কাজকর্মের ক্ষেত্রে দিনটি বিশেষ শুভ। নতুন যোগাযোগ ও উপার্জন বৃদ্ধির ক্ষেত্র প্রস্তুত হতে পারে। বিদ্যায় ... বিশদ
হার্টের মূলত চারটি কাজ রয়েছে।
১. অক্সিজেন ও পুষ্টিসমৃদ্ধ রক্ত সারা শরীরে পৌঁছে দেওয়া।
২. সারা শরীর থেকে অশুদ্ধ ও বর্জ্যপদার্থ বয়ে নিয়ে আসা।
৩. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা।
৪. বিভিন্ন গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হরমোন বিভিন্ন গ্রন্থিতে পৌঁছে দেওয়া।
এবার প্রশ্ন আসতে পারে, কীভাবে আমাদের হৃদযন্ত্রকে সুস্থ ও সবল রাখব? এক্ষেত্রে ছোট থেকে বড় সকলকেই একই নিয়ম মেনে চলতে হবে। হার্টকে সুস্থ রাখার জন্য প্রয়োজন নিয়ম বেঁধে খাবার গ্রহণ, শরীরচর্চা, বিশ্রাম। পাশাপাশি, প্রত্যেকদিন নিয়ম করে সঠিক ও প্রয়োজনমতো আসন, প্রাণায়াম, ধ্যানও করতে হবে।
হার্ট সম্পর্কিত ভুল ধারণার উদাহরণ
ধরুন আপনার বুকে প্রচণ্ড ব্যথা হচ্ছে। এই ব্যথার জন্য কখনওই ধরে নেবেন না যে আপনার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। প্রথমে ভালোভাবে লক্ষ রাখতে হবে ব্যথাটা বুকের কোন জায়গায় হচ্ছে। ব্যথাটা স্থায়ী, না সারা শরীরে ঘুরছে? হঠাৎ করে না জেনেই কোনও ওষুধ খাবেন না। নাক দিয়ে জোরে জোরে ৪-৫ বার শ্বাস নিন ও ছাড়ুন। পর্যবেক্ষণ করুন ব্যথার চরিত্র। চাপচাপ ব্যথা না চিনচিন ভাব, দম নিতে কষ্ট হচ্ছে কি না, মাথা ঘুরছে কি না, গা-হাত-পা কাঁপছে কি না এই সমস্ত বিষয়গুলি প্রথম ১-২ মিনিট পর্যবেক্ষণ করুন।
প্রথমে আসা যাক ব্যথার কথায়। দিনের যেকোনও সময় আপনার বুকে বহিরাগত আঘাতের ফলে ব্যথা হতে পারে। ১-২ দিন ব্যথাটা একই জায়গায় অবস্থান করবে। ওষুধ খেয়ে এই ব্যথা সারাবেন না। এটা কোনও হার্টের রোগ নয়।
আপনার যদি চাপা ব্যথা, চিনচিন ব্যথা এবং দমবন্ধ ব্যথা ডান, বাম এবং মধ্যখানে মুভ করতে থাকে সেক্ষেত্রে একদম ঘাবড়াবেন না। ব্যথাটা কীজন্য হচ্ছে সেটা নির্ধারণ করতে হবে। যদি বুঝতে না পারেন তবে বাম হাত ভাঁজ করে বাম দিকে পাঁজরের নীচে রেখে বাম দিকে কাত হয়ে দেখুন ঢেঁকুর বা গ্যাস বের হয় কি না। যদি না বের হয় ফের চেষ্টা করুন। ঢেঁকুর ওঠার পর বুঝতে পারবেন কেন বুক ব্যথা করছিল।
সর্দি, কাশি হলে অনেক সময় বুকে দমবন্ধ হওয়া বা ব্যথা অনুভব হয়। শ্বাস নেওয়া এবং ছাড়ার ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দেয়। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আপনি অনুলোম বিলোম করতে পারেন।
হার্টের যে সমস্ত অসুখ রয়েছে সেগুলি হল—করোনারি আর্টারি ডিজিজ, উচ্চ রক্তচাপ, অ্যাওয়ার্টিক ডিজিজ, পেরিফেরাল আর্টারি ডিজিজ, স্ট্রোক ভালভ ডিজিজ, অ্যারাইথিমা ইত্যাদি। যাবতীয় হার্টের অসুখ থেকে মুক্তি পেতে নিম্নলিখিত আসন ও প্রাণায়ামগুলি করা জরুরি।
১. ডিপ ব্রিদিং উইথ চেস্ট কনট্রাকশন :
প্রণালী: সোজা হয়ে একটি ম্যাটের উপর দাঁড়ান। দুই পায়ের মধ্যে ৪ ইঞ্চি দূরত্ব রাখুন। দুই হাত বুক বরাবর সোজা রাখুন। এবার নাক দিয়ে গভীর শ্বাসগ্রহণ করে আড়াআড়িভাবে কাঁধ বরাবর হাতদুটিকে নিয়ে আসুন। এইভাবে মোট ২০ বার করে এই আসনটি অভ্যেস করুন।
