কাজকর্মের ক্ষেত্রে দিনটি বিশেষ শুভ। নতুন যোগাযোগ ও উপার্জন বৃদ্ধির ক্ষেত্র প্রস্তুত হতে পারে। বিদ্যায় ... বিশদ
এমন একটা রাতের সাক্ষী হব বলেই তো কলকাতা থেকে ২১৯৫ কিলোমিটার দূরে ছুটে আসা। পরিকল্পনা ছিল তো অনেকদিন ধরেই, কিন্তু সুযোগ হচ্ছিল না। এবার সেটা হয়ে গেল ডাক্তারদের কনফারেন্সে জয়পুরে যাওয়ার সুযোগ পাওয়ায়। চার দিনের কনফারেন্স শেষ হতেই সকাল দশটা নাগাদ গাড়ি নিয়ে আমরা পাঁচজন বেরিয়ে পড়লাম জয়সলমিরের উদ্দেশে। মরুতে রাত কাটানোর উত্তেজনায় টগবগ করে ফুটছি সবাই। প্রায় ১২ ঘণ্টার জার্নি। তাই আমরা ঠিক করেছি একটানা না গিয়ে নাইট হল্ট করব যোধপুরে। সেটাও প্রায় সাত ঘণ্টার জার্নি। কিন্তু ৪৮ নম্বর ন্যাশনাল হাইওয়ে এত ভালো যে পথের ক্লান্তি যেন গায়েই লাগছে না। জয়পুর শহর ছাড়িয়ে ঘণ্টা তিনেকের মধ্যেই আমরা আজমির শরিফ পার হয়ে এলাম। টি ব্রেকের জন্য আধ ঘণ্টার বিরতি শেষে আবার গাড়ি ছুটল। চারপাশে ধু-ধু প্রান্তর। বাড়িঘর, লোকজন খুবই কম। আগে থেকেই পরিকল্পনা করে এসেছি, যদি বিকেল চারটের মধ্যে যোধপুরে ঢুকতে পারি তাহলে ওখান থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দূরে মন্দির নগরী ওশিয়া একবার ঘুরে দেখে আসব।
লাঞ্চের পরে ড্রাইভারকে বললাম জোরে গাড়ি ছোটাতে। ন্যাশনাল হাইওয়ে ধরে ৯০ কিলোমিটার বেগে গাড়ি ছুটতে লাগল। প্রায় ৩৬৭ কিলোমিটার পথ উজিয়ে এসে আমরা বিকেল চারটের মধ্যেই পৌঁছে গেলাম যোধপুরে। আলোচনা করে ঠিক হল, এতদূর যখন এসেছি, তখন ওশিয়া একবার ঘুরেই যাব। যোধপুর থেকে প্রায় ঘণ্টা দেড়েক লাগল ওশিয়া পৌঁছতে। গাড়ি থেকে নেমে প্রায় আধ কিলোমিটার হেঁটে সিঁড়ি দিয়ে উঠতে লাগলাম শ্রী শচ্চিয়া মাতাজি মন্দির দর্শন করার জন্য। বয়সজনিত কারণে সকলেরই হাঁটু নড়বড়ে, তবুও মাতাজির টানে ধীর পায়ে উঠে একসময় পৌঁছে গেলাম একদম পাহাড়ের মাথায়। মন্দিরের বিভিন্ন দেওয়ালে নানা ধরনের সূক্ষ্ম কাজের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে দেবদেবীদের জন্মকাহিনি, নানা অলৌকিক ঘটনা। দেখে আমাদের বিষ্ণুপুর বা আঁটপুরের টেরাকোটা মন্দিরের বিভিন্ন অলঙ্করণের কথা মনে পড়ে গেল। মাতাজির মুখের আদল অনেকটা তিরুপতি মন্দিরের বাবা ভেঙ্কটেশের মতো মনে হল। এতটা পথ উজিয়ে এসে এত কষ্ট করে পাহাড় বেয়ে উঠে মন্দির দর্শন করে ঠিক যেন মন ভরল না। তবে নীচে নেমে স্পেশাল চা খেয়ে মন-প্রাণ দুটোই যেন জুড়িয়ে গেল। এগলাম গাড়ির দিকে। সন্ধ্যা নামছে। পরের দিন পূর্ণিমা। চাঁদমামা এখনও তেমন করে তার আলো ছড়াতে শুরু করেনি। গাড়ি যেখানে রেখেছিলাম, তার ঠিক পাশেই ছিল দুটো ছোট