কাজকর্মের ক্ষেত্রে দিনটি বিশেষ শুভ। নতুন যোগাযোগ ও উপার্জন বৃদ্ধির ক্ষেত্র প্রস্তুত হতে পারে। বিদ্যায় ... বিশদ
কোন রোগে কী খাওয়া উচিত তা নিয়ে এককথায় বলা একটু মুশকিল। কারণ ডায়েটেটিক্স আর ডিজিজ হাত ধরাধরি করে চলে। নানা রোগে কী পথ্য হওয়া উচিত বা কোন কোন খাবার খাওয়া চলবে না, প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাসে কী কী ডায়েটে থাকা উচিত, ঋতু পরিবর্তনের সময় আমরা যে যে সমস্যায় ভুগি এসব নিয়েই মূলত আলোচনা করব।
আমাদের বাঙালিদের তো কমবেশি রোগব্যাধি লেগেই থাকে। সেই রোগ নিরাময়ের জন্য ওষুধ যেমন দরকার, তেমনই সঠিক পথ্যও প্রয়োজন। আবার বেশ কিছু তথ্য যা আমরা চিরাচরিতভাবে জেনে এসেছি ভালো কিন্তু অনেকসময়ই অপ্রয়োজনীয় সেটা নিয়েও কথা বলতে হবে।
জ্বর-সর্দি-কাশি
সাধারণ জ্বর-সর্দি যেমন হয়, তেমনই আবার অনেকসময় জ্বরের প্রকোপে আমরা মাথা তুলতে পারি না। গা-হাত পায়ে অসহ্য ব্যথা হয়, গলা-বুক জ্বালা করে। খাওয়ায় অরুচি হয়, কিছু খেতেই যেন ভালো লাগে না। এরকম হলে মা-ঠাকুমারা অনেকসময় দুধ সাবু খাওয়ার নিদান দেন। কিন্তু জ্বর পা পেট খারাপ হলে একদমই দুধ সাবু খাওয়া উচিত নয়। কেন? সাবু মূলকন্দ থেকে আসে। দুধ নিঃসন্দেহে স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। কিন্তু দুধ সম্পূর্ণ আহার নয়। ইংরেজিতে যাকে বলে, ব্যালান্সড ডায়েট নয়। কারণ দুধের মধ্যে আয়রন নেই, ভিটামিন সি নেই। ফাইবার নেই। অনেক মিনারেল বা মাইক্রোনিউট্রেন্টও দুধে খুব কম পরিমাণ উপস্থিত থাকে। দুধের থেকে এসব উপাদান ডিমে অনেক বেশি। সেজন্যই আমরা বলে থাকি একটা নির্দিষ্ট কোনও খাবার ব্যালান্সড ডায়েট হয় না। এম্পটি ক্যালরি কথাটা ইতিমধ্যে আমরা সকলেই জেনে গেছি। এটা এমন একধরনের শর্করা জাতীয় খাবার যার মধ্যে শুধু ক্যালরি ছাড়া আর কিছু নেই। এরমধ্যে চিনি যেমন আছে, সাবুও এর মধ্যে আছে। যখন কারও জ্বর হয় তখন অন্ত্রের গায়ে অনেক ধরনের উৎসেচক লেগে থাকে। এদের মধ্যে অন্যতম ল্যাকটেজ উৎসেচক। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই উৎসেচকের উপর আঘাত নেমে আসে। অনেক ধরনের জীবাণু এই উৎসেচকটি খেতে পছন্দ করে। পেটের রোগ হলে জীবাণু প্রথমেই এই ল্যাকটেজ উৎসেচকের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে খেতে শুরু করে। সব শর্করাকেই তো পাচন করতে হয়। এই পাচনক্রিয়ার জন্য দরকার এই উৎসেচক। এই ল্যাকটেজ নষ্ট হয়ে গেলে পেটের অসুখে ভুগতে হয় আমাদের।