২. স্ট্যান্ডিং হ্যান্ডস আপ অল্টারনেটিভলি উইথ ব্রিদিং:
প্রণালী: ফের পূর্বের অবস্থায় দাঁড়ান। দুই হাত দুই দিকে আপনার পাশে রাখুন। এইবার নাক দিয়ে শ্বাসগ্রহণ করে ডান হাত সোজা সামনে দিয়ে উপরে তুলে ধরুন। বাম হাত নির্দিষ্ট জায়গায় থাকবে। এরপর শ্বাস ছেড়ে ডান হাত নির্দিষ্ট জায়গায় নিয়ে আসুন। পরক্ষণেই বাম হাত সোজা করে শ্বাসগ্রহণ করে উপরে তুলে ধরুন। এবং শ্বাস ছেড়ে বাম হাত নির্দিষ্ট জায়গায় নামান। এমনভাবে ধীরে ধীরে একটা হাত ১০ বার করে অভ্যেস করুন।
৩. ত্রিকোণাসন:
প্রণালী: এই আসনে দুই পায়ের মধ্যে দূরত্ব ৩০ ইঞ্চি রেখে আড়াআড়ি ভাবে দাঁড়ান। দেহ সোজা করে দুই হাত কাঁধ বরাবর আড়াআড়ি তুলুন। এইবার শ্বাসগ্রহণ করুন। এরপর ধীরে ধীরে বামদিকে কাত হবেন। বাম হাত বাম পায়ের হাঁটু থেকে নীচের দিকে নামানোর চেষ্টা করুন। পাশাপাশি ডান হাত সোজা উপরে তুলতে হবে এবং শ্বাসত্যাগ করতে করতে কাত হতে হবে। এরপর ওই অবস্থা থেকে শ্বাসগ্রহণ করে সোজা হয়ে যান এবং শ্বাস ছেড়ে ডান দিকে কাত হবেন যতটা সম্ভব। আবার শ্বাস গ্রহণ করে সোজা হন এবং বাম দিকে কাত হন। এমনভাবে ৬-৮ বার অভ্যেস করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে দু’পায়ের হাঁটু যেন টানটান থাকে।
৪. সেতুবন্ধাসন:
প্রণালী: প্রথমে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ুন। এরপর দুটি হাঁটু মুড়ে নিন। তারপরে কোমর ও পিঠ ওপর দিকে তুলুন। কোমর দুটি হাত দিয়ে ঠেলে রাখবেন। মাথা, ঘাড় এবং কাঁধ মাটিতে থাকবে। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখুন। এইভাবে ৪০ থেকে ৫০ সেকেন্ড আসনে অবস্থিত থাকুন। পরে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসে সামান্য বিশ্রাম করুন। তারপর আবার অভ্যাস করুন। এইভাবে ২-৩ বার আসনটি অভ্যাস করবেন।
৫. ভুজঙ্গাসন:
প্রণালী: প্রথমে পা দু’টো সোজা করে সটান উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ুন। পায়ের পাতার উপর দিকটা যতদূর সম্ভব মুড়ে মেঝেতে রাখতে হবে। দু’হাতের তালু উপুড় করে পাঁজরের কাছে দু’পাশে মেঝেতে রাখুন। এবার পা থেকে কোমর পর্যন্ত মেঝেতে রেখে হাতের তালুর উপর ভর দিয়ে মাথা যতদূর সম্ভব উপরে তুলুন এবং মাথাকে সাধ্যমতো পেছনদিকে বাঁকিয়ে উপরের দিকে তাকান। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে ১০ সেকেন্ড থেকে ১৫ সেকেন্ড এই অবস্থায় থাকুন। এরপর ধীর ধীরে মাথা ও বুক নামিয়ে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ুন। কিছুদিন অভ্যাসের পর হাতের তালুর উপর ভর না দিয়ে বুক ও মাথা উপরে তুলতে হবে। শুধু বুক ও পিঠের উপর জোর দিয়ে মাথা ও বুক উপরে রাখতে হবে এবং হাত দু’টো কাঁধ বরাবর তুলে উঁচু করে রাখতে হবে।
৬. একপদ শলভাসন:
