Bartaman Patrika
সাপ্তাহিক বর্তমান
 

কেদারনাথ থেকে রামেশ্বরম
কেন এক সরলরেখায় ৭টি শিবলিঙ্গ?

ভারত বিচিত্র দেশ, ভারত বৈচিত্র্যের দেশ।  এই দেশে পৌরাণিক থেকে ঐতিহাসিক— বিবিধ অগণিত ভাণ্ডারে ভরা।  রয়েছে এমন সব মন্দির যার রহস্য উদঘাটন আজও সম্ভব হয়নি, কারও মতে সবটাই কাকতালীয়। তবে এই তর্ক-বিতর্ক, বিশ্বাস- অবিশ্বাসের দ্বন্দ্ব কোনওভাবেই এইসব স্থানের আকর্ষণ ম্লান করতে পারেনি। এমনই এক অদ্ভুত ও আকর্ষণীয় বিষয় হল শিবশক্তি রেখা। ভারতের প্রায় মাঝবরাবর দিয়ে চলা ৭৯° দ্রাঘিমারেখায় অবস্থিত রয়েছে ভারতের বিখ্যাত প্রাচীন ৭টি শিব মন্দির। স্বাভাবিকভাবেই এই দ্রাঘিমা বরাবর মন্দিরগুলির অবস্থান এক বিশেষ আকর্ষণ,  যেন ভারতের বুকের মাঝ দিয়ে চলে যাওয়া এক শিবশক্তি রেখা। যার উত্তরে অবস্থিত কেদারনাথ জ্যোতির্লিঙ্গ আর দক্ষিণে রামেশ্বরম জ্যোতির্লিঙ্গ।  এই দুইয়ের মাঝে রয়েছে কালেশ্বর শিব ও পাঁচটি রহস্যময় পঞ্চভূতেশ্বর শিবলিঙ্গ।

৭৯° দ্রাঘিমার পঞ্চভূতেশ্বর শিব মন্দির সমূহ:-
এবারে আলোচনা করব ৭৯° দ্রাঘিমায় অবস্থান করা এই শিব মন্দিরগুলির মাহাত্ম্যের কাহিনি। সনাতন ধর্ম অনুযায়ী অরিদ্রা নক্ষত্রের রাতে শিব স্বয়ং জ্যোতির্লিঙ্গ রূপে আবির্ভূত হয়েছিলেন। পঞ্চভূত হল পাঁচটি মৌলিক উপাদানের সমষ্টি যা সমগ্র মহাজাগতিক সৃষ্টির মূলে অবস্থান করছে। ক্ষিতি, অপ, তেজ, মরুত্, ব্যোম। প্রথমেই দেখে নেওয়া যাক এই পঞ্চভূতেশ্বর শিব কী? পঞ্চভূত বলতে পাঁচটি আদি পদার্থকে বোঝায়— ক্ষিতি (পৃথিবী বা মাটি), অপ (জল), তেজ (আগুন), মরুৎ (বায়ু) ও ব্যোম (মহাকাশ বা শূন্য)। হিন্দুশাস্ত্র মতে সব কিছুই এই পাঁচটি ‘ভূত’ দিয়ে তৈরি। পঞ্চভূতের পাঁচটি ‘ভূত’-এর প্রত্যেকটির একজন অধীশ্বর শিব আছেন, তাঁদের বলা হয় পঞ্চভূত লিঙ্গম। পাঁচটি ভূত-লিঙ্গম যেখানে অবস্থিত, সেই জায়গাগুলিকে বলা হয় ‘পঞ্চভূত স্থলম’। এই পাঁচটি জায়গার চারটি তামিলনাড়ুতে এবং একটি অন্ধ্রপ্রদেশে। তামিলনাড়ুর পঞ্চভূত স্থলগুলি হল যথাক্রমে কাঞ্চীপুরম (ক্ষিতি লিঙ্গ একাম্বরেশ্বর), থিরুভনাইকাভাল (অপ বা জল লিঙ্গ জম্বুকেশ্বর), থিরভনমাল্লাই (তেজ লিঙ্গ অরুণাচলেশ্বর) এবং চিদাম্বরম (ব্যোম লিঙ্গ থিল্লাই নটরাজার)। আর অন্ধ্রপ্রদেশে অবস্থিত পঞ্চভূত স্থলটি হল শ্রীকালহস্তী (বায়ু লিঙ্গ শ্রীকালাহস্তীশ্বর)। পঞ্চভূতের পবিত্রতা ও বিশুদ্ধকরণের জন্য এই পাঁচটি মন্দির নির্মিত। যা একে অপরের থেকে দূরে, একই সরলরেখায় অবস্থান করে পঞ্চভূতের শুদ্ধতা রক্ষা করছে। রক্ষক স্বয়ং দেবাদিদেব।

১) ক্ষিতি লিঙ্গ একাম্বরেশ্বর (তামিলনাড়ু)
তামিলনাড়ুর কাঞ্চীপুরমে রয়েছে দেশের অন্যতম প্রাচীন মন্দির একাম্বরেশ্বর। যার উল্লেখ আছে প্রাচীন তামিল ‘সঙ্গম’ সাহিত্যে। প্রাথমিকভাবে মন্দিরটি পল্লব রাজাদের কীর্তি হলেও, পরবর্তীকালে নবম শতাব্দীতে নতুন মন্দির নির্মাণের কৃতিত্ব যায় চোল রাজাদের। মন্দিরের সংস্কার ও নবরূপায়ণের সঙ্গে জড়িয়ে আছে আদি শঙ্করাচার্যের নাম। আসে বিজয়নগর সাম্রাজ্যের প্রসঙ্গও।
কথিত আছে, শিবের রোষানলে দেবী পার্বতী একবার কালো হয়ে যান। তাই মহাদেবকে তুষ্ট করার জন্য বেগবতী নদীর তীরে এক আমগাছের তলায় বালি দিয়ে শিবলিঙ্গ বানিয়ে পুজো করতে থাকেন পার্বতী। ক্রুদ্ধ শিব পার্বতীর পুজো ভঙ্গ করবার জন্য অগ্নি বর্ষা করেন। কিন্তু পার্বতীর সাহায্যে বিষ্ণু শিবের মাথা থেকে চাঁদটি খুলে নিয়ে আমগাছের উপর নরম আলো ফেলে পরিবেশ শীতল করেন।  এরপর শিব পুজো ভঙ্গের জন্য পাঠান গঙ্গাকে। কিন্তু পার্বতীর অনুরোধে গঙ্গাও তাঁর গতিপথ পাল্টে নেন। এখানেই শেষ নয়, এরপর বেগবতী নদীতে বন্যা হলে পার্বতী তাঁর প্রতিষ্ঠিত বালির শিবলিঙ্গকে বাঁচানোর জন্য জড়িয়ে ধরেন। তাঁর নিষ্ঠায় সন্তুষ্ট হন মহাদেব। শিব পার্বতীর বিয়ে হয় সেই আমগাছের তলায়। আর সেই আমগাছটির স্থান হল বর্তমানের চেন্নাই থেকে প্রায় ৭৫ কিলোমিটার দূরে কাঞ্চিপুরমের একাম্বরেশ্বর মন্দির। দেবী পার্বতীর আলিঙ্গনে গলে গিয়েছিলেন বলে ভগবান শিবের নাম হয় ‘তাঝুভা কুঝাইনাথার’ (He who melted in Her embrace)।
প্রায় ২৪ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত এই মন্দির। সুউচ্চ গোপুরম পেরিয়ে মন্দির চত্বর, রয়েছে বিবিধ  মন্দির ও সভামণ্ডপ। যার অন্যতম একাম্বরেশ্বর মন্দির এবং বিষ্ণুমন্দির (নীলাথিঙ্গাল থুনডাম পেরুমল)। মন্দিরের মণ্ডপ পার হয়ে গর্ভগৃহে আছেন  দেবদেবী, সাধু, সিংহ, নর্তকী ইত্যাদি। আছে  বিজয়নগর সাম্রাজ্যের অবদান ‘থাউজ্যান্ড পিলার হল’ও দর্শনীয়। পাশাপাশি রয়েছে গণেশ, কার্তিক মন্দির এবং সর্বতীর্থম শিবগঙ্গা কুণ্ড। মন্দিরের মূল লিঙ্গটি বালি নির্মিত। ভিতরে রয়েছে অসংখ্য শিবলিঙ্গ। এর অন্যতম একটি ‘সহস্র লিঙ্গম’। তার গায়ে খোদিত রয়েছে ১০০৮টি শিবলিঙ্গ। কাঞ্চিপুরমের কামাক্ষী আম্মান দেবীকে একাম্বরেশ্বর মহাদেবের শক্তি ‘এলাভার কুঝালি’ হিসেবে মানা হয়। বলা হয় এখানে শিবের সঙ্গে কামাক্ষী-রূপী পার্বতীর বিয়ে হয়েছিল। সেই উৎসবের স্মরণে তামিল পানগুনি (ফাল্গুনী) মাসে (মার্চ-এপ্রিল) অনুষ্ঠিত পানগুনি ব্রহ্মোৎসবের দশম বা শেষ দিনে  শিব-কামাক্ষীর বিয়ে দেওয়া হয় এবং স্থানীয় প্রথা অনুসারে সেই সময় সেখানে বহু অবিবাহিত স্ত্রী-পুরুষের গণবিবাহ অনুষ্ঠিত হয়। 

