কাজকর্মের ক্ষেত্রে দিনটি বিশেষ শুভ। নতুন যোগাযোগ ও উপার্জন বৃদ্ধির ক্ষেত্র প্রস্তুত হতে পারে। বিদ্যায় ... বিশদ
তবে প্রসঙ্গত বলে রাখা ভালো বিশেষ কিছু জটিল বা দীর্ঘমেয়াদি অসুখ-বিসুখ আছে যেমন ডায়াবেটিস, কার্ডিওভাস্কুলার ডিজিজ, হাইপারটেনশন, হাইপারলিপিডেমিয়া, ক্রনিক কিডনি ডিজিজ, নেফ্রাইটিস, প্যাংক্রিয়াটাইটিস, গলব্লাডার স্টোন, টিউমার বা ম্যালিগন্যান্সি ইত্যাদি যা সম্পূর্ণভাবেই ডাক্তারি পরীক্ষা-নিরীক্ষা, পর্যবেক্ষণ, সিদ্ধান্ত ও সেই অনুযায়ী ওষুধ, খাদ্য চিকিৎসা বা কখনও সখনও শল্যচিকিৎসার দাবি করে। সেক্ষেত্রে শুধুমাত্র প্রচলিত ধারণা বা কুসংস্কারের বশবর্তী হয়ে ঘরোয়া টোটকার প্রয়োগ করে নিজের বিপদ বাড়াবেন না। সাধারণত প্রাথমিকভাবে দু-একদিন প্রয়োগের পরেও বিশেষ কোনও পরিবর্তন না বুঝলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। বিশেষ কিছু সাধারণ অসুখ-বিসুখের কথা বলা হল, যেখানে ঘরোয়া টোটকা চমৎকার ফল দেয়।
১. সর্দি কাশি:
আদা, মধু ও তুলসী পাতার রস ১ চা-চামচ করে মিশিয়ে দিনে ২-৩ বার করে খেলে উপকার পাবেন।
মধুর সঙ্গে পাতিলেবুর রস মিশিয়ে খেলে সর্দিকাশিতে বেশ উপকার পাওয়া যায়।
১ কাপ ইষদুষ্ণ দুধে ১ চা-চামচ হলুদগুঁড়ো ও গোলমরিচগুঁড়ো মিশিয়ে দিন কয়েক খেলে লাভদায়ক।
লাল পেঁয়াজ রিং করে কেটে সারারাত মধুতে ভিজিয়ে রাখলেই তৈরি ন্যাচারাল কাফ সিরাপ।
১ বড় চামচ মেথিদানা, ৫-৭টা গোলমরিচ, ১ চা-চামচ আদা ৪ কাপ জলে ফুটিয়ে ২ কাপ থাকতে নামিয়ে ছেঁকে ঠান্ডা করে দিনে ৩-৪ বার করে খেলে ২-৩ দিনের মধ্যেই সর্দিকাশি উধাও হয়ে যাবে।
২. গলা ব্যথা ও গলায় ঘা
গলায় ঘা সারানোর সেই আদি অকৃত্রিম কার্যকরী উপায় হচ্ছে সামান্য গরম জলে এক চিমেটে লবণ বা বেকিং সোডা মিশিয়ে গার্গল করা। ডাক্তারবাবুরা বলেন ১ বার গার্গল করা ৩ বার ওষুধ খাওয়ার সমতুল্য।
গরমজলে মধু মিশিয়ে অল্প অল্প করে চুমুক দিয়ে খান।
আদা-মধু-তুলসীপাতার রস একসঙ্গে মিশিয়ে চেটে চেটে খান।
শুকনো আদা বা কাঁচা রসুনের অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট এক্ষেত্রে বেশ কার্যকরী।
৩. জ্বর-জারি
জ্বর আসলে বিশেষ বিশেষ রোগের উপসর্গ মাত্র। তাই এক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী রোগের প্রকৃত কারণ নির্ণয় করে সেই অনুযায়ী চিকিৎসা করাই বাঞ্ছনীয়। তবে যতক্ষণ না ডাক্তারবাবুর কাছে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে, প্রাথমিক ভাবে বড়জোর ১-২ দিন গুটিকয় টোটকা মেনে দেখতে পাবেন।
যেমন:
১ কাপ গরমজলে ১ চা-চামচ তুলসীপাতা ৫ মিনিট ভিজিয়ে রাখার পর দিনে ৩ বার করে জলটা খেতে হবে।
