কাজকর্মের ক্ষেত্রে দিনটি বিশেষ শুভ। নতুন যোগাযোগ ও উপার্জন বৃদ্ধির ক্ষেত্র প্রস্তুত হতে পারে। বিদ্যায় ... বিশদ
১) মডিফাইবাল রিস্ক ফ্যাক্টর: মডিফাইবাল রিস্ক ফ্যাক্টরের মধ্যে পড়ে অতিরিক্ত ধূমপান, অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবন, কায়িক পরিশ্রম না করা, অতিরিক্ত ভাজাভুজি, তেলমশলা জাতীয় খাবার খাওয়া।
২) নন-মডিফাইবাল রিস্ক ফ্যাক্টর: নন-মডিফাইবাল রিস্ক ফ্যাক্টর যে কোনও বয়সেই হতে পারে। পরিবারের কারও হার্টের সমস্যা থাকলে সেখান থেকেও এই সমস্যা হতে পারে।
হাইপারটেনশন বা ব্লাডপ্রেশার :
আমাদের ব্লাডপ্রেশার অনেক সময়ই ওঠা-নামা করে। কখনও কখনও প্রাইমারি হাইপারটেনশনও হয়। কোনওরকম রিস্ক ফ্যাক্টর থেকে সেই হাইপারটেনশন হলে তাকে প্রাইমারি হাইপারটেনশন বলে। ব্লাডপ্রেশারের সঙ্গে ডায়েটেরও সম্পর্ক রয়েছে। ব্লাডপ্রেশার ওঠানামার কারণে অনেক সময় ডায়েটে বদল আনতে হয়। এখন প্রায়ই দেখা যাচ্ছে অনেক কম বয়সেই হার্টের সমস্যায় মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। অতীতে যেমন ৪০ বছর পেরলে হার্টের যত্ন নিতে শুরু করতাম। বর্তমানে ৪০ পেরনোর আগেই আমাদের হার্টের যত্ন নিতে হবে। হার্টের যত্ন নেওয়ার জন্য সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ হল খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ করা।
এছাড়া যদি কারও অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি হয়, স্টেন্ট বসে, বাইপাস সার্জারি হয় তার জন্য রয়েছে একরকম ডায়েট। কারও হার্ট ফেলিওর হলেও ডায়েট পাল্টাতে হবে। তবে এখানে জেনে রাখা দরকার হার্ট ফেলিওর এবং হার্ট অ্যাটাক দুটো এক নয়। হার্ট ফেলিওরের অর্থ যখন হার্টের পাম্পিং ক্ষমতা কমে যায়। হার্ট ফেলিওর হলে বুকের বাম দিকে ব্যথা করবে, পায়ের মধ্যে জল জমতে পারে, শ্বাসকষ্টর সমস্যা দেখা দিতে পারে। হার্ট অ্যাটাক হল হার্টের মধ্যে অক্সিজেন, নিউট্রিয়েন্ট ঠিকঠাকভাবে হার্টের মধ্যে যেতে না পারা। এক্ষেত্রে সময়টা গুরুত্বপূর্ণ। ঠিক সময়ের মধ্যে ইকোকার্ডিওগ্রাম না করলে বিপদ বাড়তে পারে।
ডায়েটের মাধ্যমে হার্টের সমস্যার সমাধান:
ডায়েটের মাধ্যমে হার্টের সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে প্রথমে মাথায় রাখতে হবে কতটা পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা জাতীয় খাবার খাওয়া যাবে। যে সমস্ত কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবার আমরা খাব সমস্তটাই আসবে কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট বা জটিল শর্করা জাতীয় খাদ্য থেকে। সাধারণ কার্বোহাইড্রেট যুক্ত খাবার থেকে বিরত থাকতে হবে। যেমন— বেশি মিষ্টি, চিনি খাওয়া চলবে না। জটিল শর্করা জাতীয় খাদ্য যেমন মরশুমি ফল, ঢেঁকি ছাঁটা চালের ভাত, হাতে গড়া আটার রুটি, ওটস, স্যালাড এই জাতীয় খাবার খেতে হবে। পাউরুটি জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। এছাড়াও খাবারের মধ্যে ডায়েটরি ফাইবার সমৃদ্ধ শাক-সব্জি বেশি পরিমাণে রাখতে হবে। আবার অনেকের ধারণা, হার্টের অসুখ মানে কার্বোহাইড্রেট খাওয়া নিষিদ্ধ। এটা একেবারে ভুল ধারণা। একটা কথা মাথায় রাখতে হবে, কার্বোহাইড্রেটের রেসপিরেটরি কোশেন্ট সবথেকে বেশি, যার মাত্রা ১। গবেষণা বলছে, সল্যুবল ডায়েটরি ফাইবার (যা জলে দ্রবীভূত