২) অপ বা জল লিঙ্গ জম্বুকেশ্বর (তামিলনাড়ু)
পঞ্চভূতের দ্বিতীয় ‘ভূত’ হল অপ বা জল। এই অপ-এর অধীশ্বর হলেন অপলিঙ্গম জম্বুকেশ্বর শিব, যার অবস্থান তামিলনাড়ুর তিরুচিরাপল্লি শহরে। জম্বু অর্থাৎ জামগাছের নীচে অবস্থিত বলে শিবের নাম জম্বুকেশ্বর। বলা হয় যে এই জামগাছটি সাধারণ জামগাছ নয়, সাদা জাম (Syzygium cumini)।
পুরাণকালে মাল্যবান ও পুষ্পদন্ত বলে শিবের দুই উপাসক ছিলেন।  তাঁরা দুজনে শিবগণ হওয়া সত্ত্বেও নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করতেন।  একবার মাল্যাবন রেগে গিয়ে পুষ্পদন্তকে হাতি হয়ে যাওয়ার অভিশাপ দেন এবং পুষ্পদন্ত তখন পাল্টা অভিশাপ দেন মাল্যবানকে মাকড়সা হতে হবে।  দুজনেই শাপগ্রস্ত হয়ে তিরুচিরাপল্লির জাম্বুবনে অর্থাৎ জামরুলের জঙ্গলে জন্ম নেন।  তিরুচিরাপল্লির পাশ দিয়ে বহমান কাবেরী নদী। হাতিটি ওই জঙ্গলে একটি শিবলিঙ্গ বানিয়ে  কাবেরী নদীর জল দিয়ে পুজো করত আর মাকড়সাটা সেই শিবলিঙ্গের উপর জাল বিস্তার করে থাকত, যাতে গাছের শুকনো পাতা শিবলিঙ্গের উপর না পড়ে।  হাতিটা এসে মাকড়সার জালকে ধুলোর আস্তরণ মনে করে জল দিয়ে প্রতিবার ধুয়ে দিত।  এইভাবে চলতে থাকায় দুজনের মধ্যে আবার তুমুল ঝগড়া শুরু হয়।  মাকড়সা দংশন করে হাতির শুঁড়ে।  এই দেখে শিব জাম্বুগাছের জঙ্গলে জম্বুকেশ্বর রূপে আবির্ভূত হন এবং তাঁর দুই ভক্তকে শাপমুক্ত করেন।  এই জায়গা তখন থেকে ‘থিরু-আনাই-কা’ নামে পরিচিত হয়। ‘থিরু’ অর্থ পবিত্র, ‘আনাই’ অর্থ হাতি আর ‘কা’ মানে জঙ্গল।  তা থেকেই মন্দিরের নাম হয়ে যায় ‘থিরুআনাইকাভালাম’।
আবার জম্বুকেশ্বরের মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা চোল রাজা কোচেঙ্গট বা কোচেঙ্গান্নান চোলের নাম জড়িয়ে আছে এই কাহিনির সঙ্গে। হাতি-রূপী পুষ্পদন্তকে হত্যা করার পাপের শাস্তি হিসাবে মাকড়সা-রূপী মাল্যবান রাজা কোচেঙ্গট চোল রূপে জন্মগ্রহণ করেন এবং প্রায়শ্চিত্ত হিসাবে রাজা কোচেঙ্গট চোল জম্বুকেশ্বর মন্দির সহ ৭০টি শিবমন্দির প্রতিষ্ঠা করেন।
বলা হয়, এই মন্দিরটি রাজা কোচেঙ্গট চোল প্রায় ১৮০০ বছর আগে প্রতিষ্ঠা করেন ‘আনাইক্কা’ (হাতি দ্বারা সুরক্ষিত) নামে, কিন্তু পরে মন্দিরটি ‘থিরুভনাইকোভিল’ নামে পরিচিত হয়। মন্দিরটির পাঁচটি প্রাকার ও ৭টি গোপুরম আছে। বাইরের প্রাকারটি প্রায় দেড় কিলোমিটার লম্বা এবং ২৫ ফিট উঁচু। এই প্রাকারটির নাম ‘বিভূতি প্রাকার’, বলা হয় স্বয়ং শিব এই বিশাল প্রাকারটি নির্মাণ করেন। 
প্রথম প্রাকারের ভিতরে চতুষ্কোণ গর্ভগৃহের দক্ষিণ-পূর্ব দেওয়ালের গায়ে আছে একটি সাদা জাম (Syzygium cumini) গাছ। এটি  হল ‘স্থলবৃক্ষ’। গর্ভগৃহে ঢোকার দরজাটি খুবই ছোট, মাত্র ৪ ফিট উঁচু। এর অবস্থান গর্ভগৃহের দক্ষিণ দিকের দেওয়ালে। বলা হয় মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা রাজা কোচেঙ্গট চোল (যিনি আগের জন্মে মাকড়সা-রূপী মাল্যবান ছিলেন) ছোট দরজা বানিয়েছিলেন যাতে কোনও হাতি মন্দিরের গর্ভগৃহে ঢুকে জম্বুকেশ্বর লিঙ্গের পুজো করতে না পারে। গর্ভগৃহের পশ্চিম দেওয়ালে ৯টি খোপযুক্ত (নবগ্রহ) একটি জানালা দিয়ে শিবলিঙ্গ দর্শনের ব্যবস্থা আছে। সামনে আছে মুখ-মণ্ডপ। এখানে ব্রোঞ্জের নন্দীমূর্তি আছে।
মন্দিরটি চোল রাজাদের তৈরি হলেও দাক্ষিণাত্যের অন্য রাজারাও এই মন্দিরের পুনর্নির্মাণ বা সৌন্দর্যায়নের জন্য অর্থসাহায্য করেন। এঁদের মধ্যে হয়সালা রাজা সোমেশ্বর ১২৩৬-৩৭ খ্রিস্টাব্দে জম্বুকেশ্বর মন্দির কমপ্লেক্সে বল্লালীশ্বর (পিতামহ দ্বিতীয় বল্লালের স্মৃতিতে), পদুমালীশ্বর (পিতামহী পদ্মালয়া দেবীর স্মৃতিতে), বীর নরসিংহেশ্বর (পিতা বীর নরসিংহের নামে) ইত্যাদি শিব মন্দির নির্মাণ করেন।
অপ অর্থাৎ জল-লিঙ্গ হলেও জম্বুকেশ্বর কিন্তু জল দিয়ে তৈরি নয়। প্রায় তিন ফিট উঁচু লিঙ্গটি তাম্রবর্ণ শিলার।  পার্বতী এখানে অখিলান্দেশ্বরী রূপে অবস্থিত। মন্দিরের বিশেষত্ব হল এখানে পার্বতী শিষ্যা, তিনি গুরুরূপী জম্বুকেশ্বরের কাছে শিবজ্ঞানের উপদেশ গ্রহণ করছেন। সেইজন্য জম্বুকেশ্বর ও অখিলান্দেশ্বরীর মূর্তি মুখোমুখি এবং দক্ষিণ ভারতের অন্যান্য শিব মন্দিরগুলির মতো এখানে শিব-পার্বতীর বিবাহ উৎসব অনুষ্ঠিত হয় না।
জম্বুকেশ্বর মন্দিরে একটি বিশেষ মূর্তি আছে (যা শুধুমাত্র থিরুবারুরের ত্যাগরাজা মন্দিরেই আছে), যাকে বলা হয় একপাদ ত্রিমূর্তি। সেটি এক পা বিশিষ্ট শিবের দেহ থেকে ব্রহ্মা ও বিষ্ণু বেরিয়ে এসেছেন।  মূর্তিটির অর্থ হল শিব হলেন সবচেয়ে বড়, ব্রহ্মা ও বিষ্ণুর উৎপত্তি শিবাংশ থেকেই। আর শিবের একটি মাত্র পা নির্দেশ করে বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ডের কেন্দ্রীয় স্তম্ভ বা Cosmic axis-কে।