মন্দির। অল্প চাঁদের আলোয় ভীষণ মায়াবী লাগছিল তাদের। সেখানে একপ্রস্থ ফোটো সেশনের পর আমরা রওনা হলাম যোধপুরের উদ্দেশে। রাত সাড়ে আটটায় পৌঁছলাম আমাদের হোটেলে। মেহেরণগড় দুর্গের ঠিক পাদদেশে ভারী সুন্দর আমাদের হোটেল। হোটেলের চারতলার ওপেন এয়ার রুফ টপ রেস্টুরেন্টে বসে আলোকমালায় সজ্জিত মেহেরণগর ফোর্ট দেখতে দেখতে ডিনার সারলাম।
পরের দিন সকাল দশটায় আমাদের যাত্রা শুরু হল জয়সলমিরের উদ্দেশে। যেতে হবে প্রায় ২৮৫ কিলোমিটার পথ। সময় লাগবে সাড়ে পাঁচ ঘণ্টার মতো। গাড়ি ছুটছে থর মরুভূমির মধ্যে দিয়ে। রাস্তার দু’পাশ একেবারে শুনশান। যেদিকে চোখ যায় ধু-ধু বালি আর বালি। মাঝে মাঝে কিছু কাঁটাঝোপ, কয়েক কিলোমিটার বাদে বাদে দু-চারটি ঘর চোখে পড়ছে। রাস্তাঘাটে গাড়ির সংখ্যা খুব কম, লোকজনও নেই। হঠাৎ একদল উট চোখে পড়ল, খুব মন্থর গতিতে হেঁটে যাচ্ছে। দেখলাম দুটো ময়ূর। মরুভূমির দেশ জয়সলমির। শীতকালে যেমন জাঁকিয়ে শীত পড়ে, গরমকালে তেমনই কাঁঠাল পাকা গরম। এখানকার মানুষ খুব কষ্টসহিষ্ণু। পথে পেরিয়ে এলাম ভারতের পারমাণবিক বিস্ফোরণের পরীক্ষাস্থল পোখরান।
বেলা তিনটে নাগাদ প্রবেশ করলাম সোনার শহর জয়সলমিরে। রাস্তার উপরেই বিরাট তোরণ, লেখা রয়েছে— ‘ওয়েলকাম টু গোল্ডেন সিটি।’ শহরটির প্রধান আকর্ষণ অবশ্যই কেল্লা, জয়সলমির ফোর্ট। সত্যজিৎ রায়ের শ্যুটিংয়ের পর যার নাম হয়ে যায় সোনার কেল্লা। সম্পূর্ণ বেলেপাথরে তৈরি এই কেল্লায় সূর্যের আলো এসে পড়লে কাঁচা সোনার মতোই তা চকচক করতে থাকে। এর আগেও এসেছি এই শহরে, দেখেছি ফোর্ট। কিন্তু এবারের প্রধান আকর্ষণ থর মরুভূমিতে রাত্রিবাস। শহর থেকে প্রায় ৪৫ কিলোমিটার এগিয়ে যেতে হবে আমাদের। তরুণ ড্রাইভার ‘আচ্ছা হোটেল লে যাউঙ্গা’ বলে শহর ছাড়িয়ে প্রায় দশ কিলোমিটার আমাদের নিয়ে চলে এসেছে। আর তো পারা যাচ্ছে না! অবশেষে একটি ফ্যামিলি রেস্টুরেন্টের সামনে গাড়ি থামাল ড্রাইভার। মরুভূমির মধ্যে পরিষ্কার, ছিমছাম একটি হোটেল। ন্যাশনাল হাইওয়ের দুদিকেই সব মিলিয়ে গোটা চারেক এই ধরনের রেস্টুরেন্ট চোখে পড়ল এখানে। চটপট খেয়ে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম আমরা।
আরও কুড়ি কিলোমিটার এগনোর পর গাড়ি বাঁক নিল বাঁদিকে। কিছুটা এগতেই মাঝে মাঝে চোখে পড়তে লাগল তাঁবু পাড়া। একটা বেশ বড় গোলাকার জায়গা ঘিরে সারি সারি গোটা কুড়ি তাঁবু। বাহারি তাদের রং। প্রবেশপথে সুসজ্জিত গেটে ঝুলছে সেই টেন্ট রিসর্টের নাম। মোবাইলে জিপিএস অন রেখেছিলাম। তেনার নির্দেশ মতো পিচ রাস্তা ছেড়ে আমরা এবার ঢুকে পড়লাম মরুভূমির ভিতরে। কোথাও জনমনিষ্যি নেই। শুধু দু’পাশে বাবলা কাঁটার ঝোপঝাড়। মন কেমন করে উঠল। এ কোথায় এলাম রে বাবা! ছবিতে তো দেখেছিলাম বেশ লাক্সারি রিসর্ট। এই শুনশান অজপাড়া গাঁয়ে রিসর্ট দূরে থাক, কোনও ঘরবাড়িই তো চোখে পড়ছে না। ফোন করলাম। নির্দেশ পেলাম, কাছাকাছি চলে এসেছেন। আর কয়েক মিনিট এগিয়ে বাঁদিকের সরু রাস্তায় ঢুকলেই দেখবেন আমাদের রিসর্ট।
মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই যেন স্বপ্ন সত্যি হল। গাড়ি থেকে নেমে গেট দিয়ে ভিতরে ঢুকেই দেখলাম, কয়েক একর জায়গা নিয়ে মরুভূমির মধ্যে কী চমৎকার টেন্ট রিসর্ট! নামটিও রাজকীয়। বাঁদিকে রিসেপশন, আড্ডার জায়গা। ডানদিকে সান্ধ্য মজলিশের ব্যবস্থা, একটু এগিয়ে বিশাল ক্যান্টিন। আর তারপর ছড়িয়ে ছিটিয়ে অন্তত গোটা কুড়ি সুদৃশ্য তাঁবু।
পাশাপাশি তিনটি তাঁবুতে ঢুকে পড়লাম আমরা। ভিতরে এলাহি আয়োজন। বিশাল একটি ডাবল বেড ছাড়াও একপাশে একটি সিঙ্গল বেডও রয়েছে। তার মানে তিনজন অনায়াসে থাকা যায়। একটি টি টেবিল, মালপত্র রাখার জন্য আরেকটি ছোট টেবিল, দুটো চেয়ার–কী নেই এই ছোট্ট জায়গায়! রয়েছে একটি এয়ারকুলারও। তাঁবুর বাইরে অ্যান্টি চেম্বারের মতো ব্যবস্থা, যেখানে রয়েছে বাথরুম টয়লেট। সেখান থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে এয়ারকুলার চালিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম। আধঘণ্টা বাদে কেয়ারটেকার সূরযের ডাকাডাকি। জিপ এসে গেছে আমাদের নিয়ে ডেজার্ট সাফারি করাবে বলে। সঙ্গে এসেছে চা-বিস্কুট। মিনিট পনেরোর মধ্যে সবাই রেডি হয়ে হুড খোলা জিপে উঠে বসলাম। রিসর্ট ছাড়িয়ে জিপ ছুটল সানসেট পয়েন্টের দিকে। মিনিট পনেরোর এই সাফারিতে জিপ লাফাতে লাফাতে একবার বালিয়াড়ির উপরে উঠেছে, একবার নীচে নেমেছে। সবাই শক্ত করে উপরের রড ধরে আছি, ধরে আছি পরস্পরকেও। তা নাহলে যে ছিটকে পড়ব মরুভূমিতে। আমাদের শরীরের জয়েন্টগুলো তো খুলে যাওয়ার মতো অবস্থা হল। তবু তার মধ্যেই হাসিঠাট্টা করে যাচ্ছি, মোবাইলে ভিডিও তুলে যাচ্ছি।
অবশেষে মরুভূমির মধ্যে বেশ সমতল একটি জায়গায় জিপ থামল। আমরাও স্বস্তির নিশ্বাস ফেললাম। জিপ থেকে নেমে ঝুপড়ি মতো এক চায়ের দোকানের সামনের খাটিয়ায় বসে একটু জিরিয়ে নিলাম। আশপাশে আমাদের মতো আরও অনেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কেউ কেউ সামনের দিকে এগিয়ে গেছেন সানসেট দেখবেন বলে। অপেক্ষা করতে লাগলাম উট সাফারির জন্য। মিনিট কুড়ি বাদে আমাদের জন্য বরাদ্দ তিনটি উট এসে হাজির। উটের পিঠে চেপে বসাটা একটা বিরাট কায়দার ব্যাপার। একবার সামনে, একবার পিছনে দেহটাকে হেলিয়ে