যে কোনও কাজকর্মে সকালের দিকে বিশেষ উন্নতির যোগ। বিকেলের দিকে অবশ্য কিছু বাধা আসতে পারে। ... বিশদ
শহরের নামোপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় এলাকার জনপ্রিয় শিক্ষক পানুবাবুর স্কুল নামেই পরিচিত ছিল একসময়। ১৯২১সালে প্রতিষ্ঠিত এই স্কুল শুরু থেকেই একটি ভাড়াবাড়িতে চলত। তবে, ১৯৬৪-’৬৫ সাল নাগাদ স্কুলটি চলে আসে ভাগাবাঁধপাড়া দুর্গা মন্দিরে। সেই থেকে দুর্গা মন্দিরেই চলছে পঠনপাঠন। তবে, একসময় স্কুলের পড়ুয়ার সংখ্যা এত বেশি ছিল যে একসঙ্গে মন্দিরে বসার জায়গা পেত না। ১৯৬৪-’৬৫ সালেই একটি স্কুল ভেঙে দু’টি হয়। একটি হয় নামোপাড়া বালক প্রাথমিক বিদ্যালয়, অন্যটি নামোপাড়া বালিকা প্রাথমিক বিদ্যালয়। বালিকা স্কুলটি সকালে এবং বালক স্কুলটি বেলায় চলত। একসময় যে স্কুলে পড়ুয়াদের জায়গা দেওয়া সম্ভব হতো না বর্তমানে দু’টি স্কুল মিলিয়ে পড়ুয়া সংখ্যা মাত্র ৫৪জন।
বালক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের টিচার ইনচার্জ শিবশঙ্কর মঙ্গল বলেন, পড়ুয়ার সংখ্যা কমে যাওয়ায় ১০১৯সাল থেকে দু’টি স্কুলই সকালে হচ্ছে। আমাদের স্কুলে মোট ৩৪জন পড়ুয়া। তিনজন শিক্ষক। তবে একজন বর্তমানে ছুটিতে রয়েছেন। বালিকা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের টিচার ইনচার্জ বনশ্রী পতি জানান, বর্তমানে পড়ুয়া সংখ্যা মাত্র ২০জন। দু’জন মাত্র শিক্ষিকা। একজন সম্প্রতি দু’বছরের জন্য ট্রেনিংয়ে গিয়েছেন। প্রাক প্রাথমিক থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়াদের তাঁকে একাই পড়াতে হয়। দু’জনই জানান, স্কুলের এই দূরবস্থার ব্যাপারে তাঁরা সর্বত্র জানিয়েছেন। তবে এব্যাপারে যে এখনও কোনও পদক্ষেপ হয়নি তা মন্দিরের সামনে গেলেই স্পষ্ট হয়ে যায়।
স্কুলের নিজস্ব ভবন না থাকায় কোনও শৌচাগার নেই। শৌচকর্ম করতে শিক্ষক-শিক্ষিকারা মন্দিরের পাশে এক প্রতিবেশীর বাড়িতে যান। মিড ডে মিলের রান্নাঘর নেই। একটি টিনের চালাতেই রান্না হয়। মন্দিরে পানীয় জল, বিদ্যুতের ব্যবস্থা নেই। গ্রীষ্মকালে নাভিশ্বাস ওঠার জোগাড় হয়। বর্ষায় এই মন্দির আবার গোরু, ছাগল, কুকুরের ‘নিরাপদ’ আশ্রয়স্থল হয়ে ওঠে! তখন নিত্যদিন পশুর বিষ্ঠা পরিষ্কার করতে হয় শিক্ষক-শিক্ষিকাদেরই। পুজোর প্রস্তুতিতে মহালয়ার আগে থেকে আবার মন্দিরে ক্লাস হয় না। তখন ক্লাস হয় নামোপাড়া চ্যাটার্জিপাড়া স্কুলের বিল্ডিংয়ে। সেই বিল্ডিংয়ে আবার তিনটি স্কুল একসঙ্গে চলে।
অভিভাবক চুনু সিনহা, সঞ্জয় বাউরি বলেন, একটা শতাব্দীপ্রাচীন স্কুলের নিজস্ব ভবন থাকবে না, এটা মানা যায় না। এব্যাপারে সরকার সম্পূর্ণ উদাসীন। প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান রাজীবলোচন সরেন বলেন, এধরনের একাধিক স্কুলই আমাদের নজরে রয়েছে। সমস্যার সমাধানের সবরকম চেষ্টা করা হচ্ছে। মন্দির থেকে প্রায় ৫০মিটার দূরেই বিজেপি বিধায়ক সুদীপ মুখোপাধ্যায় ওরফে কাল্টুবাবুর বাড়ি। তিনি বলেন, আমি নিজে ব্যক্তিগতভাবে স্কুলের ভবন তৈরির চেষ্টা করেছি। কিন্ত এই সরকার যতদিন থাকবে, কোনও উন্নতি হবে না। গোটা শিক্ষা ব্যবস্থাটাকেই শেষ করে ফেলেছে এরা।