৩) তেজ বা অগ্নি লিঙ্গ অরুণাচলেশ্বর (তামিলনাড়ু)
চেন্নাই থেকে ১৮৫ কিলোমিটার দূরে থিরুভন্নামালাই জেলার সদর শহর হল থিরুভন্নামালাই।  এখানে অরুণাচল পর্বতের পাদদেশে অবস্থিত অরুণাচলেশ্বর বা আন্নামালাইয়ার শিবের মন্দির। শহরের মধ্যে  একটি পঞ্চচূড়া বিশিষ্ট ছোট পাহাড়ের নাম অরুণাচল গিরি। এর অন্য নামগুলি হল অরুণাগিরি, আন্নামালাই হিলস, অরুণাচলম, অরুণাই, সোনাগিরি এবং সোনাচলম। 
অরুণাচল গিরির ধর্মীয় গুরুত্ব অসীম। পাহাড়টিকে স্বয়ং শিব মনে করা হয়। এর সবক’টি পাথরই শিবলিঙ্গ, সব গাছই কল্পবৃক্ষ, সব জলই গঙ্গাজল। তামিল ধর্মশাস্ত্র অনুসারে পাহাড়ের পূর্বদিকে সূর্যদেবতার আবাস, পশ্চিমে বরুণ দেবতার, দক্ষিণে বিশ্বামিত্র মুনির এবং উত্তরে আছেন শিবের ত্রিশূল এবং সিদ্ধপুরুষ-রূপী শিব। অরুণাচল গিরি সত্যযুগে আগুনের ছিল, ত্রেতাযুগে পান্নার, দ্বাপরে সোনার এবং কলিযুগে হয়েছে পাথরের।
এই পাহাড়কে ঘিরে কম্পাসের আট কার্ডিনাল পয়েন্টে (E, SE, S, SW, W, NW, N, NE) আটটি শিবলিঙ্গের অবস্থান — ইন্দ্র লিঙ্গম, অগ্নি লিঙ্গম, যম লিঙ্গম, নিরুথি/নিরুধী লিঙ্গম, বরুণ লিঙ্গম, বায়ু লিঙ্গম, কুবের লিঙ্গম ও ঈশান/ ঈশানীয়া লিঙ্গম। এই আটটি শিবলিঙ্গকে একসঙ্গে বলা হয় ‘অষ্টলিঙ্গম’ এবং এঁরা হলেন রাশিচক্রের ১২টি রাশির অধীশ্বর। 
এই পাহাড়েই অগ্নিস্তম্ভের রূপে শিব আবির্ভূত হয়েছিলেন। ঘটনাটি এইরকম, কৈলাসে একদিন পার্বতী মহাদেবের চোখ বন্ধ করে ধরতেই বহু বছর পৃথিবী অন্ধকারে ডুবে যায়।  পার্বতী তখন অন্যান্য শৈবদের সঙ্গে সম্মিলিত হয়ে জগতের আলো ফিরিয়ে আনার জন্য মহাদেবের তপস্যা করেন।  শিব তখন অরুণাচল পর্বতের চূড়ায় অগ্নিস্তম্ভ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন এবং পার্বতীর সঙ্গে যুক্ত হয়ে তাঁর অর্ধনারীশ্বর রূপটি ধারণ করেন। আরেকটি মত হল, একবার ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বরের মধ্যে তর্ক হয় কে বড়? শিব একটি আগুনের স্তম্ভের রূপে আবির্ভূত হয়ে ব্রহ্মা ও বিষ্ণুকে বললেন, অগ্নিস্তম্ভটির আদি ও অন্ত খোঁজার জন্য। ব্রহ্মা তাঁর বাহন হাঁসে চড়ে আকাশের দিকে আর বিষ্ণু বরাহ রূপ ধারণ করে পাতালে গেলেন, কিন্তু অনেক খুঁজেও অগ্নিস্তম্ভটির আদি অন্ত দেখতে পেলেন না। বিষ্ণু ব্যর্থ হয়ে শিবের শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকার করলেন, কিন্তু ব্রহ্মা মিথ্যা কথা বললেন, তিনি এর শেষ দেখতে পেয়েছেন। এতে শিব রেগে গিয়ে অভিশাপ দিলেন পৃথিবীতে কোথাও ব্রহ্মার পুজো হবে না। তার পরে অবশ্য ব্রহ্মা শিবের শ্রেষ্ঠত্ব মেনে নিলে পুষ্করে তাঁর পুজোর ব্যবস্থা হয়।
মন্দিরটির কথা খ্রিস্টীয় সপ্তম শতাব্দীতে তামিল ‘নয়নার’ সাধু সম্বন্দার ও আপ্পারের লেখা ‘তেভরম’ কাব্যগ্রন্থে আছে। তবে ‘তেভরম’ গ্রন্থে যে আন্নামালাইয়ার বা অরুণাচলেশ্বর মন্দিরের কথা বলা হয়েছে, তার অবস্থান ছিল বরুণ লিঙ্গম মন্দির থেকে এক কিমি দূরের আদি আন্নামালাইয়ার গ্রামে। বর্তমান মন্দিরটি খ্রিষ্টীয় নবম-দশম শতাব্দীতে চোল রাজারা নির্মাণ করলেও পরবর্তীকালে বিভিন্ন রাজারা মন্দিরের সৌন্দর্যায়ন এবং নবরূপায়ণে প্রচুর অর্থসাহায্য করেন। 
মন্দির কমপ্লেক্সে বহু মণ্ডপ ও মন্দিরের মধ্যে মূল আন্নামালাইয়ারের মন্দির এবং উন্নামুলাই আম্মানের (পার্বতী এখানে যে নামে পরিচিত) মন্দিরই প্রধান। পাতাল লিঙ্গমের মন্দিরে তপস্যা করেই আধুনিক কালের ব্রহ্মজ্ঞ মহর্ষি রমণ সিদ্ধিলাভ করেন। মূল শিব মন্দিরটি পূর্বমুখী। আছে — সোমস্কন্দ, গজলক্ষ্মী, নটরাজ, লিঙ্গোদ্ভব (শিব লিঙ্গের মধ্য থেকে আবির্ভূত হচ্ছেন এই মূর্তি আছে) ইত্যাদি।
আন্নামালাইয়ার বা অরুণাচলেশ্বর হলেন পঞ্চভূতলিঙ্গের তেজ লিঙ্গ বা অগ্নি লিঙ্গ। শিবলিঙ্গটিকে নিয়ে নানারকম কথা চলে। অনেকে বলেন লিঙ্গটি গরম এবং সেইজন্য এই গর্ভগৃহের তাপমাত্রা বাইরের তাপমাত্রার চেয়ে বেশি। কেউ কেউ আবার এই লিঙ্গটিকে Tesla Coil-এর সঙ্গে তুলনা করেছেন। তবে এ সবই বিতর্কিত বিষয়। তবে শৈলেন্দ্রনারায়ণ ঘোষালশাস্ত্রীর বিখ্যাত বই ‘তপোভূমি নর্মদা’-র চতুর্থ খণ্ডের ১৭১ নম্বর পৃষ্ঠায় ‘আগ্নেয়লিঙ্গ’-এর লক্ষণ সম্বন্ধে বলা হয়েছে  ‘আগ্নেয়লিঙ্গ অরুণ বর্ণের মত লাল হয়, করতলে উষ্ণস্পর্শ লাগে এবং লিঙ্গের মধ্যে অর্ধনারীশ্বর বা শক্তির চিহ্ন স্পষ্টতঃ অঙ্কিত থাকবে।’
শিবের অগ্নিস্তম্ভরূপে অরুণাচল পর্বতের চূড়ায় আবির্ভূত হওয়ার ঘটনাকে উপলক্ষ করে প্রতিবছর তামিল কার্তিক মাসে এখানে ১০ দিন ধরে ‘কার্তিগাই দীপম’ নামে একটি বিশেষ উৎসব হয়। প্রথম দিন সকালে মন্দিরের ধ্বজা উত্তোললের পর আন্নামালাইয়ারের ‘উৎসব মূর্তি’-সহ ‘পঞ্চমূর্তি’ (গণপতি, মুরুগান, ষণ্ডেশ্বর, অরুণাচলেশ্বর ও পার্বতী) নিয়ে শোভাযাত্রা করে উৎসবের সূচনা হয়। দ্বিতীয় দিন থেকে প্রতিদিন বিভিন্ন দেবতার মূ্র্তি নিয়ে শোভাযাত্রা সহ নানা ধর্মীয় ক্রিয়া অনুষ্ঠিত হয়।  কার্তিক পূর্ণিমায় এই উৎসবের দশম বা শেষদিন পালিত হয়। সেই দিনে অরুণাচল গিরির সর্বোচ্চ চূড়ায় একটি বিশাল ‘প্রদীপ’ (‘মহাদীপম’) স্থাপন করে তা প্রায় ৩ হাজার কেজি ঘি ঢেলে ভর্তি করা হয়। ঠিক সন্ধ্যা ছ’টায় যখন পশ্চিমদিকে সূর্যাস্ত এবং পূর্বদিকে চন্দ্রোদয় হয়, তখন সেই বিশাল ‘প্রদীপ’টি জ্বালানো হয়। বহুদূর থেকে এই ‘প্রদীপ’-টির আলো দেখা যায়। এই ‘কার্তিগাই দীপম’ উৎসব উপলক্ষে এখানে লক্ষ লক্ষ দর্শকের সমাগম হয় এবং ভক্তরা ‘গিরিবালম’ বা অরুণাচল গিরির প্রদক্ষিণায় অংশগ্রহণ করেন।

