কোনও কিছুতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ভাববেন। শত্রুতার অবসান হবে। গুরুজনদের কথা মানা দরকার। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সুফল ... বিশদ
এই ব্যাপারে মালদহের অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) অশোককুমার মোদক বলেন, বেশ কিছু দিন ধরেই স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের আওতায় নথিভুক্ত পরিবারের তরফে নিয়ম বহির্ভূতভাবে টাকা নেওয়ার অভিযোগ জমা পড়ছিল। সম্প্রতি জনতার দরবারে অনুষ্ঠানে অনেকে আমাদের কাছে এই ব্যাপারে অভিযোগ জানান। ইংলিশবাজারের নার্সিংহোমগুলির বিরুদ্ধেই মূলত ওই অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে। আমরা দ্রুত নার্সিংহোমে অভিযান চালাব। অভিযোগ প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। প্রয়োজনে নার্সিংহোমের লাইসেন্স বাতিল করা হতে পারে। আমরা প্রতি মাসে নার্সিংহোম মালিকদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে এখন বৈঠক করি। সেখানেও বিষয়টি স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
অতিরিক্ত জেলাশাসক আরও বলেন, আগে আরএসবিওয়াই এবং স্বাস্থ্যসাথীর পৃথক কার্ড ছিল। ওই কার্ড উপভোক্তাদের কাছেই থাকত। বর্তমানে ওই দুই প্রকল্প মিশে গিয়েছে। একটি কার্ডে (তথা একটি পরিবার) বছরে সর্বাধিক পাঁচ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিমার সুবিধা পায়। আগে নির্দিষ্ট বয়স (নূন্যতম ১৮ বছর) না হওয়া পর্যন্ত কার্ডে নাম তোলা যেত না। বর্তমানে বয়সের কোনও সীমা নেই। আগে বছর বছর কার্ড নবীকরণ করাতে হতো। এখন আর তা করতে হয় না। উপভোক্তারা যাতে ঠিক মতো এই প্রকল্পের সুবিধা পায় তা দেখার জন্য রাজ্য সরকার আমাদের নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু অভিযোগ উঠলে আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করব।
প্রসঙ্গত, রাজ্যের প্রায় প্রতিটি জেলায় নার্সিংহোম তথা বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। সামান্য চিকিৎসার রোগীর পরিজনকে পাহাড়প্রমাণ বিল ধরিয়ে দেওয়া হয়। মৃত মানুষকে ভেন্টিলেশনে ‘জীবিত’ দেখিয়ে চিকিৎসা করার মতো গুরুতর অভিযোগও নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মাঝেমধ্যেই ওঠে। বিল না মেটানোয় মৃতদেহ আটকে রেখে শোকাহত পরিবারকে হুমকি দেওয়ার মতো ঘটনা তো হামেশায় শোনা যায়। বছর দু’য়েক আগে কলকাতার কয়েকটি নামকরা নার্সিংহোমে এই ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা পরপর ঘটে। ওই সময় বিষয়টি নিয়ে হইচই শুরু হয়। তারপরেই রাজ্য সরকার কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করে। বেপরোয়া ওই সব নার্সিংহোমকে বাগে আনতে বিল আনা হয়। তারপরেও যে নার্সিংহোমগুলির আচরণে কোনও পরিবর্তন হয়নি তা মালদহের ঘটনাতেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।
মালদহ জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, মালদহের মতো প্রান্তিক জেলায় বহু গরিব মানুষ বাস করে। চিকিৎসার জন্য তাঁদের মোটা অঙ্কের টাকা খরচের সামর্থ অধিকাংশ পরিবারেরই নেই। আবার বিমা কোম্পানিতে প্রতি বছর প্রিমিয়াম দিয়ে স্বাস্থ্য বিমার আওতায় আসাও সকলের পক্ষে সম্ভব নয়। ফলে গ্রামগঞ্জ থেকে শহরের বস্তিবাসীর কাছে স্বাস্থ্যসাথীর কার্ড প্রধান ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ওই কার্ড থাকা সত্ত্বেও উপভোক্তাদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার ঘটনা অনভিপ্রেত। কিন্তু একাংশ নার্সিংহোম সরকারি স্বাস্থ্য বিমার অধীনে থাকলেও তারা রোগী ও তাঁদের পরিবারের কাছ থেকে বেআইনিভাবে নিয়মবহির্ভূত টাকা আদায় করছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইংলিশবাজারের একটি নার্সিংহোমের মালিক বলেন, বেসরকারি বিমা সংস্থা আমাদের দ্রুত টাকা মিটিয়ে দেয়। কিন্তু সরকারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ সংস্থা বেশিরভাগ সময় এই ব্যাপারে গড়িমসি করে। প্রশাসনের আধিকারিকদেরও বারবার বিষয়টি বিভিন্ন মিটিংয়ে বলা হয়েছে। আমাদের যাতে লোকসান না হয় তা প্রশাসনের দেখা উচিত। এটা বলব না যে, নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের একেবারেই দোষ নেই। নার্সিংহোম মালিকদের একাংশ মাঝেমধ্যে দোষ করে থাকে। তারজন্য সকলকে কাঠগড়ায় তোলা ঠিক নয়।