প্রায় সম্পূর্ণ কাজে আকস্মিক বিঘ্ন আসতে পারে। কর্মে অধিক পরিশ্রমে স্বাস্থ্যহানির আশঙ্কা। ... বিশদ
সবাই জেনে গিয়েছেন সেই অমোঘ বাক্য, ভোট বড় বালাই! ভোটের জন্য পাঞ্জাব ও হরিয়ানার কৃষিনির্ভর গ্রামগুলির গায়ে হাত দেওয়ার সাহস নেই পুলিস ও প্রশাসনের। বিজেপি, কংগ্রেস কিংবা অকালি — কোনও রাজনৈতিক দল তো নয়ই। অথচ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (‘হু’) বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত যে ১৫টি শহরের নাম প্রকাশ করেছে, তার ১৪টিই ভারতের। আর দিল্লি তাদের মধ্যে রয়েছে শীর্ষে। পরিবেশকে মোটামুটি ভাবে বেঁচে থাকার মতো করে রাখতে প্রতি ঘন মিটার বাতাসে যে ধরনের যে পরিমাণ দূষণ কণা (পার্টিকুলেট ম্যাটার বা পিএম) থাকা উচিত বলে সীমারেখা বানিয়ে দিয়েছে হু, ভারতের সর্বত্রই তার পরিমাণ সেই সীমারেখার অন্তত ৪ গুণ।
দিল্লি-সহ উত্তর-পশ্চিম ভারতের সর্বনাশা কুয়াশা আক্ষরিক অর্থেই দক্ষিণ এশিয়ার আবহাওয়া, জলবায়ুর পক্ষে অভিশাপ হয়ে উঠেছে। বিষিয়ে দিচ্ছে গোটা দক্ষিণ এশিয়ার বাতাস। প্রকৃতি ও পরিবেশ। উৎসাহ দিচ্ছে উষ্ণায়নে। গা আরও গরম করে দিচ্ছে বাংলাদেশ, মালদ্বীপ, মায়ানমার-সহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির। এমনটাই বলছে হালের একটি আন্তর্জাতিক গবেষণা। ওই গবেষণা মতে, স্থলভাগের উপর থেকে সমুদ্রের দিকে উড়ে যেতে যেতে কুয়াশার মধ্যে থাকা সাবানের ফেনার মতো জলকণাগুলির জাত বদলে যাচ্ছে। তাদের গায়ে লেগে থাকা কার্বন কণাদের গায়ের রং বদলে যাওয়ার জন্যই এই পরিবর্তন। তাদের সূর্যালোক শুষে নেওয়ার ক্ষমতার বাড়া-কমাতেই এই বদল।
কুয়াশায় থাকা কার্বন কণাগুলি কালো থেকে হয়ে পড়ছে বাদামি। কালো রঙের কার্বন কণাগুলি আসে মূলত ডিজেলে চলা যানবাহন বা যন্ত্রাদি থেকে। গবেষণাপত্রটি বেরিয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান-জার্নাল ‘সায়েন্স অ্যাডভান্সেস’-এর ৩১ জানুয়ারি সংখ্যায়। বায়ুদূষণ নিয়ে একাধিক রিপোর্ট দেখিয়েছে, দেশের ৭৬.৮ শতাংশ মানুষই দূষিত বাতাসে শ্বাস নেন বা শ্বাস নিতে বাধ্য হন! কারণ, বাতাসে ভাসমান ধূলিকণার নিরিখে দেশের ১০২টি শহরেই বায়ুদূষণের মাত্রা ধারাবাহিক ভাবে লঙ্ঘিত হয়েছে। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে প্রকাশিত এক রিপোর্ট জানাচ্ছে, ‘হাউসহোল্ড এয়ার পলিউশন’-এ বিহার, ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড, ছত্তিশগড়, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, উত্তরাখণ্ড ও উত্তরপ্রদেশ এগিয়ে। আর ঘরের বাইরের বায়ুদূষণের ক্ষেত্রে প্রথম সারিতে রয়েছে হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, পাঞ্জাব, রাজস্থান, বিহার ও পশ্চিমবঙ্গ। নগরায়ন বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বায়ুদূষণের সেই পরিধি।
কুয়াশার মধ্যে থাকা ওই কার্বন কণাসমূহ সূর্যালোকের সাতটি রংকেই প্রায় পুরোপুরি শুষে নিতে পারে। আর তার জেরেই তাদের কালো দেখায়। কিন্তু, দিল্লি ও উত্তর-পশ্চিম ভারত থেকে স্থলভাগের উপর দিয়ে সমুদ্রকে লক্ষ্য করে দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলির দিকে উড়ে যেতে যেতে কুয়াশার মধ্যে থাকা সেই কার্বন কণাদের আলো শুষে নেওয়ার ক্ষমতা কমে যায়। ফলে, তাদের গায়ের রং আর কালো থাকে না। হয়ে পড়ে বাদামি। সাম্প্রতিক গবেষণায় জানা গিয়েছে, আলো শুষে নেওয়ার ক্ষমতা কমে গেলেও সমুদ্রের উপর দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলির দিকে যেতে যেতে কুয়াশায় থাকা ওই কার্বন কণারা আরও বেশি দিনের আয়ু পেয়ে যায়।
এর অর্থ হল, ওই বাদামি রঙের কার্বন কণাগুলির যতটা আয়ু (আরও সঠিক ভাবে বললে, অর্ধায়ু বা হাফ-লাইফ) হয় দিল্লি-সহ উত্তর-পশ্চিম ভারতে (৩.৬ দিন), দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলিতে তার আয়ু বেড়ে যায় অন্তত তিন থেকে পাঁচ গুণ (৯ থেকে ১৫ দিন)। ফলে, কুয়াশায় থাকা বাদামি রঙের কার্বন কণাগুলি আরও বেশি দিন থাকে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশে। গবেষকরা দেখেছেন, এটাই ওই অঞ্চলে উষ্ণায়নকে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।