হস্তশিল্পীদের কর্মে সাফল্য ও সুনাম। সন্তানের সঙ্গে মতবিরোধ হতে পারে। ধর্মকর্মে মনোযোগ বাড়বে। ... বিশদ
বাবার কাছে ভাগীরথীর আনাচ কানাচ চিনেছিলেন পাটুলির হালদার পাড়ার বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব প্রহ্লাদবাবু। তাঁর বাবাও ছিলেন মৎস্যজীবী। জাল জলের নীচে আটকে গেলে বাবার শেখানো পদ্ধতিতে জলে ডুব দিতে হতো তাঁকে। সেই কাজ করতে গিয়ে অক্সিজেন ছাড়া জলের নীচে দীর্ঘক্ষণ ডুবে থাকার কৌশল রপ্ত হয়ে গিয়েছিল। এই অদ্ভুত ক্ষমতার কথা চাউর হয়ে যেতেই ‘ডুবুরি’ তকমা পড়ে যায় প্রহ্লাদের গায়ে। কোনও প্রথাগত প্রশিক্ষণ ছাড়াই তিনি ভাগীরথীর নীচে ডুব দিয়ে দেহ তুলে আনতে পারেন অনায়াসে। সরকারি ডুবুরিরা ব্যর্থ হলে ওস্তাদ প্রহ্লাদের ডাক পড়ে। শীত, গ্রীষ্ম হোক বা বর্ষা, ডাক পড়লেই গামছা গলায় প্রহ্লাদ তৈরি। তাঁর সাফ কথা, মায়ের ছেলে ডুবে গেলে তাঁকে জীবিত বা মৃত অবস্থায় মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিয়ে যে শান্তি পাওয়া যায়, তা পৃথিবীর আর কোনও কাজে মেলে না।
প্রহ্লাদবাবু এখনও পর্যন্ত ভাগীরথী থেকে ৬০-৬৫ জনের দেহ তুলে এনেছেন। চারজনকে জীবন্ত উদ্ধার করেছেন। এই কাজের কোনও পারিশ্রমিক নেন না তিনি। শুধু সংবাদটা তাঁর কাছে পৌঁছে গেলেই হল। চুপিতে দু’ বছর আগে পর্যটক ডুবে যাওয়ার ঘটনায় সরকারি ডুবুরি ব্যর্থ হওয়ায় তাঁরই ডাক পড়েছিল। প্রহ্লাদবাবু তৎক্ষণাৎ ডুব দিয়ে একজনের দেহ উদ্ধার করেছিলেন। পাটুলিতে কেউ ডুবে গেলে প্রহ্লাদবাবুই ভরসা। স্নান করতে গিয়ে কারও সোনাদানা জলে হারিয়ে গেলে প্রহ্লাদবাবুই খুঁজে এনে দেন।
স্ত্রী লক্ষ্মী দেবী ও এক ছেলে জীবনকে নিয়ে অভাবের সংসার প্রহ্লাদবাবুর। দুই মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। কিন্তু এত সামাজিক কাজ করেও সরকারি বাড়ি জোটেনি। ধারদেনা করে একটা পাকা বাড়ি করেছেন। কিন্তু বাড়ির প্লাস্টার হয়নি পয়সার অভাবে। তিনি বলেন, সরকারি লোক বা পুলিস ডাকলে আর ঘরে থাকতে পারি না। তবে এতজনের দেহ তুলে এনে দিয়েও সরকারি সম্মান জোটেনি। ‘ডুবুরি’ খেতাবটাও পেলাম না। অভাবকে সঙ্গী করেই দিন কাটাচ্ছি। বাবা শিখিয়েছিলেন, ডুব দিয়ে নাক ফেটে গেলে সরষের তেল নাকে টানলেই ভালো হয়ে যাবে। দম বাড়বে। সেই কৌশলে আজও ডুব দিই। নদীকে আমার ভয় লাগে না।