সংবাদদাতা, বোলপুর: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আঁকা ছবি সাধারণ মানুষকে দেখার সুযোগ করে দিল বিশ্বভারতী। প্রতিষ্ঠাতার সৃষ্টি ও শিল্পকর্ম নিয়ে শান্তিনিকেতনের নন্দনে প্রদর্শনীর আয়োজন করল বিশ্বভারতীর কলাভবন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের হেরিটেজ সেল। সেখানে কলাভবনের নন্দন মিউজিয়ামের সংগ্রহে থাকা রবি ঠাকুরের নিজের হাতে আঁকা মৌলিক ও দুষ্প্রাপ্য ৮০টি ছবি থাকবে প্রদর্শনীতে। আগামী ২৯ নভেম্বর এই প্রদর্শনীর উদ্বোধন হবে। চলবে ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য বিনয়কুমার সরেন। শনিবার প্রেস বিবৃতিতে এ কথা জানিয়েছেন বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত জনসংযোগ আধিকারিক আতিগ ঘোষ। এ খবর জানাজানি হতেই শিল্প অনুরাগী ও রবীন্দ্রপ্রেমী মানুষজনের মধ্যে খুশির হাওয়া। শিল্প ও সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথের যা অবদান, তা নিয়ে নিরন্তর গবেষণা করে চলেছেন রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞরা। নিজের জীবদ্দশার বিভিন্ন সময়ে গান, কবিতা, ছোটগল্প, উপন্যাস যেমন লিখেছেন, তেমনই সৃষ্টির মধ্য দিয়ে নিজের শিল্প সত্তার আধুনিক ভাবনা সারা বিশ্বে মেলে ধরেছিলেন। তাঁর আঁকা কয়েক হাজার ছবির অধিকাংশই রবীন্দ্রভবনের স্ট্রংরুমে সংরক্ষিত রয়েছে। বিশ্বভারতী সূত্রে জানা গিয়েছে, সেখানে প্রায় পাণ্ডুলিপি সহ রবীন্দ্রনাথের আঁকা ১৭০০-র বেশি ছবি রয়েছে। কলাভবনের প্রতিষ্ঠাকালে ছাত্রছাত্রীদের শেখানোর উদ্দেশ্যে নানা সময়ে ভিন্ন ভিন্ন বিষয়েও তিনি ছবি এঁকেছিলেন। সেই ছবির সংখ্যাও একশোর বেশি। সেগুলি বর্তমানে কলাভবনের নন্দন আর্ট গ্যালারির স্ট্রংরুমে সুরক্ষিত রয়েছে। তার মধ্য থেকে নির্বাচিত ৮০টি ছবি প্রদর্শনীর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কলাভবন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের হেরিটেজ সেল। স্বভাবতই রবীন্দ্র অনুরাগী মানুষজনের কাছে এটা অনেক বড় পাওয়া। তবে, রবীন্দ্রনাথের শিল্পকর্মের প্রদর্শনী বিশ্বভারতীতে এবারই প্রথম, তা নয়। ২০১১ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রতিভা পাতিল যখন শান্তিনিকেতনে এসেছিলেন, তখন রবীন্দ্রনাথের আঁকা ছবির প্রদর্শনী করেছিল কলাভবন কর্তৃপক্ষ। সেটাই শেষবার। ১৩ বছর পর ফের কবিগুরুর সৃষ্টি সাধারণ মানুষকে দেখার সুযোগ করতে চলেছে কলাভবন কর্তৃপক্ষ।
এই প্রদর্শনীর দায়িত্বে রয়েছেন কলাভবনের স্বনামধন্য অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক আর শিবকুমার। প্রদর্শনী প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রবীন্দ্রনাথের মৌলিক ও দুষ্প্রাপ্য শিল্পকর্ম ও ছবি থাকবে এই প্রদর্শনীতে। নিজের জীবদ্দশায় বিভিন্ন অ্যাবস্ট্র্যাক্ট, ল্যান্ডস্কেপ, পোর্ট্রেট, হিউম্যান ফিগার, জীবজন্তুর ছবি এঁকেছিলেন। সেগুলি বিষয়বস্তু অনুসারে সাজানো হবে। এই ছবিগুলি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ, সময়োপযোগী আধুনিক ভাবনার। ছাত্রছাত্রীরা তা দেখলে অনেক কিছু শিখতে পারবে। এ খবরে অত্যন্ত আনন্দিত রবীন্দ্রভবনের স্পেশাল অফিসার নীলাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, রবীন্দ্রনাথের আঁকা ছবির নিজস্ব শৈলী রয়েছে। তিনি ছবিতে নানান রঙের ব্যবহার করতেন। গুরুদেবের আঁকা ছবিতে নিজস্ব একটি ভাষা রয়েছে, যেগুলো দেখলেই বোঝা যায় এগুলো তাঁর আঁকা। অত্যন্ত আধুনিক চিন্তাভাবনা লুকিয়ে রয়েছে তাঁর ছবিতে। এই ধরনের দুষ্প্রাপ্য ছবির প্রদর্শন ক্ষেত্রে প্রচুর নিয়ম-কানুন ও শর্ত রয়েছে। সেই বাধা কাটিয়ে কলাভবন ও হেরিটেজ সেল এই প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে, এটা অত্যন্ত গৌরবের ব্যাপার। ছাত্রছাত্রীরা প্রভূত উপকৃত হবে। কবিগুরুর আঁকা ছবি।