১ কাপ গরম জলে ১ চামচ গোটা সর্ষে ভিজিয়ে রেখে ছেঁকে জলটা খেতে হবে।
সারারাত ধরে ভেজানো কিসমিস, মধু ও লেবুর রস সহ খেলে অনেক সময় জ্বরের প্রকোপ কমে।
ডিহাইড্রেশনের জন্যে রোগীকে বার বার অল্প অল্প করে ওআরএস, ফলের রস, নুন-লেবুর শরবত, গরম দুধ, ডালের জল, চিকেন বা ভেজিটেবল স্যুপ, ছানার জল ইত্যাদি খাইয়ে যেতে হবে।
৪. অ্যাজমা
অ্যাজমায় আদা-চা-দারুণ উপকারী।
১ কাপ জল বা দুধে ৮-১০টা রসুনের কোয়া ফুটিয়ে ঠান্ডা করে প্রতিদিন ১ বার করে বেশ কিছুদিন খেলে উপকার হতে পারে।
১ বড় চামচ আদার রস, ১ বড় চামচ মধু ও ১ বড় চামচ মেথি বীজ সারারাত জলে ভিজিয়ে সেই জলটা সকাল সন্ধে দিনে ২ বার করে খেয়ে দেখুন।
১ কাপ গরম দুধে ১ চিমটে হলুদগুঁড়ো মিশিয়ে দিন কয়েক খান।
কোয়েরসেটিন সমৃদ্ধ আপেল, পেঁয়াজ, গ্রিন টি অ্যাজমার শ্বাসকষ্টের উপশমে সাহায্য করে।
ডায়েটে ওমেগা থ্রি জাতীয় এশেনশিয়াল ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ সামুদ্রিক মাছ, সয়াবিন, ফ্ল্যাক্স সিড, আমন্ড, ওয়ালনাট ইত্যাদি অ্যাজমার মোকাবিলায় সাহায্য করে।
এক্ষেত্রে অতিরিক্ত মশলাদার খাবার, ভরপেট খাওয়া, মধুপান ও অ্যালার্জির অন্যান্য কারণসহ বাদ দিতে হবে।
৫. মাথা ঘোরা
অ্যানেমিয়া, লো ব্লাড প্রেশার, হিটস্ট্রোক, হার্টের সমস্যা, মাইগ্রেন, চোখের সমস্যা থেকে শুরু করে ব্রেন টিউমার ইত্যাদি বিবিধ কারণে মাথাঘোরা বা ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। এক্ষেত্রে সমস্যার প্রকৃত কারণ নির্ধারণ করে সেই অনুযায়ী চিকিৎসা করাই বাঞ্ছনীয়। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে সাময়িক রিলিফের জন্যে ঘরোয়া প্রাকৃতিক চিকিৎসা অনুসরণ করে দেখতে পারেন।
প্রচুর জল পান ও তরল খাদ্য গ্রহণ।
রক্তে হঠাৎ করে সুগারের পরিমাণ কমে গেলে বিশেষ করে ওষুধ নির্ভর ডায়াবেটিকদের মধ্যে মাথাঘোরার সমস্যা দেখা দিতে পারে। এক্ষেত্রে হাইকার্বোহাইড্রেট যুক্ত মিষ্টি ফল, শরবত, ফলের রস, বাদাম, চকোলেট ইত্যাদি খেলে রিলিফ পাওয়া যায়।
আদা ও মধু দিয়ে তৈরি চা খেয়ে দেখতে পারেন।
অ্যানেমিয়া ও লো ব্লাড প্রেশারের সমস্যা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মেনে প্রপার ব্যালেন্সড ডায়েট নিন।
পর্যাপ্ত ঘুম ও উদ্বেগমুক্ত জীবন খুব প্রয়োজনীয়।
৬. মাথা ব্যথা
মাথাঘোরার মতো মাথা ব্যথারও বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। স্বভাবতই রোগের কারণ অনুসারেই চিকিৎসা করা উচিত। প্রাথমিক পর্যায়ে ঘরোয়া টোটকা হয়তো সাময়িক আরাম দেয়।