৪) মরুৎ বা বায়ু লিঙ্গ — শ্রীকালাহস্তীশ্বর, (অন্ধ্রপ্রদেশ)
পঞ্চভূত লিঙ্গের চতুর্থ লিঙ্গ হলেন মরুৎ বা বায়ু লিঙ্গ শ্রীকালাহস্তীশ্বর। পঞ্চভূত লিঙ্গের অন্য চারটির অবস্থান তামিলনাড়ুতে হলেও শ্রীকালাহস্তীশ্বর অন্ধ্রপ্রদেশে চিত্তুর জেলায় তিরুপতি থেকে ৩৬ কিলোমিটার দূরে শ্রীকালাহস্তীতে অবস্থিত।
এর সঙ্গে অপ লিঙ্গ জম্বুকেশ্বরের সঙ্গে জড়িত একটি কাহিনির বেশ মিল আছে। এখানেও একটি শাপগ্রস্ত মাকড়সা (শ্রী) ও হাতির (হস্তী) সঙ্গে একটি সাপও (কালা) আছে। তিনজনে শিবের পুজো করত, কিন্তু কেউ কারও কথা জানত না। হাতি শিবের মাথায় জল ঢালত, সাপ নিজের মাথার মণি শিবলিঙ্গের উপর স্থাপন করে সাজাত আর মাকড়সা শিবলিঙ্গের উপরে জাল বুনে একটা চাঁদোয়া তৈরি করত যাতে শিবলিঙ্গের উপর নোংরা না পড়ে।
একদিন হাতি শিবের মাথায় জল ঢালতে দেরি করে ফেলায় মাকড়সা এবং সাপের পরে শিবলিঙ্গের কাছে পৌঁছে দেখে শিবলিঙ্গর মাথায় মণি এবং তার উপরে মাকড়সার জাল। হাতি মাকড়সার জালকে নোংরা এবং শিবলিঙ্গের উপর মণিকে কারওর বদমায়েশি ভেবে জল দিয়ে সাফ করে দেয়। মাকড়সা ও সাপ এতে ভীষণ রেগে যায়। সাপ হাতির শুঁড়ের মধ্যে ঢুকে পড়ে ছোবল দেয়। হাতি বিষের জ্বালায় শুঁড় আছড়াতে থাকে। এতে শুঁড়ের মধ্যে থাকা সাপের মৃত্যু হয় এবং হাতির গায়ের চাপে মাকড়সাও শিবলিঙ্গের গায়ে পিষ্ট হয়ে যায়। সবশেষে সাপের বিষে হাতিরও মৃত্যু হয়। তখন শিব এসে তিনজনকেই মুক্ত করেন। সেই থেকে শিবলিঙ্গটি শ্রীকালাহস্তীশ্বর নামে পরিচিত হয়।
শ্রীকালাহস্তীশ্বরের আরও একটি কাহিনি আছে।  অর্জুন একবার শ্রীকৃষ্ণের পরামর্শে পাশুপত অস্ত্র লাভের জন্য শিবের তপস্যা করেছিলেন। শিব তখন কিরাত আবির্ভূত হয়ে অর্জুনকে যুদ্ধে আহ্বান করেন।  অর্জুন তখন কিরাতরূপী শিবকে চিনতে পারেননি।  এতে তাঁর যে পাপ হয় তার জন্য পরজন্মে তিনি কানাপ্পা নামের এক ব্যাধ হয়ে জন্ম নেন। জঙ্গলে তিনি একটি কর্পূরের শিবলিঙ্গ খুঁজে পেয়ে তার উপাসনা শুরু করেন।  তিনি শিব উপাসনা সম্পর্কে কিছুই জানতেন না।  তাই স্বর্ণমুখী নদীর জল নিজের মুখে করে এনে শিবলিঙ্গের উপর ফেলতেন। শিকার করা জন্তুর মাংস তিনি শিবকে নৈবেদ্য হিসেবে দিতেন।  একদিন কানাপ্পাকে পরীক্ষা করার জন্য মহাদেব জঙ্গলে প্রচণ্ড ঝড়ের সৃষ্টি করলেন।  সেই ঝড়ে সমস্ত গাছপালা ভেঙে পড়তে লাগল। শিবলিঙ্গটিকে বাঁচানোর জন্য সেটিকে জড়িয়ে ধরলেন কানাপ্পা।  ঠিক তখনই তিনি দেখলেন শিবলিঙ্গে আঁকা শিবের একটি চোখ থেকে রক্ত পড়ছে।  তখন তিনি নিজের একটি চোখ উপড়ে নিয়ে শিবের চোখে বসিয়ে দিলেন এবং তখন দেখতে পেলেন শিবলিঙ্গের অন্য চোখটি থেকেও রক্ত পড়ছে।  কিন্তু আরেকটি চোখ দিতে গেলে তিনি সম্পূর্ণ অন্ধ হয়ে যাবেন।  তাই নিজের এক পায়ের বুড়ো আঙুল শিবের সেই চক্ষুস্থলে চেপে ধরলেন। শিব তখন পরম সন্তুষ্ট হয়ে দেখা দিয়ে কানাপ্পাকে শাপমুক্ত করেন।  
একটি পাহাড়ের গা কেটে তৈরি এই বিশাল মন্দিরটি দাক্ষিণাত্যের বিভিন্ন রাজবংশের— যেমন পল্লব, চোল, বিজয়নগর, পাণ্ড্য ইত্যাদি রাজাদের পৃষ্ঠপোষকতায় কয়েক শতাব্দী ধরে গড়ে উঠে বর্তমান রূপ পেয়েছে। ভিতরের অংশ আনুমানিক খ্রিষ্টীয় পঞ্চম শতাব্দীতে পল্লব রাজাদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত এবং বাইরের অংশ খ্রিষ্টীয় দশম থেকে বারশো শতাব্দীতে চোল রাজাদের, বিশেষ করে রাজা রাজেন্দ্র চোল (প্রথম) দ্বারা নির্মিত হয়। পার্বতী এখনে জ্ঞান প্রসূনাম্মা বা জ্ঞান প্রসূনাম্বিকা দেবী নামে পরিচিত।
এই বিশাল মন্দির কমপ্লেক্সে মূল শ্রীকালাহস্তীশ্বরের মন্দির ছাড়া আরও অনেকগুলি মন্দির (তামিলে ‘সন্নিথি’) আছে। মূল মন্দিরের ঠিক পিছনেই আছে মণিকান্তেশ্বর শিবের মন্দির। নীচে আছে ‘পাতাল গণপতি’-র মন্দির। পাশে যে দু’টি পাহাড় আছে তার  উত্তরদিকেরটির উপর দুর্গাম্মা মন্দির এবং অন্যটির উপর কানাপ্পা প্রতিষ্ঠিত কান্নবেশ্বর শিবমন্দির।
মূল শিবলিঙ্গটি স্বয়ম্ভূ। এই লিঙ্গটিকে কেউই স্পর্শ করার অধিকারী নন। অভিষেকের সময় জল, দুধ, কর্পূর, পঞ্চামৃত, চন্দন, ফুল ও পৈতা ‘উৎসব মূর্তি’-র মাথায় ঢালা হয়, মূল শিবলিঙ্গের উপর নয়। মন্দিরের গর্ভগৃহের মধ্যে একটি অখণ্ডজ্যোতি প্রদীপ জ্বলে। গর্ভগৃহে হাওয়া আসার মতো কোনও জানালা এবং ইলেকট্রিক ফ্যান না থাকা সত্ত্বেও ওই প্রদীপের শিখাটি সর্বক্ষণ এমনভাবে নড়তে থাকে যে দেখলে মনে হয় প্রচণ্ড জোরে হাওয়া এসে প্রদীপে লাগছে। আজও এই রহস্য উদ্ঘাটন হয়নি।  এ জন্যই শিব এখানে যথার্থভাবেই হাওয়া বা বায়ুর অধীশ্বর।   

