বিদ্যায় অধিক পরিশ্রম করতে হবে। ব্যবসায় যুক্ত ব্যক্তির পক্ষে দিনটি শুভ। প্রেম-প্রীতিতে আগ্রহ বাড়বে। নতুন ... বিশদ
সুদীপ্ত রায়চৌধুরী: পুলওয়ামায় জঙ্গি হানা। জবাবে ভারতের বালাকোট অপারেশন। বায়ুসেনার হামলায় গুঁড়িয়ে গিয়েছে জয়েশ-ই-মহম্মদের প্রশিক্ষণ শিবির। আত্মঘাতী জঙ্গিদের পাশাপাশি খতম হয়েছে একাধিক জঙ্গি প্রশিক্ষক ও আইএসআই কর্তা। কিন্তু অভিনন্দন ভর্তমান কাণ্ডের পর সামরিকভাবে আর নতুন কোনও অপারেশন চালায়নি ভারত। এই পর্যন্ত পড়ে মনে হতে পারে, যুদ্ধ থেমে গিয়েছে। আপাতত শুধুই শান্তি-আলোচনা। কিন্তু বাস্তব চিত্রটা কিছুটা আলাদা। যুদ্ধ চলছে। দুই দেশের মধ্যে শুরু হয়েছে অঘোষিত এক লড়াই। সাইবার যুদ্ধ। যাকে এই মুহূর্তে ‘ফিফথ ডাইমেনশন অব ওয়্যার’ বলা হচ্ছে। স্থল, জল, বায়ু ও মহাকাশে লড়াইয়ের পর সাইবার দুনিয়ায় শুরু হয়েছে এই যুদ্ধ। সাইবার যুদ্ধে ভারতকে জমি ছাড়তে নারাজ পাকিস্তান। তাই নিজেদের সক্রিয়তা প্রমাণে ভারত সরকারের একাধিক ওয়েবসাইট হ্যাক করছে পাকিস্তানের হ্যাকাররাও। তবে শুধু পাকিস্তান নয়, সাইবার হামলা চালাতে পারে অন্য যে কোনও দেশ। এই পরিস্থিতিতে জঙ্গি হানার মোকাবিলায় ভারত কতটা তৈরি, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এই প্রসঙ্গে অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট ডি এস হুডা সম্প্রতি বলেন, ‘সেনাবাহিনীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পরিকাঠামো ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ইন্টারনেট যুক্ত থাকায় সাইবার হামলার আশঙ্কা ক্রমশ বাড়ছে। ভারতের মতো ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির দেশে এই ধরনের হামলার আশঙ্কা অত্যন্ত বেশি।’ প্রাক্তন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এম কে নারায়ণনের মতে, সাইবার অ্যাটাকের মোকাবিলায় সরকার এবং প্রতিরক্ষা এজেন্সিগুলিকে নিজেদের পুরনো ‘ক্রিপ্টো প্রোটোকল’ বাদ দিয়ে নতুন ও আরও শক্তিশালী ব্যবস্থা চালু করতে হবে।
সামরিক দিক থেকে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করার পাশাপাশি সাইবার যুদ্ধের মোকাবিলায় ২০১৮ সাল থেকে বিশেষ এক ‘সাইবার এজেন্সি’ গঠনের কাজ চালাচ্ছে ভারত। জানা গিয়েছে, সামরিক বাহিনী, বায়ুসেনা ও নৌসেনাবাহিনী থেকে বাছাই করা লোক নিয়ে এই বিশেষ এজেন্সি তৈরি করা হচ্ছে। মূলত প্রক্সি সাইবার ওয়ারফেয়ারে বিশেষভাবে পারদর্শী নতুন এই এজেন্সি। আরও জানা গিয়েছে, ন্যাশনাল সাইবার সিকিউরিটি অ্যাডভাইসরের (এনসিএসএ) সঙ্গে যোগাযোগ রেখে যাবতীয় কাজ করবে ডিফেন্স সাইবার এজেন্সি (ডিসিএ)। ইতিমধ্যে সামরিক বাহিনী, বায়ুসেনা ও নৌসেনাবাহিনী থেকে প্রায় ১ হাজার জনকে এই এজেন্সিতে নিয়োগও করা হয়েছে।
জঙ্গি সংগঠনগুলির তরফে বিভিন্ন সময়ে সাইবার হানা, ভুয়ো মেসেজে অনলাইন আতঙ্ক ছড়ানোর মত ঘটনা ঘটে। তা রুখতে নজরদারির কাজ চালাবে এই সাইবার এজেন্সি। এছাড়া, বিভিন্ন সময়ে অনলাইনে ভুয়ো তথ্য থেকে যেভাবে সাম্প্রতিককালে সন্ত্রাসের বাতাবরণ তৈরি হচ্ছে, তার মোকাবিলা করা, সেনা ও সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দফতরগুলির ওয়েবসাইট হ্যাক রোখার ভারও রয়েছে এই এজেন্সির কাঁধে। সূত্রের খবর, ফেসবুক, ট্যুইটার, ইউটিউব সহ অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়াগুলির উপরেও নজরদারি চালিয়ে থাকে এই এজেন্সি।
সাইবার হামলার মোকাবিলায় ভারতীয় বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করছেন। কিন্তু হামলা রুখতে ভারত এখনই পুরোপুরি তৈরি কি না, তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন বেশ কিছু প্রযুক্তি ও সামরিক বিশেষজ্ঞ। তাঁদের মতে, ভারতের হাতে বর্তমানে প্রায় ১০ হাজার সাইবার যুদ্ধ বিশেষজ্ঞ থাকলেও অপর প্রতিবেশী রাষ্ট্র চীন এক্ষেত্রে ভারতের চেয়ে অনেকটাই এগিয়ে। তাদের সাইবার যুদ্ধ বিশেষজ্ঞের সংখ্যা প্রায় ১০ লক্ষ। এছাড়া এখনও বেশ কিছু ভারতীয় ভুয়ো ফোন করে ব্যাঙ্কের তথ্য হাতিয়ে নেওয়ার মতো কাজ চালাচ্ছে। যা থেকে স্পষ্ট, এখনও প্রযুক্তি বিষয়ে সকলে সড়গড় নন। পাশাপাশি, চীনের থেকে কেনা বিভিন্ন ইলেকট্রনিক যন্ত্রে ম্যালওয়্যার ও ভাইরাস থাকার আশঙ্কাও রয়েছে।