মাতৃসূত্রে বিপুল অঙ্কে বিত্তলাভ হতে পারে। কর্ম ও ব্যবসায় ক্রমোন্নতি। ঈশ্বর চিন্তায় মনে শান্তিলাভ। ... বিশদ
বহু বছর ধরে শান্তিপুর বড়বাজার এলাকায় সস্ত্রীক ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বর পূজিত হয়ে আসছেন। প্রায় ১৯৩ বছর আগেকার কথা। ইতিহাস বলছে, নদীপথে ব্যবসায়িক লেনদেনের কারণে শান্তিপুর শহরের মোতিগঞ্জ এলাকা অবিভক্ত বঙ্গদেশে বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছিল। সেসময় শান্তিপুরে উৎপাদিত কাঁচা পাটের ব্যাপক চাহিদা ছিল শহর কলকাতা সহ রাজ্যের অন্যান্য বাজারে। এই চাহিদার কারণেই মোতিগঞ্জ বড়বাজার সংলগ্ন এলাকায় পাটের এক বিরাট আড়ত গড়ে উঠেছিল। ১৮৩১ খ্রিস্টাব্দের ৩১ মার্চ ওই এলাকায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। বেশ কয়েকটি পাট ও চালের গোডাউন ভস্মীভূত হয়ে যায়। এরপরেই তখনকার স্থানীয় ব্যবসায়ীরা অগ্নি দেবতাকে তুষ্ট করতে ব্রহ্মাপুজো শুরু করেন। কিন্তু তাতেও রেহাই মেলেনি। বেশ কয়েকবার ওই এলাকায় ধারাবাহিক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটতে থাকে। তাই পরবর্তী সময়ে ব্রহ্মাপুজোর পাশাপাশি বিষ্ণু ও মহেশ্বরকেও এই পুজোয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। একই সঙ্গে ব্রহ্মার স্ত্রী গায়ত্রী, বিষ্ণুর স্ত্রী লক্ষ্মী ও মহেশ্বরের স্ত্রী দুর্গাকেও পুজো করার প্রচলন শুরু হয় এখানে।
ব্যবসায়ীদের কথায়, ১৮৫৩ সালে শান্তিপুর মহকুমার ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ঈশ্বরচন্দ্র ঘোষালের হাত ধরে এই পুজো অন্য মাত্রা পায়। শোনা যায়, তিনি এই পুজোয় ব্রহ্মার বিবাহ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন। বর্তমানে সেই রীতি মেনেই বৈশাখী পূর্ণিমা তিথির আগের রাতে এখানে ব্রহ্মার বিয়ের অনুষ্ঠান হয়। অধিবাসের আয়োজনও হয়। স্থানীয় পুরুষ ব্যবসায়ীরা মহিলা সেজে মাথায় কুলো, মঙ্গল প্রদীপ ও কলসি নিয়ে জল ভরতে যান। পুজোর উদ্যোক্তা তথা বড়বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক প্রসেনজিৎ সেন বলেন, ব্রহ্মা পুজোয় শান্তিপুরবাসীর নামে সংকল্প করা হয়। শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার মোড়ে ময়ূরপঙ্খী সাজিয়ে, তাতে ঢেঁকি সহযোগে নারদরূপী এক ব্যক্তিকে বসিয়ে পুজোর প্রচার করা হয়। সেটাকেই আমরা পুজোর আমন্ত্রণ হিসেবে ধরি। সেখানে বর্তমান সামাজিক পরিস্থিতি নিয়ে সচেতনতার বার্তাও দেওয়া হয়। ব্রহ্মা পুজোর মাধ্যমে আজও শান্তিপুরের পুরনো লৌকিক রীতিকে ধরে রাখার চেষ্টা করছি আমরা। আগামী সোমবার পর্যন্ত চলবে ব্রহ্মা পুজোর অনুষ্ঠান। পুজোকে ঘিরে বসেছে বিরাট মেলা। নদীয়া বাদেও মুর্শিদাবাদ, উত্তর ২৪ পরগনা ও পূর্ব বর্ধমান থেকেও বহু মানুষ এখানে ভিড় করছেন। নিজস্ব চিত্র