অ্যাডজাস্ট করতে হয়। সোনার কেল্লা সিনেমায় জটায়ুরূপী সন্তোষ দত্তর উটে ওঠা এবং নামার সেই অপূর্ব দেহভঙ্গিমার কথা মনে পড়ে গেল। উটের পিঠে বসে আছি প্রায় কোনও সাপোর্ট ছাড়াই। আমার হাতে কোনও লাগাম নেই। আমাদের তিনটি উটেরই গাইড হল বছর বারোর তিনটি বাচ্চা। তারা নিজেদের মধ্যে গল্প করছে, আমাদের ভাবভঙ্গি দেখে হাসাহাসি করছে। ইচ্ছে করে উঁচু-নিচু পথ ধরে হাঁটাচ্ছে উটগুলোকে। আর আমি প্রতি মুহূর্তে আতঙ্কে ভুগছি, এই বুঝি পড়ে গেলাম। মিনিট পনেরোর এই যন্ত্রণা যাত্রা শেষ করে উট থেকে নামলাম সবাই, তারপর চায়ের কাপ হাতে করে খাটিয়াতে বসলাম।
সূর্য অস্তাচলে। বিদায়ী সূর্যের গোলাপি আভা পশ্চিমের আকাশ জুড়ে। আমরা অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে আছি সেই দিকে। হঠাৎ মনে হল ফটো তুলতে হবে তো, ভিডিও করতে হবে। ভারতের পশ্চিমাঞ্চল বলে এখানে সানসেট হয় প্রায় পৌনে সাতটায়। এক অদ্ভুত দৃশ্য চোখে পড়ল, পশ্চিম আকাশে সূর্যাস্ত এবং একইসঙ্গে পুবের আকাশে চন্দ্রোদয়। মিনিট কুড়ির মধ্যে আগুনে আভা ছড়াতে ছড়াতে একসময় টুপুস করে সূর্য ডুবে গেল। আজ ভরা পূর্ণিমা। এখানে থাকার প্ল্যানটা যে পূর্ণিমা দেখেই করেছিলাম। অল্পক্ষণের মধ্যেই বিশাল চাঁদ তার আভা ছড়াতে ছড়াতে পুবের আকাশের অনেকটাই দখল করে নিল। আমরাও সান্ধ্য মজলিশে যোগ দেব বলে আবার জিপে উঠে বসলাম। মিনিট দশেকের মধ্যেই আমরা এসে পৌঁছলাম অন্য একটি রিসর্টে। সেখানে ঢোকার মুখে রাজস্থানি রমণীরা ফুল ছিটিয়ে কপালে টিকা পরিয়ে আমাদের স্বাগতম জানালেন। বেজে উঠল রাজস্থানি কাড়া-নাকাড়া। নিজেদের কেমন ভিআইপি মনে হচ্ছিল। এসে বসলাম মজলিশের আসরে। অনেকটা জায়গা জুড়ে গোল করে বসার জায়গা। এক প্রান্তে সুন্দর করে সাজানো ছোট্ট একটি স্টেজ। মাড়োয়ারিদের দোকানে যেমন গদি-তাকিয়া-বালিশ থাকে, এখানেও ঠিক তাই। হেলান দিয়ে বেশ জুত করে বসলাম। এপাশ-ওপাশ তাকিয়ে দেখলাম বেশ কয়েকজন বিদেশিও মজলিশে হাজির হয়েছেন। একটু বাদে আমাদের পরিবেশন করা হল চা, কফি এবং চিকেন পকোড়া। সেগুলোর সদ্ব্যবহার করতে না করতেই শুরু হল রাজস্থানি নাচাগানা। মাদকতাময় রাজস্থানি লোকগীতি শুনতে বেশ লাগল। একটি ফায়ার প্লেস ছিল আসরের মাঝখানে। সেখানে আগুন জ্বালানো হল। এক তরুণী রাজস্থানি শিল্পী সেই আগুন ঘিরে নানারকম (ঘুমর, কালবেলিয়া) লোকনৃত্য পরিবেশন করলেন। অসাধারণ তাঁর পারদর্শিতা। জমে উঠল আসর। কেটে গেছে প্রায় ঘণ্টা দুয়েক। ইতিমধ্যেই চাঁদ উঠে এসেছে অনেকটাই। খোলা আকাশের নীচে বসে রয়েছি আমরা, ঠান্ডাও বাড়ছে। মাথার ওপরে পূর্ণিমার চাঁদ। একেবারে মায়াময় পরিবেশ। অসাধারণ অনুভূতি হল। এবার জিপে করে ক্যাম্পে ফেরার পালা। ডিনারের আয়োজন যে সেখানেই।
