যে কোনও কাজকর্মে সকালের দিকে বিশেষ উন্নতির যোগ। বিকেলের দিকে অবশ্য কিছু বাধা আসতে পারে। ... বিশদ
সপ্তাহ ছয়েক আগে ওই গ্রামের শ্রীকান্ত বল্লভ এবং সুস্মিতা বল্লভের এক পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। পরিবারের পক্ষ থেকে জানা গিয়েছে, জন্মানোর পর থেকেই শিশুটি নানা শারীরিক সমস্যায় ভুগছিল। সপ্তাহ খানেক আগে থেকে সেইসব সমস্যা প্রকট হয়ে ওঠে। কন্যা সন্তানের পর পুত্র সন্তানের জন্ম হয়েছিল। তাই শিশুটিকে সুস্থ করে তুলতে মরিয়া হয়ে উঠেন বাবা-মা। বিভিন্ন চিকিৎসককে দেখিয়েছিলেন। কিছুটা সুস্থও হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু শুক্রবার সন্ধ্যায় হঠাৎই শিশুটি সাড়াশব্দ বন্ধ করে দেয়। মায়ের দুধও খেতে পারেনি। পাড়াতেও সেই সংবাদ ছড়িয়ে যায়। অনেকেই ভিড় করেন।
শনিবার সকালেই মৃতদেহ সৎকারের জন্য প্রতিবেশীরা উদ্যোগ নেন। কিন্তু মৃত শিশুর বাবা-মা তাঁদের সন্তান মারা গিয়েছে, তা বিশ্বাস করতে রাজি ছিলেন না। অন্ধ বিশ্বাসে অবিচল বাবা-মা সবার কথা উপেক্ষা করেন। শিশুর দেহ সৎকার করা যাবে না বলে আপত্তি তোলেন। প্রতিবেশীদের উদ্দেশ্যে ওই শিশুর বাবা মা জানান, তাঁদের সন্তান মারা যায়নি। সাময়িকভাবে নিস্তব্ধ হয়েছে। ঈশ্বরের প্রতি আস্থা রয়েছে তাঁদের, প্রার্থনা করলে তিনিই সন্তানের প্রাণ ফিরিয়ে দেবেন। সেই মতো শুরু হয় ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে প্রার্থনা।
শ্রীকান্তবাবু বেশ কিছু মানুষকে অন্য গ্রাম থেকে ডাক পাঠিয়ে দিনরাত প্রার্থনা শুরু করেন। এদিকে শিশুর মৃতদেহে পচন তীব্র হতে শুরু করে, দুর্গন্ধ ছড়াতে শুরু করে চারপাশে। তবুও নিঃশব্দে বসে আছেন বাবা-মা ও পরিজনরা। মৃত শিশুকে ঘিরে টানা প্রার্থনাও চলছে। লক্ষ্মীপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য তাপস হাজরার বাড়ি ওই গ্রামেই। তিনি বলেন, ‘শনিবার থেকে আমরাও বারবার মৃত শিশুর দেহ সৎকারের কথা বলে আসছি। কিন্তু শিশুর বাবা-মায়ের বিশ্বাস ভাঙাতে পারিনি। তাঁরা তাঁদের সিদ্ধান্তে অবিচল ছিলেন।’
পরিস্থিতি জটিল হতে শুরু করে। সোমবার দুপুরেও মৃতদেহ সৎকার না হওয়ায় খবর যায় স্থানীয় প্রশাসনে। বিডিও সঙ্গে সঙ্গে পুলিসে খবর দেন। পুলিস গিয়ে মৃত শিশুর বাবা-মাকে পরোক্ষে চাপ দিতেই তাঁরা সৎকারে রাজি হতে বাধ্য হন।
শ্রীকান্তবাবু বলেন, ‘আমি ধর্মপথে চলি, আর আমরা এমন কোনও খারাপ কাজ করিনি যার জন্য আমাদের সন্তান এভাবে আমাদের ছেড়ে চলে যাবে। সেজন্যই ছেলেকে বাঁচানোর জন্য প্রার্থনা শুরু করেছিলাম। কিন্তু প্রশাসনের চাপে আমাদের চেষ্টা সফল হল না। আমাদের বিশ্বাস, আরও কিছুক্ষণ প্রার্থনা করলে আমার সন্তান আবার তার মায়ের বুক থেকে দুধ টেনে খেত।’