হিটস্ট্রোক বা গরমের কারণে মাথা ব্যথা হলে মিছরি সহ তরমুজের রস বা পাকা আমের রসে উপকারী।
মাইগ্রেনের মাথা ব্যথা কমাতে সমমাত্রায় তুলসীপাতার রস ও লেবুর রস মিশিয়ে খেয়ে দেখতে পারেন।
মাইগ্রেনের ঘরোয়া টোটকা হিসেবে চামচ গোলমরিচ বাটা+ চামচ আদার রস+ চামচ ঘি মিশিয়ে দিনে ২ বার করে খেয়ে দেখতে পারেন।
অম্বল থেকে মাথা ধরলে ঠান্ডা ছানার জলের সঙ্গে পুদিনাপাতার রস মিশিয়ে খেলে উপকার পেতে পারেন।
অতিরিক্ত খাটাখাটুনির জন্যে যে মাথা ব্যথা তাতে দিন কয়েক মসুরডালের স্যুপের সঙ্গে পাতিলেবুর রস মিশিয়ে খান।
বীট, গাজর ও শসার রস একসঙ্গে মিশিয়ে কিছুদিন খেয়ে দেখতে পারেন।
পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম, ব্যালান্সড ডায়েট ও মানসিক চাপ কম করে মাথাব্যথার সমস্যা কমাতে সাহায্য করে।
৬. অম্বল, বদহজম, গলাবুক জ্বালা
অতিরিক্ত ফাস্টফুড, তেল মশলাযুক্ত খাদ্যগ্রহণ, অনিয়মিত জীবনযাত্রা, অতিরিক্ত রিফাইন্ড কার্বোহাইড্রেট ও স্যাচুরেটেড ফ্যাটযুক্ত খাবার খাওয়া ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে অ্যাসিডিটি, বদহজম, গলা-বুকজ্বালা ইত্যাদি আজকাল শহুরে মানুষজনের অনেকেরই যেন নিত্যসঙ্গী। এক্ষেত্রে প্রপার ব্যালান্সড ডায়েট ও পর্যাপ্ত জলপান অবশ্য প্রয়োজনী। ‘Low Fodmap Diet’ দীর্ঘমেয়াদি অম্বল গ্যাসের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। ব্ল্যান্ড ডায়েটের পাশাপাশি এক্ষেত্রে ২-৩ টে টোটকা ব্যবহার করে দেখতে পারেন।
প্রতিদিন ১ গ্লাস করে ফ্যাট ছাড়া দইয়ের ঘোল খান, এতে চিনি, নুন মেশাবেন না।
রোজ সকালে খালি পেটে ২-৩ টে তুলসীপাতা বা নিমপাতা চিবিয়ে খেয়ে দেখতে পারেন।
১ চামচ আদার রস, ১ চামচ পাতিলেবুর রস ও ২ চামচ মধু ১ গ্লাস ইষদুষ্ণ জলে মিশিয়ে ভোরবেলায় খালিপেটে কিছুদিন খেয়ে দেখতে পারেন, উপকার হবে।
অ্যাসিডিটিতে ১ কাপ ঠান্ডা জলের সঙ্গে ১টা কাঁচা আলুর রস মিশিয়ে খেলেও উপকার হতে পারে।
বিয়েবাড়ির খাবার বা রিচ খাওয়া দাওয়ার পর অ্যাসিডিটি হলে চা চামচ বেকিং পাউডার ১ গ্লাস জলে মিশিয়ে খেলে তৎক্ষণাৎ রিলিফ পাওয়া যায়— যদিও এই টোটকা রোজকার জন্যে নয়।
বাঁধাকপি ও সেলেরি পাতার কাঁচা রস, পাকা কলা, আঙুর, আপেল ইত্যাদি পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার অম্বলের মোক্ষম দাওয়াই।
খালিপেটে মৌরি ও মেথি ভেজানো জল বেশ কিছুদিন খেলে ক্রনিক অম্বলের সমস্যা থেকেও মুক্তি পাওয়া যায়।
বদহজমের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে মৌরি, জোয়ান, আদা ইত্যাদি প্রাকৃতিক উপাদান।
৭. বমি বমি ভাব ও বমি