ওখানেও একপ্রস্থ আড্ডা হল। আমাদের তরুণ ড্রাইভারের ভীষণ শখ আমাদের রাজস্থানি লোকনৃত্য শেখানোর। বারবার কানের সামনে এসে ঘ্যানঘ্যান করাতে আমিই নেমে পড়লাম আসরে। রিসর্টের কর্মচারী তার এক সহকারীকে নিয়ে সাউন্ড সিস্টেমের ব্যবস্থা করে লোকগীতি চালিয়ে দিতেই শুরু হল নৃত্য প্রশিক্ষণের আসর। এবার ডিনারের পালা। হরেক রকম খাবার, তার মধ্যে রয়েছে বিখ্যাত ডাল বাটি চুরমাও। বিকেলে অবশ্য উটের দুধের চা-ও খেয়েছি।
রাত বাড়ছে, বাড়ছে ঠান্ডাও। আর দেরি না করে তাঁবুতে এসে কম্বল গায়ে দিয়ে শুয়ে পড়লাম। শুয়ে শুয়ে শুনলাম শিয়ালের ডাক। পরের দিন সকালে জানলাম, এখানে আশপাশে মরু শিয়াল আছে। মাঝরাতে একবার ঘুম ভাঙল, তাঁবুর বাইরে এসে দাঁড়ালাম। অসাধারণ দৃশ্য। চরাচর ভেসে যাচ্ছে স্নিগ্ধ চাঁদের আলোয়। কেমন যেন নেশা ধরিয়ে দেয়। এই অসাধারণ সৌন্দর্য দেখার জন্যই যেন কত যুগের অপেক্ষায় ছিলাম আমি। মনের মধ্যে গুনগুন করে উঠল রবি ঠাকুরের গানের সেই বিখ্যাত লাইন— ‘মহাবিশ্বে মহাকাশে মহাকাল মাঝে...।’
পরের দিন সকালবেলা ঘুম ভাঙল পাখির কলকাকলিতে। একটু দূরে এক বাবলা গাছ ভর্তি শুধু পাখি আর পাখি। দেখতে অনেকটা আমাদের চড়াইয়ের মতো, কিন্তু একটু সবুজ রঙের। সকালে দুটো ময়ূর দেখলাম নিশ্চিন্তে ঘুরে বেড়াচ্ছে উঠোনে। ব্রেকফাস্ট সেরে রিসর্টের বিল মিটিয়ে বেরিয়ে পড়লাম জয়পুর শহরের উদ্দেশে। জয়সলমিরে এসেছি আর সোনার কেল্লায় একবার ঢুঁ মারব না, তা কী কখনও হয়! তাছাড়া আবার তো ফিরে যেতে হবে সেই যোধপুরেই। সেখানেই আজ রাত্রিবাস। আগামীকাল কলকাতায় ফেরার ফ্লাইট যে সেখান থেকেই।
প্রয়োজনীয় তথ্য: জয়সলমিরে আসতে পারেন নানাভাবেই। জয়পুর, বিকানির, যোধপুর, উদয়পুর ট্যুর শেষ করে সেই সব জায়গা থেকে ট্রেনে এখানে আসতে পারেন। আবার সরাসরি কলকাতা থেকেও আসতে পারেন। যদি প্লেনে যেতে চান তাহলে আপনাকে নামতে হবে যোধপুর এয়ারপোর্টে। সেখান থেকে ২৮৫ কিলোমিটার দূরে জয়সলমির। যেতে পারেন ট্রেনে কিংবা প্রাইভেট গাড়ি ভাড়া করে। জয়পুর শহরে হোটেলের ছড়াছড়ি। মধ্যবিত্তর বাজেট হোটেলও অনেক। যদি মরুভূমিতে থাকতে চান, নানা ক্যাটাগরির রিসর্ট পেয়ে যাবেন। দু’জনের থাকা, রাতে ডিনার এবং সকালে ব্রেকফাস্ট, যতবার খুশি চা এবং মিনারেল ওয়াটার, সান্ধ্য মজলিশে নৃত্যগীত দর্শন এবং স্নাক্স, জিপ সাফারি, ক্যামেল সাফারি— সব ধরে চার থেকে ছয় হাজার টাকা। অনলাইনেই বুক হয়। দামদর করে নেবেন। ওরা ফিফটি পার্সেন্ট অ্যাডভান্স পাঠাতে বলেন, বাকিটা ওখানে গিয়ে দিলেই হয়।