ব্যবসা ও পেশায় ধনাগম ভাগ্য আজ অতি উত্তম। বেকারদের কর্ম লাভ হতে পারে। শরীর স্বাস্থ্য ... বিশদ
শীতের মরশুম শুরু হতেই পুরুলিয়ার বাঘমুন্ডির মুখোশ গ্রাম চরিদায় আনাগোনা শুরু হয়েছে পর্যটকদের। সেই দলে রয়েছে ভ্লগাররাও। মুখোশ গ্রামের ভিডিও তৈরি করে আপলোড করছেন ইন্টারনেটে। কীভাবে মুখোশ তৈরি হয়, কোন মুখোশের কত দাম, মুখোশ শিল্পীর ফোন নম্বর সহ নানান তথ্য থাকছে সেই ভিডিওতে। মুহূর্তেই তা পৌঁছে যাচ্ছে হাজার হাজার সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীর ফোনে। পুরুলিয়ার বাইরের জেলার নতুন প্রজন্মের অনেকেই চরিদার নাম শোনেননি আগে, ভ্লগারদের চোখ দিয়ে তাঁরা চিনছেন চরিদাকে। পুরুলিয়া ভ্রমণে এলে ট্যুর প্ল্যানে অবশ্যই থাকছে চরিদা। ক্রমেই বাড়ছে পরিচিতি। লাভের মুখ দেখছেন চরিদা শিল্পীরা।
মুখোশ শিল্পীরা নিজেরাই বলছেন, ভ্লগারদের সৌজন্যে যেমন চরিদায় পর্যটকদের আনাগোনা বেড়েছে, তেমনই বিক্রিও বেড়েছে। পর্যটকরা যেমন চরিদায় এসে মুখোশ কিনছেন, তেমনই অনলাইনেও অর্ডার আসছে। অর্থাৎ, দু’ দিক থেকেই বিক্রিবাটা বাড়ছে। পুজোর সময় শুধুমাত্র সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিডিও দেখে বহু শিল্পীর সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন পুজো উদ্যোক্তারা। যেমন, মুখোশশিল্পী রাজেন সূত্রধর বলছিলেন, বহু ভ্লগার এসে ভিডিও করে নিয়ে যান। তাঁরা যখন সেই ভিডিও ফেসবুক, ইউটিউবে আপলোড করেন, তখন আমাদের দোকানের নাম, ফোন নম্বরও জুড়ে দেন। ভিডিও দেখে অনেকেই যোগাযোগ করেন। আর এক মুখোশ শিল্পী শুভদীপ সূত্রধর বলছিলেন, শুধু বাংলা না, রাজ্যের বাইরে থেকেও অর্ডার আসে। যাঁরা চরিদা কোনওদিন আসেননি, শুধুমাত্র সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিডিও দেখে তাঁরাও মুখোশের অর্ডার করছেন। আরেক শিল্পী চাঁদ সূত্রধর বলেন, এবারের পুজোতে মণ্ডপসজ্জার জন্যও বহু পুজো উদ্যোক্তা যোগাযোগ করেছিলেন।
মুখোশ শিল্পীরা জানাচ্ছিলেন, কলকাতা থেকে প্রায়শই ঘর সাজানোর জন্য মুখোশের অর্ডার আসে। তখন মুখোশ ভালো করে প্যাকিং করে বাঘমুন্ডি থেকে কলকাতাগামী বসে তুলে দেওয়া হয়। ক্রেতারা ধর্মতলায় এসে সংশ্লিষ্ট বাস থেকে তা সংগ্রহ করে নেন। এভাবেই চড়িদার ছৌ নাচের মুখোশ এখন রাজ্য বা দেশের গণ্ডি ছাপিয়ে বিদেশের বাড়ির বৈঠকখানাতেও পৌঁছে গিয়েছে। প্রসঙ্গত, প্রচলিত জনশ্রুতি অনুযায়ী বাঘমুন্ডির ভূস্বামী রাজা মদনমোহন সিংদেও প্রায় ১৬০ বছর আগে বর্ধমান জেলা থেকে এই সূত্রধর কারিগর নিয়ে এসেছিলেন রাজবাড়ির প্রতিমা তৈরির জন্য। তাঁদের বংশধরেরাই দীর্ঘদিন ধরে এই কাজ করে যাচ্ছেন। তবে, বাম আমলে দীর্ঘ সময় ভৌগলিক ও সামাজিক দিক থেকে বিছিন্ন ছিল চড়িদা। তবুও যে গুটিকয়েক পর্যটক আসত, মাওবাদী পর্বে তাও বন্ধ হয়ে যায় চড়িদায়। যদিও রাজ্যে পালবদলের পর থেকে চরিদার বাসিন্দাদেরও ভাগ্যের চাকা ঘুরতে শুরু করেছে ধীরে ধীরে।