৫) ব্যোম বা আকাশ লিঙ্গ চিদাম্বরম নটরাজ, (তামিলনাড়ু)
পঞ্চভূতের শেষ ‘ভূত’ ব্যোম বা আকাশ। এর অধীশ্বর হলেন চিদাম্বরম। তাঁর স্থানীয় নাম থিল্লাই নটরাজা। নটরাজ নৃত্যের দেবতা। তাই সব নৃত্যশিল্পীর কাছেই থিল্লাই নটরাজ মন্দির শ্রেষ্ঠ তীর্থ। এর অবস্থান চেন্নাই থেকে ২১৫ কিলোমিটার দূরে তামিলনাড়ুর কুদ্দালোর জেলার চিদাম্বরম শহরে। প্রাচীনকালে জায়গাটির নাম ছিল স্থানীয় ম্যানগ্রোভ গাছ থিল্লাই (Exocoeria agallocha)-এর নামানুসারে থিল্লাই বা থিল্লাইবনম। থিল্লাই নটরাজ নামটি ওই থিল্লাই গাছ বা জায়গার নাম থেকেই এসেছে।
পৌরাণিক কাহিনি অনুসারে কয়েকজন মুনিঋষি নিজেদের সততা এবং তপস্যার গর্বে গর্বিত হয়ে  দেবতা ভাবতে শুরু করলে তাঁদের দর্পচূর্ণ করার জন্য শিব মোহিনী মায়া বিষ্ণুকে নিয়ে তাঁদের কাছে আসেন এবং তাণ্ডব নৃত্য করেন। একদিকে মোহিনীর সৌন্দর্যে মুনিদের চিত্তচাঞ্চল্য ঘটল। তখন গর্বিত মুনিরা রেগে গিয়ে শিবকে শাস্তি দেওয়ার জন্য সর্পযজ্ঞ করে সাপ পাঠালেন, কিন্তু শিব সাপকে গলায় জড়িয়ে নিলেন। ক্রুদ্ধ ঋষিরা এবার একটি বাঘকে পাঠালেন, কিন্তু শিব বাঘকে মেরে তার চামড়াটা পরিধান করলেন। ঋষিরা এবার একটি হাতি-রূপী ভয়ঙ্কর অসুরকে পাঠালেন, কিন্তু শিব তাকেও বধ করলন (গজাসুরসংহার)। তখন শেষ চেষ্টা হিসাবে ঋষিরা মুয়ালকন নামের এক ভয়ানক দৈত্যকে পাঠালেন শিবের সঙ্গে যুদ্ধ করতে। কিন্তু শিব দৈত্যের পিঠে পা দিয়ে তাণ্ডব নৃত্য করলেন। এই নাচের নাম আনন্দতাণ্ডব। তখন মুনিরা বুঝতে পারলেন তাঁদের সংযমশিক্ষাই হয়নি, আত্মজ্ঞান তো অনেক দূরের ব্যাপার। তাঁদের দর্পচূর্ণ হল। মুনিরা বিশেষ করে পতঞ্জলি (ইনি খুব সম্ভবত যোগশাস্ত্র প্রণেতা মহর্ষি পতঞ্জলি নন) ও ব্যাঘ্রপদ নামে দুই মুনি থিল্লাই বনে গিয়ে শিবের আরাধনা শুরু করলেন। অবশষে নটরাজ মূর্তিতে শিব সেখানে আবির্ভূত হয়ে তাণ্ডব নৃত্য প্রদর্শন করলেন। যেখানে শিব আবির্ভূত হয়েছিলেন, মুনিরা সেখানে থিল্লাই নটরাজার মন্দির স্থাপন করলেন।
প্রথম দিকের চোল রাজাদের রাজধানী ছিল চিদাম্বরম। এগারোশো শতাব্দীতে রাজারাজা চোল (প্রথম) রাজধানী তাঞ্জাভুরে স্থানান্তরিত করেন। নৃত্যের অধীশ্বর নটরাজ রূপী শিবের উদ্দেশে নির্মিত বর্তমান মন্দিরটি চোল রাজাদের দ্বারা খ্রিষ্টীয় দশম শতাব্দীতে প্রতিষ্ঠিত। প্রথম রাজা চোলের সময়ে চিদাম্বরমের থিল্লাই নটরাজা মন্দিরের গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়। মন্দিরের ‘থাউজ্যান্ড পিলার হল’-টি বারোশো শতাব্দীর শেষদিকে প্রতিষ্ঠিত। দিল্লির সুলতান আলাউদ্দিন খিলজির সেনাপতি মালিক কাফুর ১৩১১ খ্রিস্টাব্দে চিদাম্বরম সহ দাক্ষিণাত্যের বহু মন্দিরে লুঠতরাজ ও ধ্বংসলীলা চালায়। এরপর খ্রিস্টীয় চোদ্দোশো শতাব্দীর শেষভাগে বিজয়নগরের হিন্দু রাজারা মাদুরাই সুলতানদের পরাজিত করে দাক্ষিণাত্যে হিন্দু রাজত্ব পুনর্প্রতিষ্ঠা করেন। বিজয়নগরের রাজারা চিদাম্বরমের নটরাজ মন্দিরসহ আরও অনেক ক্ষতিগ্রস্ত মন্দিরের পুনর্নির্মাণ করেন।
প্রথাগত দ্রাবিড়ীয় মন্দিরশৈলীতে নির্মিত প্রায় ৪০ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত বিশাল মন্দিরটির ৪টি প্রাকার ও ৯টি গোপুরম আছে। পূর্ব দিকের গোপুরমটির গায়ে নাট্যশাস্ত্রে বর্ণিত নৃত্যের সমস্ত (১০৮টি) মুদ্রা ভাস্কর্যে প্রদর্শিত হয়েছে। প্রতিটি গোপুরমেই দেবদেবীর মূর্তি, পৌরাণিক কাহিনি, হরিহর, অর্ধনারীশ্বর ইত্যাদি মূর্তি আছে।
নটরাজ মন্দিরের গর্ভগৃহটি অন্যান্য শিব মন্দিরের গর্ভগৃহ থেকে আলাদা। এখানকার মূল গর্ভগৃহে শিবলিঙ্গ নেই। তার বদলে আছে (চিৎসভা) নটরাজরূপী শিবের নৃত্যরত মূর্তি। এর পাশেই আছে একটি প্রকোষ্ঠ, যাকে বলা হয় ‘রহস্য’ বা রহস্যকক্ষ। কক্ষটি একটি ভারী পর্দা দিয়ে ঢাকা থাকে। পর্দাটির বাইরের অর্থাৎ দর্শকদের দিকের রং কালো (যা অজ্ঞানের প্রতীক)। পর্দাটি কিছুক্ষণ অন্তর খুলে দেওয়া হয়, তখন ভিতরের লাল রং দেখা যায় (গুরু দ্বারা জ্ঞানচক্ষু উন্মিলিত করার প্রতীক)। 
পঞ্চভূতের অধীশ্বর হয়ে পাঁচটি আলাদা স্থানে একই সরলরেখায় বা একই ভৌগোলিক দ্রাঘিমা বরাবর যুগ যুগ ধরে এভাবেই অধিষ্ঠান করে চলেছেন দেবাদিদেব।