১ গ্লাস গরমজলে ১০ গ্রাম মতো তাজা পুদিনাপাত ফেলে ১০ মিনিট রেখে ছেঁকে খেয়ে নিন। বমি ভাব ও বমি দু’ক্ষেত্রেই দারুণ ভালো কাজ দেয়।
১ কাপ ফুটন্ত জলে ১ চা-চামচ লবঙ্গগুঁড়ো বা চা-চামচ দারচিনিগুঁড়ো মিশিয়ে ছেঁকে ঠান্ডা করে পান করলে উপকার হতে পারে।
মৌরি ও আদার রস ১ চা-চামচ মাত্রায় ১ কাপ জলের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়ানো হলে উপশম ঘটে।
১ কাপ জলে ১০ ফোঁটা মুসাম্বি বা পাতিলেবুর রস, চা-চামচ চিনি ও চা-চামচ বেকিং সোডা মিশিয়ে ধীরে ধীরে পান করলে বমি ভাব ও বমি কমবে।
পাতিলেবুর রস ও মধু ১ চা-চামচ মাত্রায় মিশিয়ে চেটে খেয়ে দেখতে পারেন, উপকার হবে।
পাশাপাশি ওআরএস চালু করে কিছুক্ষণ দেখুন। এতেও না কমলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
৮. হেঁচকি তোলা
এক্ষেত্রে ঢকঢক করে জল খাওয়া বা কয়েক সেকেন্ড নাক-কান মুখ বন্ধ রেখে তারপর দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার উপকারিতার কথা তো সবাই জানেন।
হেঁচকি বন্ধ করতে ১টা পাতিলেবুর রস কিছুক্ষণ ধরে খান।
কিছুটা ঠান্ডা জল বা বরফকুঁচি মুখে রাখুন।
১ চা-চামচ চিনি সরাসরি গালায় ফেলে দেখুন।
১ চা-চামচ মধু খেয়েও দেখতে পারেন।
৯. কনস্টিপেশন
খালিপেটে ইষদুষ্ণ জলের সঙ্গে পাতিলেবুর রস মিশিয়ে খেলে ক্রনিক কনস্টিপেশনও নির্মূল হয়।
যেকোনও বয়সের কোষ্ঠবদ্ধতাতেই খেঁজুর ও কিশমিশ ভেজানো জল অত্যন্ত উপকরী।
ত্রিফলা ভেজানো জল, ইসবগুলের ভূষি, ফ্ল্যাক্স সিড, চিয়া সিড ইত্যাদি জলে ভিজিয়ে খেলে কনস্টিপেশনের মহৌষধ হিসেবে কাজ করে।
পাতিলেবু বা কমলালেবুর রসের সঙ্গে মধু মিশিয়ে খেলেও উপকার পাওয়া যায়।
ডায়েটে পর্যাপ্ত পরিমাণে জল ও শাক, সব্জি, ফল, দানা, ডাল, ওটস, হোলহুইট আটা ডালিয়া, বার্লি ইত্যাদি ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার রাখতে হবে।
১০. পাইলস
ভুক্তভোগী মাত্রেই জানেন পাইলস-এর বা অর্শের অসহনীয় যন্ত্রণায় কথা। পাইলসের সমস্যাকে বশে রাখার জন্যে ডায়েটের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। পাকা আম, পাকা কলা, বেলপানা, আপেল, তরমুজ, পেঁপে, শুকনো ফল, পেয়ারা, ন্যাসপাতি, পুঁইশাক, পালংশাক, কচু, মুলো, করলা, কুমড়ো, ওটস, মিলেট, খোসাওলা ডাল, ছোলা ইত্যাদি নিয়মিত ডায়েটে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে রাখা উচিত।
১ চা-চামচ কাঁচা হলুদ বাটার সঙ্গে চা-চামচ গাঁদাল পাতার রস বা ২ চা-চামচ তিলবাটা মিশিয়ে নিয়মিত খেলে উপকার মিলবে।
১ চা-চামচ শুকনো আমলকী পাউডার ১ গ্লাস ঘোলের সঙ্গে মিশিয়ে খেয়ে দেখুন।