জ্বর হলে প্রথমেই রোগীকে যথেষ্ট পরিমাণে তরল জাতীয় খাবার খাওয়ানো প্রয়োজন। শরীরের তাপমাত্রাকে স্বাভাবিক মাত্রায় নামিয়ে আনার জন্য তরলজাতীয় খাবারের গুরুত্ব অপরিসীম।
জ্বরে আক্রান্ত রোগীকে ভিটামিন সি যুক্ত ফলের রস দেওয়া প্রয়োজন। দুর্বল শরীরে শক্তি জোগানোর পাশাপাশি সংক্রমণ প্রতিরোধের সহায়কও হবে। কমলালেবু, আপেল বা আনারস ছাড়া ডাবের জলও দেওয়া যেতে পারে। চিনি ছাড়া এই রস খেতে পারলে সবচেয়ে বেশি উপকার পাওয়া যাবে।
ফলের রসের পাশাপাশি রোগীকে প্রোটিনজাতীয় খাবারও দিতে হবে। এক্ষেত্রে চিকেন স্যুপ দারুণ কার্যকরী। চিকেন স্যুপের সঙ্গে সব্জি দেওয়া গেলে তা থেকে শরীরে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সরবরাহ হবে।
যাঁরা চিকেন খান না, তাঁদের শরীরে অ্যান্টি অক্সিডেন্টের চাহিদা পূরণ করতে বিভিন্ন সবুজ শাকসব্জির স্যুপ দেওয়া যেতে পারে।
ঠান্ডা লেগে সর্দিকাশিজনিত জ্বরে লাল চা অত্যন্ত উপকারী। এক্ষেত্রে চায়ের সঙ্গে আদা থেঁতো করে বা মধু মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে। তবে দুধ চা নৈব নৈব চ।
তরল খাবারের পাশাপাশি রোগীকে নরমজাতীয় খাবারও দিতে হবে। তবে হজমের গণ্ডগোল যাতে না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। পাতলা খিচুড়ি, সুজি এক্ষেত্রে ফলদায়ক হতে পারে।
জ্বর হলে অবশ্যই এড়িয়ে চলতে হবে রাস্তার ফাস্টফুড, অতিরিক্ত ভাজাভুজি বা মশলাদার খাবার।
বোতলবন্দি ফলের রস, সফট ড্রিংক, ক্যানবন্দি বা প্যাকেটজাত মুখরোচক খাবারও এড়িয়ে চলাই বাঞ্ছনীয়।
শিশুদের ক্ষেত্রে—
খেয়াল রাখতে হবে বাড়ির শিশুদের কথাও। কারণ জ্বর হলে শিশুরা একদমই কিছু খেতে চায় না। মুখে স্বাদ আনতে বাড়িতে তৈরি খাবারই দিতে হবে। খুব অল্প তেলে ভাজা পরোটা বা সব্জি মিশিয়ে খিচুড়ি দেওয়া যেতে পারে। শিশুরা চিপস বা পিত্জা খাওয়ার জন্য বায়না করে আর আমরা বড়রাও অনেকসময় তা দিয়ে দিই। এটা একদম মাথায় গেঁথে নিন যে জ্বরের সময় কোনও অবস্থাতেই শিশুকে বাইরের খাবার দেওয়া যাবে না। চাল, ডাল, সব্জি দিয়ে তৈরি করা খিচুড়িতে চিকেন মিশিয়েও খাওয়ানো যেতে পারে। আবার পরোটার সঙ্গেও চিকেন স্ট্যু দিতে পারেন। একদমই ছোট বাচ্চার ক্ষেত্রে অবশ্য চাল-ডালের খিচুড়ি দেওয়াটাই ভালো। কারণ জ্বরের সঙ্গে অনেক সময় পেটখারাপের প্রকোপও বাড়ে। তাই বিশেষত শিশুদের ক্ষেত্রে এদিকটাও মাথায় রাখা জরুরি।