৬) ৭৯° দ্রাঘিমার উত্তরে কেদারনাথ জ্যোতির্লিঙ্গ, (উত্তরাখণ্ড)
দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের অন্যতম কেদারনাথ অবস্থিত ১১৭০০ ফিট উচ্চতায়। প্রাচীনকালের পুঁথিপুরাণ কিংবদন্তিতেও এর উল্লেখ মেলে। যেমন পঞ্চকেদার সম্পর্কিত একটি জনশ্রুতি জুড়ে রয়েছে পঞ্চপাণ্ডবদের সঙ্গে। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে পাণ্ডবদের  স্বজনহত্যা, গোহত্যা, ব্রাহ্মণহত্যার মতো পাপের প্রায়শ্চিত্তের জন্য তাঁরা  শ্রীকৃষ্ণের পরামর্শে ভগবান মহাদেবের সন্ধানে যাত্রা শুরু করে। প্রথমে শিবের প্রিয় শহর কাশীতে যান। কিন্তু কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে পাণ্ডবরা নানা ছলনা, চাতুরির আশ্রয় নেওয়াতে, শিব পাণ্ডবদের প্রতি অসন্তুষ্ট ছিলেন। তাই তাঁদের প্রার্থনায় সাড়া না দিয়ে মহাদেব লুকনো স্থির করেন। গুপ্তকাশীতে এসে দেখলেন সেখানে অনেক ষণ্ড চরে বেড়াচ্ছে, শিব ষণ্ডের ছদ্মবেশে পালের সঙ্গে মিশে গেলেন। এদিকে কাশীতে শিবের দর্শন না পেয়ে পাণ্ডবরা এলেন গাড়োয়াল হিমালয়ে। শিবের সন্ধান পেতে মরিয়া পাণ্ডবদের মধ্যে ভীম শিবের চাতুরি ধরে ফেললেন। তাই বুদ্ধি করে ভীম নিজের দু’পা ফাঁক করে দু’পাশের পাহাড়ে রেখে দাঁড়িয়ে পড়লেন।  ভীমের পায়ের ফাঁক গলে সব ষণ্ড চলে গেলেও একটি ষণ্ড গেল না। ষণ্ডরূপী শিবের স্বরূপ বুঝতে পেরে ভীম ষণ্ডটিকে পিছন থেকে জাপটে ধরতেই, শিব মাটির তলায় লুকোবার চেষ্টা করেন। ফলে শিবের পশ্চাদ্দেশের অংশ পড়ে রইল কেদারনাথে আর শরীরের অবশিষ্ট অংশগুলি যথাক্রমে শিবের নাভি ও পেট (মদমহেশ্বরে), বাহু (তুঙ্গনাথে), মুখ (রুদ্রনাথে), জটা(কল্পেশ্বরে) ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে। তাই কেদারনাথে ষণ্ডরূপী শিবের পশ্চাদ্দেশের শিলারূপের পুজো করা হয়। শেষমেশ পাণ্ডবদের ভক্তিতে খুশি হয়ে মহাদেব  দর্শন দিয়ে তাঁদেরকে পাপ থেকে মুক্তি দেন। এরপর পাণ্ডবরা উপরোক্ত পাঁচ জায়গায় মহাদেবের মন্দির নির্মাণ করেন, যা আজকের পঞ্চকেদার নামে খ্যাত। 
পঞ্চকেদারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কেদারনাথের উল্লেখ মেলে স্কন্দ পুরাণে, গঙ্গা নদীর উৎপত্তির গল্পে, কেদারা (কেদারনাথ) নামটি ব্যাখ্যা করে যেখানে ভগবান শিব এই মন্দিরকে মুক্তি দিয়েছিলেন। বারো শতকের গহদাবালা মন্ত্রী ভট্ট লক্ষ্মীধারার লেখা কৃত্য-কল্পতরুতে এর উল্লেখ পাওয়া যায়। বর্তমানের কেদারনাথ তীর্থের পুরোহিত তথা তাঁদের পূর্বপুরুষরা  নর-নারায়ণের সময় থেকেই নাকি লিঙ্গের পুজো করে আসছেন পারম্পরিকভাবে। বহু বছর আগে ইংরেজ পর্বতারোহী এরিক শিপটনের তথ্যানুসারে, শুধুমাত্র একজন পুরোহিত ছিলেন এই অঞ্চলে। কেদারনাথ এবং বদ্রীনাথ উভয় মন্দিরে সেবাই ছিল যার কাজ ছিল। শঙ্করাচার্য এই কেদারনাথে দেহত্যাগ করেন।
এরকম অনেক গল্পকাহিনি ছড়িয়ে কেদারের হাওয়ায়। 
প্রাচীনকালে সপ্তদ্বীপের কেদার রাজা পুত্রের হাতে রাজ্যভার সমর্পণ করে এই স্থানে চলে  এসেছিলেন। কেদার রাজার নাম অনুসারে ওই উপত্যকা কেদারখণ্ড নামে পরিচিত। 
এখন মন্দির পরিসর আগাগোড়া পাথরের। চাতাল থেকে কিছুটা উঁচুতে রেলিং দিয়ে ঘেরা আয়তাকার ক্ষেত্র। নাটমন্দির ছোট। তার সামনে বড় দরজা। দু’পাশে দুটি পাথরের দ্বারপাল দণ্ড হাতে দাঁড়িয়ে। মন্দিরে ঢোকার মুখে উত্তরমুখী বিশাল কালো পাথরের নন্দী। তাঁকে প্রণাম জানিয়ে মন্দিরে প্রবেশ করতে হয়। গর্ভ মন্দিরের চূড়া দেউলাকৃতি। তার ওপর নেপালি ঢঙের ছত্রী। একদম ওপরে স্বর্ণকলস। মন্দিরে ঢুকেই উঁচু বেদির ওপরে দেবতার দিকে মুখ করে পিতলের ছোট নন্দী। তার সামনে কেদারনাথের পঞ্চমুখী শিবমূর্তি। তাঁকে প্রণাম করে গর্ভমন্দিরের ভিতরে প্রবেশ। ভিতরে বিশালকায় পিতলের প্রদীপ তাতে অখণ্ড জ্যোতি জ্বলছে। এই জ্যোতি থাকে শীতকালে ছয়মাস মন্দির বন্ধের সময়েও। ঠিক মাঝখানে পাথরের রেলিং দিয়ে ঘেরা জায়গায় কালো পাথরের ত্রিকোণাকৃতি এবং একটা দিক ঢালু হয়ে নেমে আসা প্রায় আড়াই হাত উঁচু পরম আরাধ্য জ্যোতির্লিঙ্গ কেদারনাথ। আরতি করেন কালো জামাকাপড় পরা রাওয়াল। তালে তালে বিচিত্র সুরে স্তব ও পাঠ চলে। আরতির আগে শৃঙ্গার করা হয়। সুন্দর বেনারসী কাপড় দিয়ে সমগ্র লিঙ্গটি ঢেকে তার ওপর দামি শাল জড়িয়ে, ওপরে রুপোর মুকুট, তার ওপর সর্পছত্র, আর অনেক মালা দিয়ে সাজানো হয়। 
কেদারের অভিষেক হয় ভোরবেলায় সূর্যোদয়ের আগে।  অনাবৃত প্রস্তরলিঙ্গে রুদ্রাভিষেক সম্পন্ন হয়, তার নাম নির্বাক দর্শন। 
কেদারনাথের মন্দিরে তিনটে প্রকোষ্ঠ। প্রথম প্রকোষ্ঠে ঢুকেই ডানদিকে দরজার পাশে মা দুর্গার মূর্তি এবং চারদিকের দেওয়ালে কৃষ্ণ, পঞ্চপাণ্ডব ও দ্রৌপদীর মূর্তি। দ্বিতীয় প্রকোষ্ঠ হল নাটমন্দির, এখানে কোনও দেবদেবীর মূর্তি নেই, আছে পিতলের তৈরি ছোট একটি নন্দী। নন্দীর ঠিক সামনেই গর্ভমন্দিরের দরজা।
পঞ্চপাণ্ডব থেকে আদি শঙ্করাচার্য— আদিকাল থেকে কত ভক্তজন, মহাপুরুষ এসে কৃতার্থ হয়েছেন এই গর্ভগৃহে। মন্দিরের ঠিক মাঝখানেই বৃষের পিঠের কুজের আকৃতির প্রস্তরময় জ্যোতির্লিঙ্গ। আদি শঙ্করাচার্য় সারা ভারত ঘুরে বারোটি জায়গায় ভগবান আশুতোষের বিশেষ উপস্থিতি অনুভব করেছিলেন। এই বারোটি জায়গার শিবলিঙ্গকে জ্যোতির্লিঙ্গ বলা হয়। কাশীর বিশ্বনাথ, উজ্জয়িনীর মহাকালেশ্বর, ওঙ্কারেশ্বরে ওঙ্কারেশ্বর, দেওঘরে বৈদ্যনাথ, রামেশ্বরমে রামেশ্বর ইত্যাদি। হিমালয়ে অবস্থিত একমাত্র জ্যোতির্লিঙ্গ হলেন এই কেদারনাথ।
কেদারনাথ লিঙ্গের ঠিক পিছনের দেওয়ালে একটি কুলুঙ্গিতে পিতলের মহাদেবের ধ্যানমূর্তি। শীতকালে এই মূর্তিটিকেই শোভাযাত্রা করে উখিমঠে নিয়ে যাওয়া হয়, পুজোর জন্য এবং অক্ষয় তৃতীয়ার দিন আবার ফিরিয়ে নিয়ে আসা হয় কেদারনাথে। এই যাত্রার নাম ডোলিযাত্রা। অক্ষয় তৃতীয়া থেকে ভ্রাতৃদ্বিতীয়ার দিন পর্যন্ত কেদারনাথের পুজো হয় এই মন্দিরের জ্যোতির্লিঙ্গে। পশ্চিমের দেওয়ালে আরও ছোট একটা খুপরির মধ্যে জ্বলছে অনির্বাণ শিখার প্রদীপ। শীতে মন্দির বন্ধের আগে প্রদীপে পর্যাপ্ত ঘি ঢেলে যাওয়া হয়, গ্রীষ্মে মন্দির খুলে দেখা যায় প্রদীপ একইভাবে জ্বলছে।
কেদারনাথের কোনও শুচিবাই নেই। যে কেউ, স্নান করে হোক বা না করে, কেদারনাথকে স্পর্শ, আলিঙ্গন করতে পারেন। 
মন্দিরের ডানদিকের পাহাড়ের গায়ে বেশ খানিকটা উপরে ভৈরবনাথের মন্দির। বাঁদিকে পাহাড়ের গা দিয়ে উঠে গেছে বাসুকিতালের পথ। ঠিক পূর্বপাশেই আগে ছিল আদি শঙ্করাচার্যের সমাধিস্থল, সেটা এখন আর নেই। কথিত আছে, আচার্য শঙ্কর ৩২ বছর বয়সে কেদারনাথে আসেন, এখানেই রচনা করেন বিখ্যাত দক্ষিণামূর্তিস্তোত্র, তারপর এখানেই সমাধিযোগে নির্বাণ লাভ করেন। 
কেদার নিয়ে প্রচলিত পাণ্ডবদের জনশ্রুতিটি আগে?
07th  October, 2024
মৃত্যু কি আগাম
ইঙ্গিত দেয়?