দুধে মেথিদানা ফুটিয়ে সেই- দুধটা ছেঁকে প্রতিদিন খান— অন্তত মাসখানেক।
২-৩টে শুকনো মনাক্কা আগের দিন রাতে ১ গ্লাস ঠান্ডা জলে ভিজিয়ে রেখে পরদিন সকাল-সন্ধ্যা খেলে কয়েকদিনের মধ্যেই উপকার পাওয়া যাবে।
তাজা মুলোর রস কাপ করে সকাল-সন্ধ্যা খেয়ে দেখুন।
পাকাবেলের শরবত বা কাঁচাবেলের মোরব্বা ব্লিডিং পাইলস বা নন ব্লিডিং পাইলস উভয়ক্ষেত্রেই উপকারী।
১১. ডায়েরিয়া
ডায়েরিয়ার প্রকোপ সামলাতে বাজারের কেনা ওআরএস বা ঘরে নুন-চিনি-লেবুর রস দিয়ে তৈরি ঘরোয়া ওআরএস দুই-ই দুর্দান্ত কার্যকারী।
আদা-গোলমরিচ সহ জল ফুটিয়ে তাতে মধু মিশিয়ে অল্প অল্প করে পান করলে দারুণ উপকার মেলে।
কাপ পুদিনাপাতার রসের সঙ্গে ২ চা চামচ মধু ও ২ চা-চামচ মুসাম্বির রস মিশিয়ে খেলে ডায়েরিয়ার প্রকোপ কমে।
জল সহ আঙুরের রস বা আনারসের রস দিনে অন্তত বার চারেক খাওয়ালে পাতলা দাস্ত বন্ধ হয়।
গরম ভাত চটকে তাতে ঠান্ডা জল, নুন ও পাতিলেবুর রস মিশিয়ে তৈরি পথ্য ডায়েরিয়ায় অতি উত্তম।
মা-ঠাকুরমাদের ঝুলি হাতড়ে পাওয়া ডায়েরিয়ার মোক্ষম টোটকা— ১ গ্লাস ডাবের জলের সঙ্গে ১ চা চামচ সজনে পাতার রস ও ১ চা-চামচ মধু মিশিয়ে পান।
১২. টনসিলাইটিস
খুব ঠান্ডা খাবার বা পানীয় বাদ দিতে হবে। অ্যালার্জি হতে পারে এমন খাবারও মোটেই খাবেন না। ডায়েটে আনারস, পাকাপেঁপে, গাজর, কুমড়ো, লেবু, আপেল, বেদানা ইত্যাদি রাখতে হবে। পাশাপাশি দু-একটা টোটকা ট্রাই করে দেখতে পারেন।
১ গ্লাস গরমজলের সঙ্গে ১ বড় চামচ পাতিলেবুর রস ও ২ বড় চামচ মধু ও সামান্য লবণ মিশিয়ে সারাদিনে বার কয়েক পান করুন।
গরমজলে গ্লিসারিন, লবণ ও ফিটকিরি মিশিয়ে গার্গল করতে পারেন।
প্রতিদিন সজনে শাকের ঝোল বা সজনে শাক খেলে টনসিলের ব্যথা কম থাকবে।
১৩. কাটা-ছেঁড়া-ক্ষত
ক্ষতস্থানে হলুদ বাটা বা কাঁচা রসুন বাটার প্রলেপ এক্ষেত্রে দারুণ এফেকটিভ। হলুদ ও রসুনের অ্যান্টিবায়োটিক ও অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটারির বিশেষ ধর্ম আছে।
ক্ষতস্থানের রক্তপাত দ্রুত বন্ধ করতে চাইলে চিনি বা চুন, বা গোলমরিচ গুঁড়ো বা কফি পাউডার ছড়িয়ে দিয়ে দেখতে পারেন।
ক্ষতস্থানে কাঁচা পেঁয়াজের রসের সঙ্গে মধু মিশিয়ে ঘণ্টাখানেক রেখে ধুয়ে ফেললেও উপশম হতে পারে।
১৪. ত্বকের চুলকানি ও র্যাশ
এক্ষেত্রে সবসময়েই ত্বককে ঠান্ডা ও ময়েশ্চারাইজড রাখতে হবে। পাশাপাশি অবশ্য কিছু সহজ ঘরোয়া দাওয়াই অনুসরণ করা যেতে পারে।
অ্যালোভেরা জেল, আমন্ড অয়েল, ভিটামিন-ই অয়েল ম্যাসাজ করুন।
তুলসীপাতা বা নিমপাতা ফোটানো জলে আক্রান্ত স্থানে প্রলেপ দিলে উপকার হবে।
জলের সঙ্গে বেকিং পাউডারের পেস্ট বানিয়ে প্রলেপ দিলে উপকার পাওয়া যায়।