প্রণালী: প্রথমে উপুড় হয়ে মাটিতে শুয়ে পড়ুন। দু’ পা না তুলে প্রথমে ডান পা সোজা করে মাটি থেকে যত দূর সম্ভব তুলুন। বাঁ পা মাটিতে পাতা থাকবে। দশ থেকে পনেরো সেকেন্ড এই অবস্থায় থেকে পা মাটিতে নামান। একইভাবে বাঁ পা তুলে ১০-১৫ সেকেন্ড থেকে তার পর মাটিতে নামিয়ে উপুড় হয়ে শবাসনে বিশ্রাম নিন। স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাসে ৬-৭ বার অভ্যাস করুন।
৭. অর্ধহলাসন:
প্রণালী: চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ুন। এরপর পা জোড়া রেখে সোজা মাটি থেকে তুলুন। হাঁটু সোজা থাকবে এবং ৯০ ডিগ্রি কোণ হবে। এক মিনিট ধরে ২-৩ বার অভ্যেস করুন।
৮. মৎস্যাসন
প্রণালী: প্রথমে সোজা হয়ে দু’পা একসঙ্গে রেখে টান টান হয়ে শুয়ে পড়ুন। হাত থাকুক দু’পাশে। চোখ বুজে আরাম করুন। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক থাকবে। এবার পিঠ বাঁকিয়ে ধনুকের মতো করতে হবে। এর জন্য হাতের কনুই এবং মাথা ভর দিয়ে পিঠ তুলুন। বুক যেন ওপরের দিকে উঠে আসে। মাথার মাঝখান মাটিতে রেখে সাপোর্ট দিন। পা সোজা রাখতে হবে। হাতে ভর দিয়ে কাঁধ মাটি থেকে ওপরে তুলতে হবে। এবার হাত পাশে রাখুন। কাঁধ, পিঠ তুলে রাখতে হবে। এই অবস্থানে অনেকটা মাছের আকৃতির দেখতে লাগবে। গভীরভাবে ধীরে ধীরে শ্বাস নিন। এই অবস্থানে মাথার পেছন দিকে ভার অনুভব করবেন। তিন থেকে চারবার গভীর শ্বাস নিয়ে ধীরে ধীরে সাবধানতার সঙ্গে আগের অবস্থানে ফিরে আসুন। কোনও বাড়তি চাপ নেবেন না।
৯. বক্ষ প্রাণায়াম:
প্রণালী: সুখাসনে বসে দু’হাত হাঁটুর উপরে রাখুন। নাক দিয়ে ধীরে ধীরে শ্বাস নিন। এর ফলে বুক উপরে ঠেলে উঠবে। এবার ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়ুন। এই পুরো প্রক্রিয়াটা ২ মিনিট ধরে করতে হবে।
১০. অনুলোম-বিলোম:
প্রণালী: সুখাসনে বসুন। বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দিয়ে ডান নাকের ছিদ্র বন্ধ করুন এবং বাম নাক দিয়ে ধীরে ধীরে গভীর শ্বাস নিন। নিজের শ্বাস প্রশ্বাসের ওপর লক্ষ রাখুন। ডান নাকের ওপর থেকে ধীরে ধীরে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ সরান এবং ডান হাতের অনামিকা দিয়ে বাম নাক বন্ধ করুন। এর পর ধীরে ধীরে ডান নাকের ছিদ্র দিয়ে শ্বাস ছাড়ুন। ঠিক এই পদ্ধতিতেই ডান নাকের ছিদ্র দিয়ে গভীর শ্বাস নিন। এ সময় অনামিকা দিয়ে বাম নাকের ছিদ্র বন্ধ করে রাখতে হবে। তার পর বাম নাক দিয়ে ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়ুন।
১১. ভ্রামরী গুঞ্জন:
সুখাসনে বসে দু’হাতের আঙুল দিয়ে দু’কানের ছিদ্র ও চোখ বন্ধ করুন। এর পর নাক দিয়ে শ্বাস নেওয়ার পর ভ্রমরের মতো গুঞ্জন করতে করতে নাক দিয়ে শ্বাস ছাড়ুন। কানের পর্দায় এক কম্পন অনুভূত হবে। শ্বাস নিয়ে গুঞ্জন করে শ্বাস ছাড়াকে এক বার বলে। এভাবে পর পর ৮-১০ বার করে বিশ্রাম নিন।
উপকারিতা: উপরিউক্ত প্রত্যেকটি আসন হার্ট এবং ফুসফুসের কর্মক্ষমতা বাড়ানোর জন্য যথেষ্ট। চটজলদি না করে প্রত্যেকটি আসন ও প্রাণায়াম ধীরে ধীরে অভ্যেস করুন এবং বিশ্রাম নিন। সপ্তাহে ৩-৪ দিন এই আসন ও প্রাণায়াম করা যাবে। ভারী খাবার খাওয়ার অন্তত আড়াই ঘণ্টা পর আসন এবং প্রাণায়াম করা উচিত।
অনুলিখনঃ অনির্বাণ রক্ষিত