নিজস্ব প্রতিনিধি, আসানসোল: শনিবার সকালে ট্রাক্টর উল্টে বধূর মর্মান্তিক মৃত্যু ও তাঁর স্বামী ও সন্তান গুরুতর জখম হওয়ার উত্তাল হল দুর্গাপুর। পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃতের নাম রনেত পারভিন(২৫)। দুর্গাপুরের মেনগেটের কাছে নিউ স্টিল পার্ক মোড়ে ওই দুর্ঘটনা ঘটে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, পুলিসের তাড়া খেয়ে ইটবোঝাই ট্রাক্টরটি বেপরোয়া গতিতে মেনগেট অভিমুখ থেকে টাউনশিপের দিকে আসছিল। স্টিল পার্ক রোড ধরে পালাতে গেলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যায়। সেখানেই ছেলেকে নিয়ে স্বামীর সঙ্গে বাইকে চেপেছিলেন ওই গৃহবধূ। ইটবোঝাই ট্রাক্টর চাপা পড়ায় ঘটনাস্থলেই ওই বধূর মৃত্যু হয়। মর্মান্তিক দুর্ঘটনা দেখে এলাকার বাসিন্দারা উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। লিঙ্করোডের উপর থাকা পুলিসের একটি অস্থায়ী ছাউনি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। পুলিসের সঙ্গে উত্তেজিত জনতার ধস্তাধস্তি হয়। রাস্তার উপর বাঁশ বেঁধে অবরোধ করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিক্ষোভ চলতে থাকে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, পুলিস এখন নিয়ম করে বিভিন্ন গাড়ি থেকে টাকা তোলে। সেকারণেই এই দুর্ঘটনা। আসানসোল দুর্গাপুর পুলিস কমিশনারেটের ডিসি অভিষেক গুপ্তা বলেন, দুর্ঘটনায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। পুরো বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। দুর্গাপুরের লিঙ্ক রোড অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা। ডিএসপি মেন গেটের সঙ্গে দুর্গাপুর টাউনশিপের সংযোগ করেছে। ডিএসপি কারখানার শ্রমিকদের জন্য এই রাস্তা তৈরি করলেও এখন হাজার হাজার মানুষের যাতায়াতের প্রধান ভরসা। এই রাস্তা দিয়ে প্রতিনিয়ত বড় লরি, ডাম্পার ও ট্রাক্টর যাতায়াত করে। অভিযোগ, এই রাস্তাতেই পুলিসকে বিভিন্ন গাড়ি থেকে টাকা তুলতে দেখা যায়। গতবছরও পাশেই বালিবোঝাই একটি ট্রাক্টর এক ডিএসপি কর্মীকে পিষে দেয়। ওই দুর্ঘটনার পরই সিটু, আইএনটিইউসি সহ বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন রাস্তা অবরোধ করেছিল। পুলিসের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে রাস্তার উপর থাকা একটি পাকা বাড়ি ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছিল ডিএসপির শ্রমিক ও সাধারণ মানুষ। এদিনও যেন সেই ঘটনারই পুনরাবৃত্তি।
স্থানীয় বাসিন্দা শেখ রসিদ বলেন, নিউ স্টিল পার্কের বাসিন্দা শেখ সাবির পুত্রসন্তানকে ডাক্তার দেখিয়ে ওষুধ নিয়ে বাইক নিয়ে মোড়ে দাঁড়িয়েছিলেন। সেইসময় পুলিসের তাড়া খেয়ে একটি ট্রাক্টর অত্যন্ত দ্রুতগতিতে আসে। তাঁদের বাইকে চাপা দিয়ে উল্টে যায় গাড়িটি। পুলিস এই এলাকা থেকে নিয়মিত টাকা তোলে। ঘটনার পরই তুমুল বিক্ষোভ শুরু হয়। ট্রাক্টর ভাঙচুর এমনকী আগুন লাগানোরও চেষ্টা হয়। পাশাপাশি বাঁশ ও ত্রিপল দিয়ে তৈরি পুলিসের অস্থায়ী চৌকি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। প্রথমে ওয়ারিয়া ফাঁড়ির পুলিস ও ট্রাফিক পুলিস পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে এলে তাদের সঙ্গে বিক্ষুব্ধ জনতার ধস্তাধস্তি হয়। পুলিসের সামনেই ইট নিয়ে ট্রাক্টর ভাঙতে দেখা যায়। পরে বিশাল পুলিস বাহিনী এসে মারমুখী জনতাকে শান্ত করলেও লিঙ্ক রোড অবরোধ করে বিক্ষোভ চলতে থাকে। এলাকার বাসিন্দা মহম্মদ গুলশান, অসীম মিশ্রদের দাবি, পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এই রাস্তায় ভারী গাড়ির যাতায়াত বন্ধ করতে হবে। পুলিসের টাকা তোলার জন্যই এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটল।
আইএনটিইউসি নেতা রজত দীক্ষিত বলেন, পুলিসের এই ভূমিকা ও ডিএসপি কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় ওই রাস্তা এখন মারণফাঁদে পরিণত হয়েছে। সিটু নেতা বিশ্বরূপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, অবিলম্বে বিষয়টি নিয়ে উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের হস্তক্ষেপ করা প্রয়োজন।