স্বামী বিবেকানন্দ বলে গেছেন, মৃত্যু চিন্তা ভালো। কারণ এই জগৎ কতটা মিথ্যা সেটা বোঝার জন্য। তবে মৃত্যুভয় ভালো নয়। জগতের বড় বিস্ময় মৃত্যু। মৃত্যুকালে মানুষের শুদ্ধ চেতনাকে আচ্ছন্ন করে দেয় অন্ধকার। সাধক-যোগীরা সেই অন্ধকারকে কাটাতে পারেন। বীরের মতো দেহ ছেড়েছেন বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী, রাম ঠাকুর, বালানন্দ ব্রহ্মচারি, নিগমানন্দ ঠাকুর, পরমহংস যোগানন্দ স্বামী, দুর্গাপুরী মাতাজি। মৃত্যুযোগ যাঁরা অভ্যাস করেন তাঁরাই নিজের মৃত্যুকালটি জানতে পারেন। সাধারণ মানুষ কীভাবে বুঝবেন মৃত্যুকাল আসন্ন? মৃত্যুকালে মানুষের মুখ কেন খোলা থাকে? শাস্ত্রে আছে, কারও যদি মনে হয় সূর্যের তেজ কমে আসছে, তাহলে তার আয়ু বেশিদিন নেই। রয়েছে আরও কিছু পূর্ব লক্ষণ। মৃত্যুর পূর্বে মানুষ নানারকম স্বপ্ন দেখেন, কী সেই স্বপ্ন? লিখেছেন সোমব্রত সরকার।
বিশদ

07th  October, 2024
আত্মার উপস্থিতি কীভাবে
অনুভব করা যায়?

আত্মার অস্তিত্ব নিয়ে সারা বিশ্বজুড়ে অনেক কথা শোনা যায়। আশ্চর্যের বিষয়, মহাপুরুষ থেকে সাধারণ মানুষও আত্মার উপস্থিতি বুঝতে পারেন। আচার্য শঙ্করাচার্য থেকে শ্রীরামকৃষ্ণ, আবার রাম ঠাকুর থেকে নিগমানন্দ সরস্বতী এমনকী বিশ্বের তাবড় মনীষীরাও স্বীকার করেন আত্মার অস্তিত্ব। জীবন ফুরিয়ে গেলেই তা শেষ হয়ে যায় না। এ বিষয়ে গীতা থেকে ভারতীয় অধ্যাত্মশাস্ত্র কী বলে? প্ল্যানচেটে অাত্মা আনা সম্ভব। কলকাতায় এক সময় এটি জনপ্রিয় ছিল। কিন্তু আত্মারা কখনও স্বইচ্ছায় আসেন তাঁর প্রিয়জনের কাছে! তাঁদের সুখ-দুঃখের সাথী হন। কোন পরিস্থিতিতে আত্মারা আসেন? কীভাবে বুঝবেন তাঁদের উপস্থিতি? কী সহায়তা করেন তাঁরা? লিখেছেন সোমব্রত সরকার। 
বিশদ

07th  October, 2024
অপদেবতা কি ক্ষতি করে?

অপদেবতা মানুষের ক্ষতি না উপকার করে? লিখেছেন অগ্নিশ্বর সরকার। বিশদ

07th  October, 2024
ঘরোয়া টোটকায় কী কী রোগ সারে?
শম্পা চক্রবর্তী

হাজার হাজার বছর আগে যখন আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের এত উন্নতি ঘটেনি, মানুষজনের কাছে অ্যালোপ্যাথি বা হোমিওপ্যাথি ওষুধেরও কোনও ধারণা ছিল না। তখন থেকেই মানুষজন বিভিন্ন অসুখবিসুখের মোকাবিলায় প্রাকৃতিক বা ভেষজ চিকিৎসার ওপর সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করত। বিশদ

07th  October, 2024
রোগ নিরাময়ে টোটকা?
ডাঃ লোপামুদ্রা ভট্টাচার্য

হাতের কাছে চট করে পাওয়া যায় এমন ভেষজ যে প্রয়োজনে ছোটখাট অসুখ সারাতে পারে তা অনেকেই জানেন না। আবার অনেকে হয়তো কখনও জানতেন এখন আর মনে পড়ছে না। বিশদ

07th  October, 2024
হার্ট ভালো রাখবেন কী করে?
ডাঃ অরূপ দাসবিশ্বাস

হার্টের অসুখকে ভয় পান না, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। হার্টের নানারকম অসুখ হয়। সব অসুখ নিয়ে স্বল্প পরিসরে আলোচনা করা সম্ভব নয়। কী কী নিয়ম মেনে চললে সুস্থ থাকবে আপনার হার্ট? এই লেখায় মূলত সেই নিয়েই আলোচনা করব। তার আগে ছোট করে বলে নিই সাধারণত কোন কোন হার্টের অসুখে বেশি ভুগি আমরা।   বিশদ

07th  October, 2024
হার্ট ভালো 
রাখুন খাবারে
অরিত্র খাঁ

হার্টের শরীর ও স্বাস্থ্যের কথা যদি আমরা মেডিক্যাল ডায়েটের পরিভাষায় বলি তাহলে প্রথমেই উঠে আসবে ‘ডিসলিপিডেমিয়া’(Dyslipidemia)-এর কথা। আমাদের শরীরে লিপিড প্রোফাইল অর্থাৎ কোলেস্টেরলের মাত্রা মাঝেমধ্যে এদিক ওদিক হয়। শরীরে ভালো ও খারাপ দুই ধরনের কোলেস্টেরল থাকে। বিশদ

07th  October, 2024
ভালো রাখুন আপনার হার্ট
ডাঃ রুদ্রজিৎ পাল

কীভাবে ভালো রাখবেন হার্ট? এই নিয়ে নানা মুনির নানা মত। কেউ বলছেন ‘সুপারফুড’ খেতে, আবার কেউ বলছেন ‘ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং’ করতে। এছাড়াও আছে ‘অল্টারনেটিভ মেডিসিন’-এর নানা চমকদার ‘থেরাপি’। অনেকে ‘গোপন’ টোটকার কথাও বলেন। কিন্তু এর মধ্যে কোনটা কার্যকর? সত্যিই কি হার্ট ভালো রাখার জন্য বিশেষ কিছু করতে হয়? এই নিয়ে আলোচনা করা যাক। 
বিশদ

07th  October, 2024
যোগচর্চায় সুস্থ রাখুন হার্ট
আশীষ সেন

হার্টকে সুস্থ রাখতে যোগচর্চার জুড়ি নেই। ‘হৃদযন্ত্র’ শব্দটিকে বাংলায় তর্জমা করলে দাঁড়ায় বুকের মধ্যস্থিত স্পন্দনশীল রক্ত সঞ্চালক শারীরিক যন্ত্র বিশেষ। শুধুমাত্র মানবজীবন নয় সমস্ত প্রাণীর ক্ষেত্রেই এই ‘শারীরিক যন্ত্র’ প্রাণকে আমৃত্যু সচল রাখে। বিশদ

07th  October, 2024
সাধারণ রোগে কী ডায়েট?

কোন সময়ে কী খাবেন জানালেন পুষ্টিবিদ ডাঃ রঞ্জিনী দত্ত।
  বিশদ

07th  October, 2024
কোন রোগে 
কী পথ্য?

