মনোরম স্থানে সপরিবারে ভ্রমণ ও আনন্দ উপভোগ। সম্পত্তি সংরক্ষণে সচেষ্ট না হলে পরে ঝামেলায় পড়তে ... বিশদ
অনুচ্চ গম্বুজ বেষ্টিত বহু স্মৃতিস্তম্ভ ও স্মৃতিফলক যুক্ত বিশাল এই ইউরোপীয় কবরস্থানটি বহরমপুর তথা মুর্শিদাবাদের ইতিহাস নিয়ে আগ্রহীদের অবশ্য গন্তব্য। সরকারিভাবে গোরস্থানটিকে সুন্দরভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হলেও, পর্যটকরা এখানে আসেন না। তবে এটি এই জেলার অন্যতম ঐতিহাসিক কীর্তি বলেই দাবি করেন ইতিহাসবিদরা। বাবুলবোনার রেসিডেন্সি সমাধিক্ষেত্রে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্রিটিশ নাগরিক এবং সামরিক ব্যক্তিদের কবর রয়েছে। যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ক্যাপ্টেন জেমস স্কিনার (মৃত্যু ১৭৭৩ সালে), জর্জ টমাস (মৃত্যু ১৮০২ সালে), হেনরি ক্রেটন (মৃত্যু ১৮০৭ সালে)। ক্রেটন ছিলেন গৌড়ের ধ্বংসাবশেষের অন্যতম আবিস্কার কর্তা। এছাড়া ইসাবেলা সেনইড (মৃত্যু ১৮৫৬ সাল) এখানে শায়িত আছেন। যিনি লেফটেন্যান্ট এফ পি ব্যালির (সপ্তম রেজিমেন্ট) স্ত্রী। এছাড়া প্রাক্তন জজ রেভারেন্ড এ ডব্লিউ ওয়ালশের (মৃত্যু ১৮৭১ সালে) দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছে এখানে।
অধ্যাপক সমিত মণ্ডল বলেন, মুর্শিদাবাদের নাম শুনলেই খালি মনের মধ্যে নবাবদের নবাবি কাহিনি, প্রেম, যুদ্ধ, গুপ্তহত্যা, রাজনৈতিক চক্রান্ত, বেইমানি, আত্মত্যাগ এবং বন্ধুত্বের কাহিনি ভেসে ওঠে। কিন্তু তার পাশাপাশি বহু কাহিনি অবহেলায় অনাদরে চলে যায় বিস্মৃতির অন্তরালে। বাবুলবোনা সমাধিক্ষেত্রের ব্যাপারটাও ঠিক সেরকম। মুর্শিদাবাদ বেড়াতে এলে এখানেও মানুষের ঢু মারা উচিত।
জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, বেশিরভাগ মানুষই মুর্শিদাবাদ মানে ভাবেন শুধুই হাজারদুয়ারি। যারা বাইরে থেকে ঘুরতে আসেন যাঁরা, তাঁরাও শুধুই হাজারদুয়ারি ও আশেপাশের কিছু জায়গা ঘুরে চলে যান। মুর্শিদাবাদবাসীও অনেকেই জানেন না কোথায় কোথায় কী রয়েছে। বাবুলবোনার এই কবরস্থানটিতে তদানিন্তন বহু ইংরেজ সাহেবের কবর রয়েছে। সরকারি তরফে যথেষ্ট যত্ন নেওয়া হয়, পরিচর্যাও হয়। তবে মানুষ আসে না।
স্থানীয় বাসিন্দাদের আক্ষেপ, ঐতিহাসিক গুরুত্ব থাকলেও প্রচারের অভাবে এই বাবুলবোনার রেসিডেন্সিয়াল কবরস্থানের কথা জানেনা অনেকেই। তাঁদের দাবি, কোনও বিশেষ দিনে নাকি কবরস্থানে এলে গা ছমছম করে। এমন গা ছমছমে পরিবেশ উপভোগ করতে বহরমপুরের এই কবরখানা কিন্তু ভ্রমণের উপযুক্ত জায়গা হতেই পারে।
বহরমপুরের বাসিন্দা মতিউর রহমান বলেন, বহরমপুর বাস স্ট্যান্ডে নেমে পায়ে হেঁটেই যাওয়া যায় এখানে। বহরমপুর শহরের ট্রেকার স্ট্যান্ডের পিছনেই এই কবরখানা। আর যাঁরা বহরমপুর কোর্ট স্টেশন থেকে আসবেন তাঁরা স্টেশনে নেমে একটা রিকশ বা টোটো ভাড়া করে সরাসরি সেখানে হাজির হতেই পারেন। এই জায়গায় পর্যটকের আনাগোনা বাড়লে, বেশকিছু দোকানও গড়ে উঠতে পারে। নিজস্ব চিত্র