হয়) যুক্ত খাবার যদি খাওয়া হয় তাহলে ডায়াবেটিস এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা দুটোই নিয়ন্ত্রিত হবে। হায়দরাবাদের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউট্রেশনের একদল বিজ্ঞানীর গবেষণা বলছে, নিয়মিত মেথি খেলে ডায়াবেটিস এবং কোলেস্টেরল অনেকটা নিয়ন্ত্রণে থাকে। মেথির মধ্যে প্রচুর পরিমাণে মিউস্যুলেট থাকে, এছাড়াও পেয়ারার মধ্যে খুব ভালো ডায়েটরি ফাইবার থাকে, যার নাম পেকটিন। মিউস্যুলেট এবং পেকটিন পাকস্থলি থেকে বের হয়ে গ্রহণীতে (ইন্টেস্টাইন) আসা পিত্তলবণের সঙ্গে রক্তের কোলেস্টেরল পরোক্ষভাবে যুক্ত হয়ে কোলেস্টেরলকে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
ডায়েটরি ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার: যে সমস্ত খাবারে ডায়েটরি ফাইবার ভালোরকম পাওয়া যায় তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু খাবার হল—মেথি, জোয়ার, বাজরা, ডাল, ফল, ডাঁটা, শাকসব্জি, ঢেঁকিছাঁটা চালের ভাত, গমের তৈরি রুটি। এই সমস্ত খাবার আমাদের ডায়েটে রাখতে হবে।
হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে প্রোটিন খান: হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে প্রোটিন জাতীয় খাবার খাওয়াটাও জরুরি। যাঁরা আমিষাশী তাঁরা মাছ, লিন মিট চিকেন, ডিম সেদ্ধ খাবেন। নিরামিষাশীরা ছানা, সয়াবিন, রাজমার তরকারি, ডাল এই খাবার থেকে প্রোটিন নিতে পারেন। দুধের মধ্যেও পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন থাকে। যাঁরা হার্টের রোগী তাঁদের অতিরিক্ত ফ্যাট জাতীয় দুধ খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। সেক্ষেত্রে মাখন তোলা দুধ খাওয়া যেতে পারে। পাশাপাশি, ইলিশ মাছও খাওয়া যেতে পারে। এর মধ্যে খুব ভালো পরিমাণে ফ্যাট ও প্রোটিন থাকে। হার্টের রোগীদের জন্য রেডমিট এবং অতিরিক্ত পরিমাণে ডিমের কুসুম খাওয়া কখনওই উচিত নয়।
হার্টের রোগীদের অতিরিক্ত ফ্যাট খাওয়া অনুচিত: ফ্যাট বা চর্বি জাতীয় খাবারকে মূলত তিনভাগে ভাগ করা যায়।
১) মনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট: সর্ষের তেল থেকে খুব ভালো পরিমাণে মনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট পাওয়া যায়। সেটা আমরা ১০-১৫ শতাংশ ডায়েটে রাখতে পারি। কারণ, মনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট আমাদের খারাপ কোলেস্টরলের (LDL) মাত্রা কমাতে এবং ব্লাডপ্রেশারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। এছাড়াও রাইস ব্র্যান তেলও ডায়েটে রাখা যায়।
২) পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট: পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট বলতে বুঝি ওমেগা-৩ এবং ওমেগা-৬ জাতীয় ফ্যাট। এই ফ্যাট মাছের তেলে খুব ভালো পরিমাণে থাকে। যাকে বলে আলফালিনোলেনিক অ্যাসিড। পলি আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট ডায়েটের জন্য ১০ শতাংশ প্রয়োজন। ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড মূলত পাওয়া যায় বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছ থেকে যেমন— সার্ডিন, টুনা, স্যামন। এই জাতীয় মাছ পশ্চিমবঙ্গে সবসময় পাওয়া দুষ্কর। সর্ষের তেল, সয়াবিন তেল, রাজমা থেকেও ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড পাওয়া যায়। মাথায় রাখতে হবে, বাজার চলতি একাধিক ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের ক্যাপসুল বিক্রি হচ্ছে। ওই ক্যাপসুলগুলিকে অভিজ্ঞ ডায়াটেশিয়ান, ডাক্তার এবং কার্ডিওলজিস্টের পরামর্শ ছাড়া খাবেন না। অনেক হার্টের রোগী রক্ত পাতলা করার ওষুধ খেয়ে থাকেন। এছাড়া ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যসিডেরও রক্ত পাতলা করার গুণ আছে। সেই কারণে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়েই ওষুধ খান।
৩) স্যাচুরেটেড ফ্যাট বা সম্পৃক্ত চর্বি : স্যাচুরেটেড ফ্যাট বা সম্পৃক্ত চর্বি ঘরের তাপমাত্রায় জমাট বেঁধে যায়। এই ফ্যাট সর্বাধিক পরিমাণে রেডমিটে থাকে। এছাড়াও থাকে মাখন, ঘি, নারকেল তেল, পাম ওয়েল, বনস্পতি, মার্জারিনে। স্যাচুরেটেড ফ্যাট রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। তাই এই জাতীয় খাবার ডায়েটের মধ্যে কম রাখতে হবে।
বিজ্ঞাপনের প্রলোভনে পা নয়: বাজার চলতি বিজ্ঞাপনে কখনওই পা বাড়াবেন না। আমরা অনেক সময় কোলেস্টেরল ফ্রি বা কোলেস্টেরল ফ্রেন্ডলি তেলের বিজ্ঞাপন দেখতে পাই। উদ্ভিজ্জ তেলের মধ্যে কোলেস্টেরল থাকে না, থাকে প্ল্যান্টস্টেরল বা আর্গোস্টেরল। সুতরাং বিজ্ঞাপনে কান না দিয়ে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বা ডায়েটেশিয়ানের পরামর্শ নিয়ে খাওয়াদাওয়া করুন। কখনওই মার্জারিন এবং বাজার চলতি ট্রান্স ফ্যাটের দিকে পা বাড়াবেন না। অতিরিক্ত তেল, মাখন, ঘি দিয়ে রান্না খাবার এড়িয়ে চলুন।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বা ফ্ল্যাভনয়েড হার্টকে সাহায্য করে কীভাবে?
বিভিন্ন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যেমন ভিটামিন এ, ভিটামিন ই, ভিটামিন সি হার্টের জন্য খুব ভালো। রসুনে আছে অ্যালালাইড সালফাইড, আদায় জিঞ্জারল, পেঁয়াজে অ্যালিসিন—এই উপাদানগুলি হার্টের জন্য খুব ভালো। এছাড়া আপেলের মধ্যে কোয়ার্সোটিন, বেগুনের মধ্যে ন্যাজোনিন থাকে এইগুলি বেশি প্লাক জমাতে দেয় না— এই খাবারগুলিও ডায়েটের মধ্যে রাখা যেতে পারে। তবে গ্রিন টি বেশি খাওয়া উচিত নয়। গ্রিন টি বেশি খেলে কিডনিতে স্টোন হতে পারে। এছাড়াও চিয়াসিড হার্টের জন্য ভালো। টকদই প্রোবায়োটিক হিসেবেও হার্টে ভালো কাজ করে। গোটা মশলাও হার্টের জন্য খুব ভালো। যাঁরা হার্টের রোগী তাঁদের সোডিয়াম খাওয়ার পরিমাণ ঠিক রাখতে হবে। কাঁচা নুন খাওয়া উচিত নয়। হার্ট ফেলিওরের সমস্যায় যাঁরা ভুগছেন তাঁদের জন্য জল খুব উপকারী। হার্টের রোগী অনেক সময় ইডিমা রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। যেমন— পা, পেট ফুলে যাওয়া। বর্তমানে বেশকিছু বাজারচলতি ডায়েট রয়েছে যাদের আমরা বলি ড্যাশ (DASH) ডায়েট। সেই ড্যাশ ডায়েটের গুণাবলি ডায়েটিশিয়ানের সঙ্গে পরামর্শ করে জেনে নেওয়া উচিত। ইন্টারনেট বা কারও পরামর্শ শুনে ডায়েট করা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য আর একটি বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেটি হল বিএমআই (বডি মাস্ক ইনডেক্স) অর্থাৎ ওজন অনুযায়ী কতটা পরিমাণ খাবার খাওয়া যাবে। সেই বিষয়টিও ডায়েটিশিয়ান বলে দেবেন।
কেপিসি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল।
অনুলিখনঃ অনির্বাণ রক্ষিত