সাধারণ জ্বর বা গা-হাত-পা ম্যাজম্যাজ করলে
জ্বরকে প্রায়শই সাধারণ অসুখ ভেবে ভুল করি। জ্বরের অনেকরকম লক্ষণ হতে পারে। মানে অনেক অন্য রোগের জন্যও জ্বর হতে পারে। তাই চিকিৎসার ভাষায় জ্বর কোনও রোগ নয়, রোগের উপসর্গ মাত্র। আর জ্বরের কারণে গা, হাত-পা ম্যাজম্যাজ করে, মাথাযন্ত্রণাও হয়। দেহের তাপমাত্রা নির্দিষ্ট মানের থেকে বেশি হলে তাকে জ্বর বলে থাকি। দিনের বিভিন্ন সময়ে আমাদের দেহের তাপমাত্রা বাড়ে-কমে। এটা জ্বর নয়। এর জন্য চিকিৎসারও প্রয়োজন হয় না। আবহাওয়ার পরিবর্তন হলে যেমন জ্বর হয়, তেমনই হজমের গণ্ডগোল বা ভাইরাসের সংক্রমণ থেকেও জ্বর হতে পারে। তাই ঠিক কী কারণে জ্বর হচ্ছে সেটা নির্ণয় করা প্রথমে জরুরি।
জ্বর হলে আমাদের মা-ঠাকুমাদের দেখেছি দুধ দিয়ে সাবু বা বার্লি খাওয়াতে। এগুলো খাওয়ানোর কোনও দরকারই নেই। চিকিৎসকের পরামর্শ মতো ওষুধ খাওয়ার পাশাপাশি দেহের সঠিক পুষ্টির চাহিদা বজায় রাখতে হবে। জ্বর হলে অধিকাংশ রোগীর খেতে ইচ্ছে করে না। খাওয়ায় অরুচি হয়। দেহের চাহিদা মতো পুষ্টি বজায় রাখাটা জরুরি।
ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম বা আইবিএস
বাড়ি থেকে খুব সাজগোজ করে বেরচ্ছেন। হঠাৎ পেটটা মোচড় দিয়ে উঠল। ফ্লাইটের টাইম হয়ে যাচ্ছে, ট্যাক্সি বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে— এই সময় মনে হল একবার বাথরুমে না গেলেই নয়! এটাই ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম বা সোজা কথায় পেট খারাপ। এসব সমস্যা এড়াতে অনেকেই হালকা খাওয়ার নিদান দেন। তাতে আপত্তির কিছু নেই। কিন্তু তারমধ্যে একদমই দুধ-সাবুর কম্বিনেশন খাওয়া ঠিক নয়। বরং দই খেতে পারেন। নেহাতই কিছু খেতে না ইচ্ছে হলে বাড়িতে পাতা টক দই আর কর্নফ্লেক্স খেতে পারেন। আর তা না হলে মাছ-ভাত খাওয়াই ভালো।
ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন
এক্ষেত্রে নিজেকে যেমন পরিষ্কার রাখা প্রয়োজন তেমনই সঠিক পথ্য খেতে হবে। যেমন প্রচুর পরিমাণে জল খেতে হবে। ক্র্যানবেরি জুস বা কালোজামের রস এক্ষেত্রে খুব ফলদায়ক।
মেনস্ট্রুয়েশনের সময় ডায়েট