ডায়েটে ভিটামিন সি, ক্যারোটিনয়েডস ও ওমেগা-থ্রি সমৃদ্ধ খাবার যথাযথ মাত্রায় রাখা উচিত। বিভিন্ন ধরনের ফল, শাকসব্জি, বাদাম, ডাল, সামুদ্রিক মাছ ইত্যাদি ত্বকের স্বাস্থ্যরক্ষায় অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
১৫. অনিদ্রা বা ইনসোমনিয়া
স্ট্রেস, স্টেইন, অ্যাংজাইটি ও বিকৃত খাদ্যাভ্যাস এখন সভ্য দুনিয়ার বেশিরভাগ মানুষজনেরই নিত্যসঙ্গী, তারই পরিণামে রাতের পর রাত যেমন ভালো ঘুম হয় না, তেমনই পরদিন থাকে তীব্র ক্লান্তি আর হ্যাংওভার। নিত্যদিনের এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য দু-একটা টোটকা ব্যবহার করে দেখতে পারেন।
রাতে শোওয়ার আগে ১ কাপ গরম দুধে ২ চা-চামচ মধু মিশিয়ে খান।
কুলেখাঁড়া পাতার রস অনিদ্রা-রোগের মহৌষধ।
দইয়ের সঙ্গে গোলমরিচ, মৌরি ও চিনি মিশিয়ে খেলেও উপকার পাওয়া যাবে।
১৫ গ্রাম তাজা শুষনি শাক ৩-৪ কাপ জলে সিদ্ধ করে ১ কাপ থাকতে নামিয়ে ছেঁকে ২-৪ চা চামচ দুধ মিশিয়ে প্রতিদিন সন্ধেবেলা খেলে উপকার পাওয়া যেতে পারে।
১৬. অনিয়মিত মেনস্ট্ুয়েশন ও পিসিওএস
হঠাৎ করে মেনস্ট্ুয়েশন বন্ধ হয়ে গেলে চা-চামচ দারচিনি গুঁড়ো ২ কাপ জলে সিদ্ধ করে ১ কাপ থাকতে নামিয়ে খেয়ে দেখুন। উপকার হতে পারে।
প্রতিদিন ভাত পাতে কাঁচা পেঁপে সেদ্ধ বা কাঁচা পেঁপের তরকারি করে খান।
৩ গ্রাম মেথি ও ৩ গ্রাম ধনে আগের দিন রাতে ১ গ্লাস জলে ভিজিয়ে রেখে পরদিন সেটা ছেঁকে দুবেলা খান বেশ কিছুদিন।
১ টুকরো আদা ১ কাপ জলে ফুটিয়ে ছেঁকে মধুসহ দিনে ৩ বার করে খেলে অনিয়মিত মেনস্ট্ুয়েশন স্বাভাবিক হয়।
পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোমের কারণে যে অনিয়মিত মেনস্ট্ুয়েশন হয়, সেক্ষেত্রে ডায়েট ও লাইফস্টাইল মডিফিকেশানের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। দেহের বাড়তি ওজন কমাতে হবে। চলবে না, স্যাচুরেটেড ফ্যাট, ট্রান্স ফ্যাট ও রিফাইন্ড কার্বোহাইড্রেট যুক্ত নানাবিধ লোভনীয় খাবারদাবার। প্রতিদিন ৩০ থেকে ৫০ মিনিট হাঁটা, সাইক্লিং, সুইমিং, ওয়ার্ক-আউট বা ফ্রি-হ্যান্ড এক্সারসাইজ করলে পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোমের সমস্যা কম থাকে।
১৭. স্থূলত্ব বা ওবেসিটি
সকালে খালিপেটে ত্রিফলাচূর্ণ ভেজানো জল, পাতিলেবুর রস সহ মেথি ও দারুচিনি ভেজানো জল ইত্যাদি খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হাই ফাইবার যুক্ত লো ক্যালরির ব্যালান্সড ডায়েট নিলে অবশ্যই উপকার পাওয়া যাবে।
