প্রায় সম্পূর্ণ কাজে আকস্মিক বিঘ্ন আসতে পারে। কর্মে অধিক পরিশ্রমে স্বাস্থ্যহানির আশঙ্কা। ... বিশদ
স্বাস্থ্যদপ্তর সূত্রের খবর, ২০১৭ সালের ক্লিনিকাল এস্টাব্লিশমেন্ট অ্যাক্টে এই নিয়মের কথা বলা থাকলেও কঠোরভাবে এর প্রয়োগ হয়নি কখনও। কারণ, তা করলে একদিকে যেমন চিকিৎসকদের রোজগারে টান পড়ত, তেমনই আর্থিকভাবে সচ্ছল যেসব মানুষ বেসরকারি স্বাস্থ্যক্ষেত্রে পরিষেবা নিতে সমর্থ, বিপাকে পড়তেন তাঁরা। সরকার দু’পক্ষকে চটাতে চায়নি। তাছাড়া, বেশ কিছু নার্সিংহোম, ছোট হাসপাতাল সরকারি চিকিৎসকদের উপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল। বিশেষ করে ‘স্বাস্থ্যসাথী’ প্রকল্প চালু হওয়ার পর শুধুমাত্র এই কার্ডের সুবিধা নিতেই বেশ কিছু নার্সিংহোম গড়ে উঠেছে। সেখানে ‘স্বাস্থ্যসাথী’ কার্ডের ভিত্তিতে বিনামূল্যে চিকিৎসা পায় মানুষ। এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে অসংখ্য মানুষের রুটি-রুজি। তবে সুযোগের অপব্যবহারও চলছিল। সরকারি কর্মক্ষেত্রে গরহাজির থেকে অনেক চিকিৎসক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেই বেশি মনোনিবেশ করছিলেন। ভুগছিলেন গরিব ও অসহায় রোগীরা। তাই এই কড়াকড়ি।
তাছাড়া, সরকারি চিকিৎসকদের একটা বড় অংশ প্রাইভেট প্র্যাকটিস না করার শর্তে এনপিএ বা নন প্র্যাকটিসিং অ্যালাউন্স পান। ওয়াকিবহাল মহলের খবর, সেই এনপিএ নিয়েও অনেকে প্রাইভেট প্র্যাকটিস করে চলেছেন দেদার। এর ফলে সৎ চিকিৎসকরাই বেতন বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। একটা নির্দিষ্ট বয়সের পর এনপিএ মেলে না। সবদিক থেকে ক্ষতি হয় তাঁদের। সেদিকেও নজর দিচ্ছে স্বাস্থ্যভবন।
রাজ্য সরকারের তথ্য অনুযায়ী, সম্প্রতি কর্মবিরতি চলাকালীন সাড়ে পাঁচশোর বেশি জুনিয়র ডাক্তার বেসরকারি ক্ষেত্রে কাজ করে লক্ষ লক্ষ টাকা কামিয়েছেন। শুধুমাত্র ‘স্বাস্থ্যসাথী’র নথি থেকে এই তথ্য উঠে এসেছে। রাজনৈতিক মহলের দাবি, এই পরিসংখ্যান টনক নড়িয়ে দিয়েছে স্বাস্থ্যভবনের। তাই এখন সরকার এক ঢিলে দুই পাখি মারতে চাইছে। একদিকে, অনৈতিকভাবে প্রাইভেট প্র্যাকটিস থেকে চিকিৎসকদের বিরত রাখতে চাইছে তারা। অন্যদিকে, বেসরকারি হাসপাতাল এবং নার্সিংহোমগুলিতে গুচ্ছ গুচ্ছ সরকারি চিকিৎসকের নিয়োগে রাশ টানতে চাইছে স্বাস্থ্যভবন। তবে স্বাস্থ্যকর্তাদের দাবি, এই পরিকল্পনার সঙ্গে সাম্প্রতিক কোনও ঘটনার যোগ নেই।
আপাতভাবে মনে হতে পারে, সরকারি ক্ষেত্রের চিকিৎসকরা সময় বের করে প্রাইভেটে পরিষেবা দিলে সমস্যা তো কিছু নেই। কিন্তু বাস্তব পুরোপুরি আলাদা। সেখানে দেখা যায়, হাসপাতালে নামমাত্র সময় দিয়ে নার্সিংহোমে ছুটছেন অনেক ডাক্তার। সরকারি হাসপাতালে যে পরিষেবা পেতে কয়েকমাস সময় লাগে, বেসরকারি ক্ষেত্রে তা একদিনেই পাওয়া যায় কড়ি ফেললেই। ফুলেফেঁপে ওঠে এক শ্রেণির অসাধু চিকিৎসা ব্যবসায়ী। এই অবস্থায় নানা দিকের প্রভাব কাটিয়ে শেষ পর্যন্ত এই নিয়ম কতটা কার্যকর হয়, সেটাই দেখার।