সংবাদদাতা, কালনা: সরকারি জায়গায় থাকা দলেরই পার্টি অফিস নিজে দাঁড়িয়ে থেকে ভেঙে দিলেন রাজ্যের মন্ত্রী তথা তৃণমূল কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা স্বপন দেবনাথ। রবিবার জেসিবি দিয়ে কালনার হেমাতপুর মোড়ে থাকা বহু পুরনো পার্টি অফিসটি ভেঙে দেওয়া হয়। পার্টি অফিসটি যখন ভাঙা হচ্ছিল তখন মন্ত্রীর চোখে জল। পাশে দাঁড়ানো কর্মীদের মন্ত্রী বলেন, এই অফিসে রাতের পর রাত কাটিয়েছি। এর সঙ্গে বহু স্মৃতি জড়িয়ে আছে। কিন্তু সরকারি জায়গা যখন দখলমুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে তখন মন্ত্রী হিসেবে সেটা আমার মানা উচিত। তা না হলে লোকে আঙুল তুলবে। অফিস ভাঙার সময় এদিন অনেককেই বলতে শোনা যায়, স্বপনবাবু দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন। স্বপনবাবু ১৯৮৪সাল নাগাদ হেমাতপুর মোড়ে পার্টি অফিস তৈরি করেছিলেন। তখন তিনি কংগ্রেস করতেন। দিনে তো বটেই অধিকাংশ রাত এই পার্টি অফিসেই কাটিয়েছেন। ১৯৯৮সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূল কংগ্রেস গঠনের সময়েই তিনি কংগ্রেস ছাড়েন। তাঁকে দলের বর্ধমান জেলার সভাপতি করেছিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো। তখন এই পার্টি অফিসটি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। স্বপনবাবুর কথায়, সেইসময় পতাকা কেনার টাকা ছিল না। লোকের কাছে ধার করে, ভিক্ষা করে সংগঠন চালিয়েছি। হোটেলে খেলে টাকা লাগবে। তাই দলের কর্মীদের বাড়ি থেকে খাবার এনে এই পার্টি অফিসে বসে খেয়েছি। এই অফিস থেকেই নির্বাচন চলে ২০০৬ সালে বিধায়ক হয়েছি। এখন হেমাতপুরে আর একটি পার্টি অফিস তৈরি হয়েছে। কিন্তু এই অফিসটি স্বপনবাবুর অত্যন্ত প্রিয় ছিল। পুরনো লোকজন এলেই তাঁদের নিয়ে এই অফিসে এসে অতীতের স্মৃতিচারণ করতেন। সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী সরকারি জায়গা দখলমুক্ত করার বার্তা দিয়েছেন। তাকে সম্মান জানিয়ে স্বপনবাবু রাস্তার ধারে গড়ে ওঠা দলীয় পার্টি অফিসটি ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। শনিবার মালপত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। রবিবার তিনি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে জেসিবি দিয়ে অফিসটি ভেঙে দেন।
স্বপনবাবু বলেন, সিপিএমের হার্মাদরা এই অফিসে এসে অনেক হুমকি দিয়েছে। কিন্তু ময়দান ছাড়িনি। এই অফিসই আমাকে ‘হেরো স্বপন’ থেকে মন্ত্রী করেছে। অনেক সুখ-দুঃখের স্মৃতি রয়েছে এই দলীয় অফিস ঘিরে। অফিসটা ভাঙতে কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর সিদ্ধান্তকে সম্মান জানাতে অফিসটি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে ভেঙে দেওয়ার ব্যবস্থা করলাম।