ক্র্যাম্পস বা ডিসমেনোরিয়া হলে এই সময় ব্লিডিং বেশি হয়। আর রক্ত বেরিয়ে যাওয়া মানে শরীর থেকে জল বেরিয়ে যাওয়া। তাই জল বা তরল পদার্থ এইসময় বেশি করে খেতে হবে। চা খেতে পারেন। গ্রিন টি বা ক্যারোমাইল টি মেনস্ট্রুয়াল ক্র্যাম্প কমাতে সাহায্য করে। এই চা মাসল রিলাক্স করতে সাহায্য করে। এবং সবসময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। গ্রিন টি-এর বিষয়ে একটা কথা মনে রাখবেন। এই চা কখনও গরম জলে ফুটিয়ে খাওয়া যায় না। চুল পড়ার সমস্যা, শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে গ্রিন টি। ঈষদুষ্ণ জলে চা পাতা ফেলে পান করতে হয়। গ্রিন টির সঙ্গে দুধ বা চিনি মেশানো যায় না। যে কোনও চায়ের সঙ্গে দুধ বা চিনি না মেশানোই ভালো। গ্রিন টির ক্ষেত্রে একটা বিষয় মনে রাখবেন। যে কাপে চা খাচ্ছেন, সেই কাপেই অন্তত তিন কাপ জল খাবেন, তবেই এই চায়ের সমস্ত উপকারিতা পাওয়া যাবে।
জন্ডিস
জন্ডিস হল লিভারের সমস্যার একটি উপসর্গ মাত্র। জন্ডিস হলে দু’ধরনের বিলিরুবিন টেস্ট হয়— কনজুগেটেড আর নন-কনজুগেটেড বিলিরুবিন। নন-কনজুগেটেড বেশি হলে তাকে বলে হেপাটাইটিস। তবে মাত্রা ১.১-এর বেশি হতে হবে। আর কনজুগেটেড বিলিরুবিন বেশি হলে খুব সম্ভবত আপনার গলব্লাডারে স্টোন হয়েছে। কিংবা গলব্লাডারের অন্য কোনও অসুখ দেখা দিয়েছে। আবার প্যাংক্রিয়াসের সমস্যাও হতে পারে। কনজুগেটেড বিলিরুবিন বেশি থাকলে ফ্যাট জাতীয় খাবার একদম কমিয়ে ফেলতে হবে। অন্যদিকে নন কনজুগেটেড বিলিরুবিন বেশি হলে ফ্যাট জাতীয় খাবার অতটা নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন নেই। জন্ডিস হলে ফ্যাট ফ্রি ব্ল্যাঙ্ক ডায়েট খাওয়ারও প্রয়োজন নেই। কারণ জল ছাড়া সবকিছুতেই ফ্যাট আছে। স্যুপ খাবেন না। এর মধ্যে গ্লুটেন আর কর্নফ্লাওয়ার ছাড়া কিছু নেই। এতে রোগী ডায়ারিয়ায় আক্রান্ত হতে পারে। তার থেকে বরং হালকা খাবার দিন। রোগীকে হালকাভাবে বানানো মাছের ঝোল দিতে পারেন, বড়ির ঝোল দিতে পারেন। নিরামিষ খাবার খাওয়ারও কোনও দরকার নেই। সেদ্ধ বা ফ্যাট ফ্রি খাওয়ার কোনও প্রয়োজন নেই। তবে হ্যাঁ, পাঁঠার মাংস খাবেন তা নয়। অ্যানিমাল প্রোটিন বাদ দেওয়াই ভালো। অর্থাৎ ফ্যাট লেস বা কম ফ্যাট আছে এমন খাবার খান। বেশি করে শাকসব্জি খান। এটা ভাইরাস ঘটিত রোগ। তাই কোনও অ্যান্টিবায়োটিকে কিন্তু জন্ডিস সারবে না।
হাই ব্লাডপ্রেশার বা উচ্চ রক্তচাপ
উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার পিছনে বংশগত একটা কারণ থাকে। অর্থাৎ কারও পরিবারে উচ্চ রক্তচাপের রোগী থাকলে, ওই পরিবারের সুস্থ সদস্যটিকে সতর্ক থাকতে হবে। ৩০ বছর বয়সের পরে প্রতি ছ’মাস অন্তর একবার রক্তচাপ পরীক্ষা করিয়ে দেখতে হবে।
