগিয়ে বিমানে দুবাই থেকে বাংলাদেশে আনা হয়েছিল, সে বাবদ ২০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ ছিল শাহিনের। ওই সোনা থেকে চুয়াডাঙা সহ আরও কয়েকটি সীমান্ত দিয়ে পশ্চিমবঙ্গে ঢোকে। কিন্তু কারবারের লাভের টাকার গোটাই এমপি হজম করে নেন বলে অভিযোগ। তদন্তকারীরা বলছেন, এরপরই সিলিস্তাকে ‘হানিট্র্যাপ’ হিসেবে কাজে লাগিয়ে এমপি’কে ফাঁদে ফেলার কাজ শুরু করান শাহিন। খুনের সুপারি নেওয়া আমান ও সিলিস্তাকে নিয়ে এপ্রিল মাসের শেষদিনে কলকাতায় আসেন শাহিন। খুনের জন্য যাবতীয় পরিকল্পনা ও লজিস্টিক সাপোর্ট চূড়ান্ত করে ১০ মে বাংলাদেশ ফিরে যান শাহিন। কলকাতায় থেকে যান সিলিস্তা ও আমান।