সুস্থ থাকার জন্য যা খাই, তা খাদ্য। রোগীর বেলায় সেটি হয়ে যায় পথ্য। এই পথ্য তখন ওষুধের সঙ্গে মিলেমিশে রোগ সারায়। সেই পথ্যধর্মী খাবার যদি দৈনন্দিন জীবনে খাওয়া যায়, তাহলে শরীর এমনিতেই সুস্থ থাকবে। খাদ্যকে ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করতে পারলে রোগবালাই পালাবে। সুস্থ মানুষ রোজকার খাবারে কোন কোন পদ কতটা খাবেন? অসুস্থ ব্যক্তি কী খাবার খাবেন, সেই হিসেব কি জানেন? খাদ্য যে রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করবে তা সবাই জানে। ঠিক মতো খাবার খেয়ে সুস্থতা বজায় রাখার উপায় বললেন ডাঃ সুবলকুমার মাইতি। 
বিশদ

07th  October, 2024
বদ্রীনাথ থেকে বসুধারা
প্রসেনজিৎ পোদ্দার

খাদের সীমানা বরাবর গাঁথা পাঁচিলের ঠিক পরেই, প্রায় হাত বাড়ানো দূরত্বে, নীচের সুগভীর গিরিখাত ধরে ছলবলিয়ে প্রবহমানা তীব্র স্রোতস্বিনী অলকানন্দা। তার স্বচ্ছ নীলাভ জলরাশি চলার পথে এখানে-ওখানে পাথরের বুকে ধাক্কা খেয়ে, সফেন ধারায় ছুটে চলেছে সুতীব্র গতিতে। বিশদ

07th  October, 2024
জয়ন্তীর জঙ্গলে দিনরাত্রি
সোমনাথ  মজুমদার

কাঞ্চনকন্যা এক্সপ্রেস এন জে পি স্টেশন থেকে যখন ছাড়ল বাইরে মুষল ধারায় বৃষ্টি পড়ছে। ঘণ্টা দেড়েক বৃষ্টির পর আবার আকাশ মেঘমুক্ত। হাসিমারা স্টেশন পার হয়ে গিয়েছে, বক্সার গভীর অরণ্যর মধ্যে এঁকে বেঁকে চলেছে ট্রেন। দরজায় দাঁড়িয়ে দূরের ডিজেল ইঞ্জিনকে দেখা যায়। বিশদ

07th  October, 2024
থর মরুভূমিতে এক রাত
ডাঃ অমিতাভ  ভট্টাচার্য

 

আকাশে তখন পূর্ণিমার চাঁদ। মাথায় টুপি আর গায়ে চাদর জড়িয়ে, তাকিয়ায় হেলান দিয়ে, হাতে গড়গড়ার নল নিয়ে চোখের সামনে যখন রাজস্থানি সুন্দরীর লোকনৃত্য দেখছিলাম। আর মাঝে মাঝে কফির কাপে চুমুক দিচ্ছিলাম, তখন নিজেকে রাজাই মনে হচ্ছিল। থর মরুভূমি থুড়ি জয়সলমিরের রাজা।
বিশদ

07th  October, 2024

Pages: 12345

একনজরে
সম্প্রতি শহরে তথ্য-প্রযুক্তি সংস্থা ইনফোসিসের নতুন ক্যাম্পাসের উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যের এই সাফল্যকে সামনে এনে প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র দাবি করলেন, বাংলায় পড়াশোনোর বহর বাড়ছে। সেই কারণেই মেধার বিস্তৃতি সম্ভব হচ্ছে। ...

ফের বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হল মণিপুরে। এবারও সেই ইম্ফল পূর্ব ও কাংপোকপি জেলা। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার ইম্ফল পূর্ব জেলার নুংব্রাম এবং লাইরোক ভইেপেই গ্রামে তল্লাশি চালায় পুলিস ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর যৌথ দল। ...

শুক্রবার ভোরে কালীগঞ্জের বড়চাঁদঘর পঞ্চায়েতের তেজনগর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় একটি মোবাইল দোকানে দুঃসাহসিক চুরির ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়ায়। দোকানের শাটার ভেঙে দুষ্কৃতীরা লক্ষাধিক টাকার মোবাইল চুরি করে ...

মাদক কারবার থেকে চোরাচালান। মানব পাচার থেকে জঙ্গি কার্যকলাপ। সবমিলিয়ে ক্রমশ স্পর্শকাতর নেপাল ও ভুটান সীমান্ত। এজন্যই ড্রোন উড়িয়ে নজরদারি চলছে সংশ্লিষ্ট দুই সীমান্তে। একইসঙ্গে ...




আজকের দিনটি কিংবদন্তি গৌতম ( মিত্র )
৯১৬৩৪৯২৬২৫ / ৯৮৩০৭৬৩৮৭৩

ভাগ্য+চেষ্টা= ফল
  • aries
  • taurus
  • gemini
  • cancer
  • leo
  • virgo
  • libra
  • scorpio
  • sagittorius
  • capricorn
  • aquarius
  • pisces
aries

কাজকর্মের ক্ষেত্রে দিনটি বিশেষ শুভ। নতুন যোগাযোগ ও উপার্জন বৃদ্ধির ক্ষেত্র প্রস্তুত হতে পারে। বিদ্যায় ... বিশদ


ইতিহাসে আজকের দিন

১৮০১: শিক্ষাবিদ ও সমাজসংস্কারক প্রসন্নকুমার ঠাকুরের জন্ম
১৯১১: প্রতিষ্ঠিত হল সেন্ট্রাল ব্যাংক অব ইন্ডিয়া
১৯৫৯: ক্রিকেটার কৃষ্ণমাচারী শ্রীকান্তের জন্ম
১৯৬৩: অভিনেতা গোবিন্দার জন্ম
১৯৯৮: নোবেলজয়ী অমর্ত্য সেনকে ‘দেশিকোত্তম’ দিল বিশ্বভারতী
২০১২: পরিচালক যীশু দাশগুপ্তের মৃত্যু



ক্রয়মূল্য বিক্রয়মূল্য
ডলার ৮৪.১৩ টাকা ৮৫.৮৭ টাকা
পাউন্ড ১০৪.২৭ টাকা ১০৭.৯৮ টাকা
ইউরো ৮৬.৪২ টাকা ৮৯.৭৮ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
পাকা সোনা (১০ গ্রাম) ৭৬,০০০ টাকা
গহনা সোনা (১০ (গ্রাম) ৭৬,৪০০ টাকা
হলমার্ক গহনা (২২ ক্যারেট ১০ গ্রাম) ৭২,৬০০ টাকা
রূপার বাট (প্রতি কেজি) ৮৭,৪০০ টাকা
রূপা খুচরো (প্রতি কেজি) ৮৭,৫০০ টাকা
[ মূল্যযুক্ত ৩% জি. এস. টি আলাদা ]

দিন পঞ্জিকা

৬ পৌষ, ১৪৩১, শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪। ষষ্ঠী ১৫/১৫, দিবা ১২/২২। পূর্বফাল্গুনী নক্ষত্র ৫৯/৫৫ শেষ রাত্রি ৬/১৪। সূর্যোদয় ৬/১৬/১৭, সূর্যাস্ত ৪/৫৩/১১। অমৃতযোগ প্রাতঃ ৬/৫৯ মধ্যে পুনঃ ৭/৪২ গতে ৯/৪৯ মধ্যে পুনঃ ১১/৫৭ গতে ২/৪৭ মধ্যে পুনঃ ৩/২৯ গতে অস্তাবধি। রাত্রি ১২/৫৬ গতে ২/৪৩ মধ্যে। বারবেলা ৭/৩৫ মধ্যে পুনঃ ১২/৫৩ গতে ২/১৩ মধ্যে পুনঃ ৩/৩ গতে অস্তাবধি। কালরাত্রি ৬/৩৩ মধ্যে পুনঃ ৪/৩৬ গতে উদয়াবধি। 
৫ পৌষ, ১৪৩১, শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪। ষষ্ঠী দিবা ১/৫৮। পূর্বফাল্গুনী নক্ষত্র অহোরাত্র। সূর্যোদয় ৬/১৯, সূর্যাস্ত ৪/৫২। অমৃতযোগ দিবা ৭/৬ মধ্যে ও ৭/৪৯ গতে ৯/৫৭ মধ্যে ও ১২/৫ গতে ২/৫৬ মধ্যে ও ৩/৮ গতে ৪/৫২ মধ্যে এবং রাত্রি ১/৪ গতে ২/৫০ মধ্যে। কালবেলা ৭/৩৮ মধ্যে ও ১২/৫৫ গতে ২/১৪ মধ্যে ও ৩/৩৩ গতে ৪/৫২ মধ্যে। কালরাত্রি ৬/৩৩ মধ্যে ও ৪/৩৮ গতে ৬/২০ মধ্যে।
১৮ জমাদিয়স সানি।

ছবি সংবাদ

এই মুহূর্তে
নিউ আলিপুরে আগুন লাগার ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক যানজট, শিয়ালদহ-বজবজ শাখায় ট্রেন চলাচলও নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে

07:38:00 PM

পাঞ্জাবের মোহালিতে ভেঙে পড়ল একটি নির্মীয়মান বিল্ডিংয়ের একাংশ, হতাহতের খবর নেই

07:38:00 PM

আইএসএল: ইস্ট বেঙ্গল ০-জামশেদপুর ০ (৭ মিনিট)

07:37:00 PM

নিউ আলিপুরে ঝুপড়িতে আগুন লাগার ঘটনায় অকুস্থলে দমকলের ১০টি ইঞ্জিন, উপস্থিত রয়েছেন ফিরহাদ হাকিম, দেবাশিস কুমার

07:34:00 PM

কুয়েতের শেখ সাদ আল আবদুল্লাহ ইন্ডোর স্পোর্টস কমপ্লেক্সে বক্তব্য রাখছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি

07:32:00 PM

সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে বিহারে ৯৪ লক্ষ পরিবারের আয় ৬ হাজার টাকার কম, কাটিহারে বললেন আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব

07:30:00 PM