কাঁচা নুন বা রান্নার নুনের মধ্যে কোনও পার্থক্য আছে, এরকম কোনও ব্যাপার নেই। ড্যাশ (ডায়েটারি অ্যাপ্রোচ টু স্টপ হাইপারটেনশন) ডায়েট অনুসারে নুনের পরিমাণ নির্ধারণ করুন। এই বিশেষ ধরনের ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত কী পরিমাণ নুন আপনি খেতে পারবেন তা আপনার ডায়েটেশিয়ানের কাছ থেকে জেনে নেবেন। সেটুকুই আপনার সারাদিনের বরাদ্দ। সেটা রান্নায় বা পাতে যেভাবেই খান না কেন। এছাড়া প্রিজারভেটিভ দেওয়া খাদ্য, যে কোনও ধরনের স্যস খাওয়া কমিয়ে ফেলুন যতখানি সম্ভব। ওজন বাড়তে দেবেন না। নিয়মিত ব্যায়াম বা অন্ততপক্ষে ৩০ মিনিট হাঁটা প্রয়োজন।
ডায়েটের সঙ্গে রক্তচাপের যোগ—
রক্তচাপ বাড়া কমার সঙ্গে সরাসরি জড়িত থাকে সোডিয়াম। আর সোডিয়াম মেলে নুন থেকে। তাই এটা একটা বাচ্চাও বুঝতে পারবে যে নুন বেশি খেলে রক্তচাপ বাড়বে।
খেয়াল করলে দেখা যাবে, রক্তচাপের গণ্ডগোলের সঙ্গে সাধারণত অন্যান্য অসুখও থাকে। উদাহরণ হিসেবে স্থূলত্ব, ডায়াবেটিসের কথা বলা যায়। সাধারণত সংযমী না হয়ে উল্টোপাল্টা খাওয়ার কারণে ওজন বাড়ে। আর ওজন বাড়লে রক্তচাপের ভারসাম্যেরও গণ্ডগোল হয়ে যায়। অতএব দৈহিক উচ্চতা অনুযায়ী কতটা ওজন থাকা বাঞ্ছনীয়, তা বুঝে নিন আগে। ওজন বেশি থাকলে কমান।
ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় ঠিক সময় ব্যবস্থা না নিলে রক্তচাপের ভারসাম্যেরও সমস্যা দেখা দেয়।
মানসিক চাপ একটা বড় বিষয়। আজকাল মানুষের স্ট্রেস কাটাতে রেস্তরাঁয় খাওয়াদাওয়া করা বা মদ্যপান করার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। জীবনযাপনে এমন লাগামছাড়া অভ্যেস আসলে ঘুরিয়ে রক্তচাপ বৃদ্ধির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
আচার, স্যস, প্রিজারভেটিভ দেওয়া নোনতা খাবার নিয়মিত খেলে রক্তচাপ বাড়ার আশঙ্কা থেকেই যায়।
সাধারণ অবস্থায় একজন ব্যক্তি ৫ থেকে ৬ গ্রাম নুন প্রতিদিন খেতে পারেন রান্নায়। তবে উচ্চ রক্তচাপ থাকলে রান্নায় নুনের পরিমাণ অর্ধেক করে দেওয়াই ভালো। আর পাতে কাঁচা নুন একেবারে বাদ দিতে হবে।
বাজার চলতি বিভিন্ন রকমের লো সোডিয়াম লবণ পাওয়া যায়। এটা বিজ্ঞাপনী চমক, এতে বিভ্রান্ত হবেন না। তাতে সোডিয়ামের পরিবর্তে অন্যান্য খনিজ লবণ থাকে, যেমন পটাশিয়াম যা পরোক্ষে আপনার শরীরের ক্ষতি করতে পারে।
শুধু ডায়েট নয়, প্রতিদিন রক্তচাপের ওষুধ খেতে হবে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে নিয়ম মেনে।