ডায়েটে রাখতে হবে ফাইবার সমৃদ্ধ বিভিন্ন ধরনের গোটা দানাশস্য, তাজা সবুজ শাক পাতা, লাউ, পটল, ঝিঙে, বেগুন, ভেন্ডি, করলা, কপি, পেঁয়াজ, টম্যাটো, বিনস কুমড়ো ইত্যাদি বিভিন্ন আনাজপাতি এবং বিভিন্ন ধরনের লো গ্লাইসেমিক ইনডেক্স যুক্ত মরশুমী রসালো ফল।
রেডমিট, প্রসেসড মিট, ফাস্টফুড, চিনি, মিষ্টি, ভাজা খাবার, চকোলেট, আইসক্রিম, কোল্ডড্রিংকস ও অন্যান্য হাই-ক্যালরিযুক্ত লবণদার খাবার দাবার এড়িয়ে চলতে হবে।
তবে এ ব্যাপারে আপনার বয়স, ওজন উচ্চতা, শারীরিক পরিশ্রম ও শারীরিক সুস্থতার বা অসুস্থতার কথা মাথায় রেখে আপনার জন্যেই উপযুক্ত ডায়েটে চার্টের জন্যে ডায়েটিশিয়ানের পরামর্শ নিন।
১৮. অ্যানেমিয়া বা রক্তাল্পতা
রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে হলে উচ্চ ভ্যালুযুক্ত প্রোটিন, ভিটামিন বি১২, আয়রন, ফোলিক অ্যাসিড ও ভিটামিন সি যুক্ত খাবারের ওপর জোর দিতে হবে।
প্রতিদিন খালিপেটে খেজুর-কিশমিস-আমন্ড-সবুজ মুগ ভেজানো খান অন্তত মাসখানেক।
প্রতিদিন ১০০ গ্রাম করে অন্তত ভিটামিন-সি যুক্ত ফল যেমন মুসাম্বি, কমলালেবু, পেয়ারা, টম্যাটো, আমলকী, আনারস ইত্যাদি খাওয়ার চেষ্টা করুন।
বীট-গাজর-টম্যাটো পালং-লেটুস ইত্যাদি একসঙ্গে মিশিয়ে জ্যুস করে খেলে দারুণ উপকার।
মাংসের মেটে, ডিম, সয়াবিন, বিভিন্ন ধরনের ডাল, ছাতু, ছানা, দই ইত্যাদি ডায়েটে পর্যাপ্ত প্রোটিনের জোগান দেওয়ার রক্তে হিমোগ্লোবিন তৈরিতে সাহায্য করে।
১ টা পাকা কলার সঙ্গে ১ চা-চামচ মধু মিশিয়ে প্রতিদিন খান।
পালংশাক, কুলেখাঁড়া পাতা সেদ্ধ, উচ্ছে সেদ্ধ, সজনেশাক ইত্যাদিও রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে।
ডায়েটারি পরিবর্তন ঘটিয়ে ১ মাসের মধ্যে রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা না বাড়লে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে রক্তাল্পতার প্রকৃত কারণ নির্ণয় করে সেই অনুযায়ী চিকিৎসার ব্যবস্থা করাই বাঞ্ছনীয়।
১৯. কৃমি সংক্রমণ
এক্ষেত্রে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা, বিশুদ্ধ ও জীবাণুমুক্ত খাদ্য ও পানীয় গ্রহণ, বাইরে থেকে এসে হাত-পা-মুখ ভালোভাবে ধোওয়া, খাওয়ার আগে হাত ভালোভবে ধুয়ে নেওয়া, অজানা অচেনা জায়গার বা রাস্তার ধারের কাটা ফল, জল, ফলের রস ইত্যাদি গ্রহণ না করা ইত্যাদি বেসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সতর্কতার ওপর বিশেষ জোর দিতে হবে। পাশাপাশি দু-একটা ঘরোয়া চিকিৎসা অনুসরণ করে প্রাথমিক পর্যায়ে কৃমি সংক্রমণ প্রতিরোধের চেষ্টা করে দেখতে পারেন।
দইয়ের ঘোলের সঙ্গে ১ চা চামচ জোয়ানগুঁড়ো মিশিয়ে খেলে উপকার হতে পারে।
