ব্যবসায়িক কাজকর্ম ভালো হবে। ব্যবসার প্রসারযোগও বিদ্যমান। উচ্চশিক্ষায় সন্তানের বিদেশ গমনের সুযোগ আসতে পারে। গৃহশান্তি ... বিশদ
আমাদের বেঁচে থাকাটা এখন যেন তূলনামূলক জীবন। কেউ একটা ভালো ফ্ল্যাট কিনেছে দেখে আমি আরও একটা ভালো ফ্ল্যাট কিনব। কেউ একটা ভালো গাড়ি কিনেছে, তাহলে আমাকেও তার থেকে দারুণ গাড়ি কিনে ফেলতে হবে। এই তুলনামূলক জীবন নিয়ে বাঁচার অভ্যাসটা মারাত্মক। এই দৌড়ে যদি একবার নামা যায়, তাহলে আর নিস্তার নেই। এবার টেনশন, স্ট্রেস বা মেজাজ আমার-আপনার পিছু পিছুই দৌড়বে। আমি নিজেকে এই দৌড়টা থেকে সবসময় আলাদা রাখি। নিজেকে কখনও অন্যের তুলনায় কতটা ভালো বা খারাপ আছি, সেভাবে দেখি না। নিজেকে দিয়েই বিচার করি। আমি কি আমার পছন্দের বইটা কিনতে পারলাম? কারণ আমার কাছে এটা জরুরি।
কাজ এবং নিজস্ব ব্যক্তিগত জীবনের মধ্যে ভারসাম্য খোঁজার প্রক্রিয়া পাশ্চাত্যে অনেকদিন আগেই শুরু হয়েছে এবং এটা এমনি এমনি হয়নি। এই দৌড়ের যে শেষ নেই এবং এই ছোটা যে অর্থহীন, সেই বোধ থেকেই এই প্রক্রিয়াগুলোর ভিতর দিয়ে যাচ্ছে মানুষ। আমি জীবনে বহুবার ডিপ্রেশনের সম্মুখীন হয়েছি। তার থেকে বেরিয়ে আসার জন্য সাইকিয়াট্রিস্টের হাত ধরা বা বাড়িতে বাবা-মায়ের হাত ধরার মধ্যে কোনও লজ্জা নেই বলে আমি মনে করি। প্রতিযোগিতার যে জাঁতাকলে আমরা রোজ পিষ্ট হচ্ছি তাতে কাউন্সেলিং একটা জরুরি বিষয় হয়ে পড়েছে। এখন কিছুই লিঙ্গ নির্ধারিত নয়। আগে ভাবা হতো রান্নাঘরটা মেয়েদের জায়গা। ছেলেরা শুধু রোববার পাঁঠার মাংস রেঁধে তাক লাগিয়ে দেবে! এখন অনেক ক্ষেত্রেই সেটা পাল্টেছে। কারণ ছেলে বা মেয়ে সবাই শহর ছেড়ে দূরে গিয়ে থাকছেন কাজের প্রয়োজনে। তেমনই বাবা-মায়ের যত্ন করাটাও আর লিঙ্গ নির্ধারিত নেই। এই বিষয়গুলো সবাই সামলাচ্ছেন। তার সঙ্গে জড়িত টেনশনটাও। মূল কথা, প্রত্যেকে নিজের ফেলে আসা জায়গাটা যেন ভুলে না যাই। আমি অভিনেতা রাহুল হওয়ার আগে থেকে যে জায়গাগুলো ছিল, সেই জায়গাগুলো আমার এখনও আছে। তাদের সঙ্গে একটা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ, একটা কলব্যাক-এর জায়গা রাখা দরকার। এমন কয়েকজনকে চিনে রাখা, তাদের কাছে রাখা, যাদের আমার সিনেমা ফ্লপ হোক বা হিট, তাতে কিছু আসবে যাবে না। এইগুলো আমার কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ। এগুলোর পরেও যদি মনে হয় যে কোনও কারণে হোক বা অকারণে নিজেকে সামলে রাখতে পারছেন না, গো টু আ প্রফেশনাল। নিজেদের মধ্যে আমরা অনেক টেনশন, অপরাধবোধ এসব জমিয়ে রাখি। ধর্মাচরণ অনুযায়ী আমাদের তো কোনও কনফেশন বক্সের জায়গা নেই। তাই নিজের মধ্যে সবটা জমিয়ে খারাপ না থেকে মনের ভার লাঘব করুন। টাকার বিনিময়ে যে পেশাদার সাহায্য পাবেন, তাতে উপকৃত হবেন।
এছাড়া নিজের মতো করে কিছু অভ্যাস রাখা ভালো। এমন একটা কোনও অভ্যাস যেটার সঙ্গে আপনার পেশার সরাসরি কোনও সম্পর্ক নেই। আমি যেমন লিখি। পড়াশোনাও করি। এই দুনিয়াটা আমার কাছে প্রিয়। কেউ ছবি তোলে, কেউ রান্না করে ভালো থাকে। এগুলো ভীষণ মনের আরাম দেয়।
আর যারা বাবা-মা, তাদের কাছে একটা সুযোগ আছে বাচ্চার সঙ্গে সময় কাটিয়ে অনেক সুন্দর মুহূর্ত পাওয়ার। আমাদের ছেলে সহজকে আমি যেমন সুকুমার রায়ের কবিতা শেখাতে গেলাম, ও আমাকে হ্যারি পটার দেখাল। এগুলোও তো প্রাপ্তি। প্রিয়াঙ্কা (সরকার) এত সুন্দরভাবে ওকে বড় করছে! একটা মজার কথা বলি। একদিন দেখলাম সহজ দাঁড়িয়ে আছে, প্রিয়াঙ্কা ওকে বকছে। কেন? প্রিয়াঙ্কা ওর মার্কশিট দেখে বলছে, ‘তোর বাবা-মা কোনওদিন অঙ্কে ভালো নয়। এত নম্বর পায়নি। তাদের ছেলে হয়ে তুই এত নম্বর পেলি কেন? এটা তোর উচিত হয়নি!’ সহজ বিদেশি ভাষা শেখে, দাবা শেখে, গিটার শেখে। এগুলো ওকে যেমন সমৃদ্ধ করে তেমনই ওকে সঙ্গ দেওয়াটা আমার কাছে অক্সিজেন পাওয়ার মতো। নিজের সন্তানকে বড় হতে দেখার মতো আনন্দ, সন্তুষ্টি আর কিছু হয় না। সারা দিনের ক্লান্তি এক নিমেষে দূর হয়ে যায়। সন্তানকে সবসময় কাছে পাওয়ার সঙ্গে কিছু তুলনীয় নয়।
এর সঙ্গে সঙ্গে মানসিক শান্তির জন্য ধ্যান বা মেডিটেশনও খুব ভালো। আমি খুব সামান্য দিনই শুরু করেছি। তবে এটা কাজে দেয়।