বিজ্ঞাপনী চমকে ভুলবেন না
বিজ্ঞাপনের চমক নিয়ে আরও একটু বিশদ বলা প্রয়োজন। রোগী, রোগ আর পথ্যের মধ্যে লেবেল রিডিং খুব গুরুত্বপূর্ণ। যেমন কারও শরীর খারাপ হলেই বা অসুস্থ হলেই অনেকে বাজারচলতি হেলথ ড্রিঙ্ক বা হেলথ সাপ্লিমেন্ট খাওয়ার পরামর্শ দেন। এর কোনও দরকার নেই। যে কোনও অসুখেই আমাদের ধারণা আছে একটা হেলথ ড্রিঙ্ক খেলে বা একটা আপেল বা বেদানা খেলে উপকার হবে। তা ঠিক নয়। দরকার মতো খেতে হবে আয়রন বা প্রোটিন জাতীয় খাবার। তেলের প্যাকেটে যেমন জিরো কোলেস্টেরল লেখা থাকে। কিন্তু প্রাণিজ পদার্থ থেকে তৈরি না হওয়া কোনও জিনিসে কোলেস্টেরল থাকা সম্ভব নয়। এগুলি বিজ্ঞাপনী চমক। তাই লেবেল রিড করুন। প্যাকেটের গায়ে লেখা অতি ক্ষুদ্র জিনিসগুলো খুঁটিয়ে পড়ুন। বুঝতে না পারলে গুগল করুন।
লিক্যুইড ডায়েট বা তরল খাবার
দুই ধরনের লিক্যুইড ডায়েট হয়— ক্লিয়ার ফ্লুইড আর ফুল ফ্লুইড। যে খাবারের কোনও ধ্বংসাবশেষ হয় না তাকে বলে ক্লিয়ার ফ্লুইড। যেমন মুসাম্বির রস করে ছেঁকে নিলে যা পাওয়া যায় তাতে আর কিছু ফেলে দেওয়ার মতো থাকে না। এরকমই ডাবের জল, চায়ের জল সবই ক্লিয়ার ফ্লুইড ডায়েট। ইলেকট্রোলাইটস ব্যালান্স ঠিক রাখতে এই ডায়েট দেওয়া হয়। খেয়াল রাখতে হবে রোগী যেন ৩-৪ দিনের বেশি ক্লিয়ার ডায়েটে না থাকে। যদি রাখতেই হয় তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। আর যে খাবার পুরোপুরি পেস্ট করে বা গলিয়ে খেতে পারবেন, সেটাই ফুল ফ্লুইড ডায়েট। এই ডায়েট কিন্তু সবসময় একজন রোগীকে দেওয়া যেতে পারে।
শেষ কথা : বর্তমানে রোগ সারাতে ডায়েট নিয়ে নানা স্তরের গবেষণা চলছে। বিশেষ করে আইসিইউতে ভর্তি থাকা রোগীর ডায়েট কীভাবে রোগীর সুস্থতা ত্বরান্বিত করতে পারে তা নিয়ে হয়েছে একাধিক গবেষণা। এমনকী হাসপাতালে ভর্তি সাধারণ রোগীকে দ্রুত সুস্থ করে তুলতে যে ডায়েটের ভূমিকা বিরাট তা ইতিমধ্যেই প্রতিষ্ঠিত। সবচাইতে বড় কথা, খাদ্যের মাধ্যমে আমাদের দেহে নানা ধরনের ভিটামিন ও খনিজ প্রবেশ করে যা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। সুতরাং বিভিন্ন অসুখে আক্রান্ত হওয়ার পরেও খাদ্য যে রোগ প্রতিরোধে আমাদের সাহায্য করবে তা বলাই যায়। অতএব রোগে পড়লে খাদ্য গ্রহণে অনীহা প্রকাশ করবেন না। ডায়েটিশিয়ানের পরামর্শ মতো খাবার খান। দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুন।
অনুলিখন: সন্দীপ রায়চৌধুরী