তুলসীপাতা, নিমপাতা, পুদিনাপাতা, কালমেঘ পাতার রস ইত্যাদি শিশুদের কৃমিনাশক দাওয়াই হিসেবে মা-ঠাকুরমাদের হাতে হাতে যুগ যুগ ধরে বাংলার ঘরে ঘরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
খালিপেটে প্রতিদিন ১ কাপ করে গাজর কুচানো খেতে পারলেও উপকার।
১ বড় চামচ তাজা কাঁচা পেঁপের রসের সঙ্গে সমপরিমাণ মধু মিশিয়ে সকালে খালিপেটে গরমজল সহ খাওয়ার ২ ঘণ্টা পরে ৩০-৬০ মিলি মাত্রায় ক্যাস্টর অয়েল ১ গ্লাস গরম দুধের সঙ্গে মিশিয়ে খেলে কৃমির অব্যর্থ দাওয়াই হিসেবে কাজ করে।
তবে কৃমি সংক্রমণ কমানোর জন্যে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে হবে ও কনস্টিপেশান যাতে না হয় সে ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে।
২০. ব্রণ, ফোঁড়া, বলিরেখা
কাঁচা পেঁপের রস ব্রণ হওয়ার প্রবণতা কমায় ও ব্রণর ক্ষত নিরাময়ে সাহায্য করে।
মধুর সঙ্গে পাতিলেবুর রস বা দইয়ের সঙ্গে শশার রস মিশিয়ে ব্রণ আক্রান্ত স্থানে লাগিয়ে আধঘণ্টা পরে ঠান্ডা জলের ঝাপটা দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। বেশ কিছুদিন নিয়মিত করা হলে উপকার পাওয়া যাবে।
পিম্পলস কমাতে তাজা অ্যালোভেরার রসও বিশেষ উপকারী।
আয়ুর্বেদ মতে কালো তিলবাটার সঙ্গে যবের ছাতু ও টকদই মিশিয়ে অল্প গরম করে ফোঁড়ার ওপর সকাল বিকেল প্রলেপ দিলে ফোঁড়া ফাটিয়ে দেয়।
ফোঁড়ার ওপর কুলপাতা বাটা বা মুগডাল বাটা সামান্য গরম করে প্রলেপ দিলেও উপকার পাওয়া যাবে।
পাকা পেঁপের ক্বাথ বলিরেখা দূর করতে দারুণ উপকারী।
১ বড় চামচ ঠান্ডা দুধের সঙ্গে ৩-৪ ফোঁটা পাতিলেবুর রস মিশিয়ে ত্বকে লাগিয়ে সারারাত রেখে দিন। ভোরে ইষদুষ্ণ জলের ঝাপটা দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। কিছুদিন নিয়মিত ব্যবহার করার পর উপকার বুঝতে পারবেন।
মধুর সঙ্গে দুধের সর ও ভিটামিন-ই অয়েল মিশিয়ে লাগিয়ে ২০ মিনিট পর হালকা গরমজলের ঝাপটা দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। কিছুদিনের মধ্যেই পরিবর্তন লক্ষ্য করবেন।
ডায়েটে ভিটামিন সি, ক্যারোটিনয়েডস ও ওমেগা-থ্রি সমৃদ্ধ খাবারদাবার যেমন আম, কমলালেবু, পেয়ারা, মুসাম্বি, আঙুর, গাজর, কুমড়ো, ক্যাপসিকাম, সবুজ শাক, তিল, সয়াবিন, আমন্ড, আখরোট, সামুদ্রিক মাছ ইত্যাদি উপযুক্ত পরিমাণে রাখার চেষ্টা করুন।
সর্বোপরি, গ্রাম বাংলার অগণিত চেনা-অচেনা গাছ-গাছড়ার ঔষধি গুণাগুণকে এমন সহজ প্রাঞ্জলভাষায় আপামর জনসাধারণের কাছে চিরঞ্জীবী করে তোলার জন্যে আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য মহাশয়কে সশ্রদ্ধ চিত্তে স্মরণ করি।
যোগাযোগ: ৯৮৩০২১৪৯৭১