পারিবারিক সম্পত্তি ভাগ-বাটোয়ারার প্রচেষ্টায় সাফল্য পাবেন। ব্যবসায় লগ্নি বৃদ্ধির সম্ভাবনা । শরীর একপ্রকার থাকবে। ... বিশদ
তালডাংরা-বিষ্ণুপুর ভায়া নাকাইজুড়ি রাস্তার ধারে জঙ্গলের শেষ প্রান্তে ফকিরডাঙা গ্রাম। সেখানেই তপনবাবুর মাটির বাড়ি। তাঁর স্ত্রী এবং সপ্তম শ্রেণিতে পড়া ছেলে ও চতুর্থ শ্রেণির পড়ুয়া এক মেয়ে রয়েছে। ১০ বছর আগে একটি অগ্নিকাণ্ডে মারাত্মক জখম হন। বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসকরা উরুর অংশ থেকে তাঁর দুই পা বাদ দিয়ে দেন। ওই অবস্থায় দুই সন্তানকে নিয়ে অকুল পাথারে পড়েন শিল্পী। সংসার চালাতে দিনমজুরি শুরু করেন। তবুও ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া ছাড়িয়ে দেননি। পরবর্তীকালে তপনবাবু প্রতিবন্ধী ভাতা এবং শিল্পী লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকা পাওয়ায় কিছুটা সুরাহা হয়। রেশনের চাল ফুটিয়ে দু’টো খাবারের সংস্থান হয়। কিন্তু সংসারের বাকি খরচ চালাতে হিমশিম খেতে হয়। স্ত্রীর কষ্ট দেখে তপনবাবু উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন। ট্রাই সাইকেলে করে উঠোন ছেড়ে পাড়ায় আঙিনায় আসতে থাকেন। তখনই দেখেন গ্রামের সকলেই আলু বসাচ্ছেন। ওই অবস্থায় তপনবাবু স্থির থাকতে পারলেন না। গ্রাম থেকে প্রায় দু’ কিলোমিটার দূরে উপরশোল গ্রামে অন্যের ১০ কাঠা জমি লিজে নিয়ে আলু বসানোর পরিকল্পনা করেন। যেমন ভাবনা, তেমনি কাজ। ট্রাক্টরে চাষ দেওয়া হলেও আল পরিষ্কার করতে তপনবাবু নিজের হাতে কোদাল তুলে নেন। কোমরের উপর ভর করে আলের মাটি কাটা দেখে গ্রামবাসীরা কার্যত তাজ্জব বনে যান। এরপর আলু বীজ কাটা থেকে আরম্ভ করে তা বসানো পর্যন্ত স্ত্রীর সঙ্গে হাতে লাগিয়ে করেন। তবে সেচ দেওয়ার কাজ নিজে হাতে না পারলেও জমির আলে বসে স্ত্রীর কাজে তদারকি করেন।
তপনবাবু বলেন, বাংলার বাড়ি প্রকল্পের তালিকায় আমার নাম রয়েছে। তবে এখনও পর্যন্ত টাকা ঢোকেনি। টাকা পেলে বাড়িটা একটু ভালো করে তৈরি করার ইচ্ছা রয়েছে। সেজন্য কষ্ট হলেও অন্যের জমি লিজ নিয়ে আলু বসিয়েছি।
শিল্পীদেবী বলেন, স্বামীর দুর্ঘটনার পর দুই নাবালক সন্তানকে নিয়ে আমি চিন্তায় পড়ে যাই। একদিকে স্বামীর দেখাশোনা করা, অন্যদিকে সংসার চালাতে দিনমজুরি করেছি। পরবর্তীকালে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, প্রতিবন্ধী ভাতা এবং রেশনের চাল পাওয়ায় অনেকটাই সুরাহা হয়। দু’টো নুনভাত তো তুলে দিতে পারি স্বামী-সন্তানদের মুখে।