প্রায় সম্পূর্ণ কাজে আকস্মিক বিঘ্ন আসতে পারে। কর্মে অধিক পরিশ্রমে স্বাস্থ্যহানির আশঙ্কা। ... বিশদ
পুরুলিয়ার কাশীপুর ব্লকের মণিহারা গ্রাম পঞ্চায়েতের শেষ সীমানায় অবস্থিত অদালি গ্রাম। গ্রামে পেয়ে ৫০টির বেশি আদিবাসী পরিবার বসবাস করে। মণিহারার ধর্মতলা মোড় থেকে গ্রামের দূরত্ব মেরেকেটে সাড়ে তিন কিলোমিটার। গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাচ্ছে ডাঙরা খাল। খালের উল্টোদিকেই বাঁকুড়ার ছাতনা ব্লক। বছরখানেক আগে খালের উপর একটি চেকড্যাম তৈরি করেছে বাঁকুড়া জেলা প্রশাসন। সেই চেক ড্যামই কার্যত অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে অদালির বাসিন্দাদের কাছে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, বছর দু’য়েক আগে বন্যার সময় চেক ড্যাম উপচে জল বইতে থাকে। ভেঙে যায় গ্রামে প্রবেশের একমাত্র রাস্তা। সে বছর ব্যাপক সমস্যায় পড়তে হয়েছিল অদালিবাসীকে। দীর্ঘদিন মণিহারার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছিল অদালির। তারপর রাস্তার উপর মাটি পাথর ফেলে কোনওভাবে অস্থায়ী রাস্তা তৈরি করেছিল প্রশাসন। কিন্তু এবছর বর্ষায় ফের সেই রাস্তা ভেঙে যাওয়ায় ফের চরম সমস্যায় পড়েছেন অদালিবাসী।
সোমবার খালের জলেই মাছ ধরছিলেন গ্রামের বাসিন্দা আনন্দ মান্ডি, মণিলাল মান্ডিরা। তাঁরা বলেন, রাস্তা তৈরি করা হচ্ছে, ফের ভেঙে যাচ্ছে। আমাদের যাতায়াত করতে ব্যাপক সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। রাতবিরেতে যদি কারও কোনও সমস্যা হয়, তাহলে তো হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারব না। প্রশাসনকে জানিয়েও কোনও সাড়া পাইনি। অদালি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নীলু বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, আমার বাড়ি মণিহারাতেই। রাস্তা ভেঙে যাওয়ার স্কুলে আসতে পারিনি। ঘুরপথের দূরত্ব ১০কিলোমিটার। সেই রাস্তা দিয়েই অত্যন্ত কষ্ট করে আসতে হয়। গ্রামের বাসিন্দা ফটিক মূর্মু বলেন, গ্রাম থেকে পুরুলিয়ার দূরত্ব ৬২কিলোমিটার। সেখানে বাঁকুড়ার দূরত্ব মাত্র ৩৫ কিলোমিটার। ফলে চিকিৎসার জন্য আমরা বাঁকুড়াতেই যাই। কিন্তু গ্রাম থেকে বাঁকুড়া যাওয়ার রাস্তার দু’কিলোমিটার অংশ অত্যন্ত খারাপ। সম্প্রতি জলস্বপ্ন প্রকল্পের পাইপ লাইনের জন্য রাস্তা খোঁড়া হয়েছিল। তারপর চাষের মরশুমে ট্রাক্টর গিয়ে রাস্তার অবস্থাও আরও খারাপ হয়ে গিয়েছে। বাসিন্দাদের ক্ষোভ,একদিকের রাস্তা ভাঙা, অন্যদিকে রাস্তা বেহাল। এর মাঝে পড়ে কার্যত বিচ্ছিন্ন দ্বীপে পরিণত হয়েছে অদালি। কোনও আত্মীয়স্বজন গ্রামে আসতে চান না। গ্রামেরই যুবক শ্রীকান্ত মুর্মু বলেন, গ্রামে অ্যাম্বুলেন্স ঢুকতে চায় না। রাস্তা খারাপ থাকায় যুবকদের বিয়ে হচ্ছে না। মেয়ের বাবারা গ্রামের নাম শুনলেই মুখ ফেরাচ্ছেন। সীমান্তের গ্রাম হওয়ায় আমরা সবদিক থেকে অবহেলিত। ওই অঞ্চলের সিপিএমের এরিয়া কমিটির সদস্য অরুণোদয় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, বেহাল রাস্তা নিয়ে আমরা বহুবার পঞ্চায়েতে ও বিডিও অফিসে ডেপুটেশন দিয়েছি। কিন্তু প্রশাসন এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ উদাসীন। মণিহারা পঞ্চায়েতের প্রধান টিঙ্কু কর্মকার বলেন, এই নিয়ে বাসিন্দাদের তরফে অভিযোগ পেয়েছি। কীভাবে সমস্যার সমাধান করা যায় তা নিয়ে জেলার সঙ্গে কথা বলব।