সংবাদদাতা, হলদিয়া: কালীপুজোর মণ্ডপে আদিবাসীদের শিকার উৎসবের থিম ফুটিয়ে তুলে এবার দর্শনার্থীদের নজর কেড়েছে সুতাহাটার প্রয়াস ওয়েলফেয়ার সোসাইটি। মণ্ডপ প্রাঙ্গণজুড়ে আধো অন্ধকারে গা ছমছমে পরিবেশ। গভীর জঙ্গল থেকে শিকার করে আনার পর একদিকে আগুন জ্বালিয়ে মৃত পশু সেঁকে নিচ্ছে আদিবাসীরা। অন্যদিকে, একদল আদিবাসী পুরুষ ও মহিলা বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে মেতেছে নাচ-গানে। ধামসা, মাদল, টামাক, তুমদা’র আদলে নানা বাদ্যযন্ত্রের সমাবেশ। সেই বাদ্যযন্ত্রগুলির মিলিত আবহ সুর বেজে চলেছে নেপথ্যে। কালীপুজোর মণ্ডপ দর্শনে এসে দর্শনার্থীরা কয়েক মুহূর্তের জন্য গহীন অরণ্যে পৌঁছে যাবেন। আদিবাসীদের শিকার উৎসব জীবন্ত হয়ে উঠেছে প্রয়াসের মণ্ডপে। মুহূর্তেই মনে পড়বে অযোধ্যা পাহাড়ের শিকার উৎসবের ছবি। আদিবাসীদের শিকারের নানা অস্ত্র দিয়ে তৈরি হয়েছে মণ্ডপের প্রেক্ষাপট। কোনও কোনও আদি জনগোষ্ঠীর মধ্যে বাড়ির দুয়ারে শিকার করে আনা মৃত পশুর মুখের কঙ্কাল সাজিয়ে রাখার রীতি রয়েছে। মূল মণ্ডপের সামনে তেমনই একটি বুনোমহিষের মুখ দিয়ে সাজানো হয়েছে। বিশাল একটি বুনো হাতি পুজো মণ্ডপে প্রবেশের সময় শুঁড় উঁচিয়ে স্বাগত জানাচ্ছে দর্শনার্থীদের। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পুজোর উদ্বোধন করেন প্রাক্তন সাংসদ ও আইকেয়ার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান লক্ষ্মণচন্দ্র শেঠ। এছাড়াও ছিলেন মানবাধিকার সংগঠনের রাজ্যনেত্রী মানসী দে শেঠ, আইকেয়ারের সম্পাদক আশিস লাহিড়ি প্রমুখ। লক্ষ্মণবাবু আলোর উৎসবে হলদিয়াবাসীকে শান্তি ও সম্প্রীতি রক্ষার বার্তা দিয়েছেন। হলদিয়া পুরসভার ১নম্বর ওয়ার্ডে সুতাহাটা বাজার এলাকায় মাত্র এক কিলোমিটারের মধ্যে ১০-১২টি বড় আকারে পুজো হয়। থিমের মণ্ডপসজ্জা ও চারদিনের উৎসবে ভিড় জমান দর্শনার্থীরা। এবছর সবার নজর টেনেছে প্রয়াসের থিমের মণ্ডপসজ্জা।
পুজো কমিটির সম্পাদক বিশ্বনাথ দাস বলেন, সুতাহাটার গোপালপুরের স্থানীয় লক্ষ্মীনারায়ণ ডেকরেটর থিমের মণ্ডপ সাজিয়েছে। গ্রামের শিল্পীদের নিয়ে কাজ করে চমক দিয়েছেন শিল্পী গোবিন্দ দাস। এদিন বিকেলে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মাধ্যমে দীপাবলি উৎসবের সূচনা হয়েছে। ২৭তম বর্ষে পুজোর বাজেট পাঁচ লক্ষ টাকা। শোভাযাত্রায় খোল করতাল নিয়ে চার শতাধিক মহিলা ও পুরুষ অংশ নেন। ছিলেন খো খো সহ বিভিন্ন খেলাধুলোয় জাতীয় পর্যায়ের খেলোয়াড়রাও। প্রয়াসের দুই কর্ণধার সুবিমল দাস ও প্রীতিভূষণ অধিকারী বলেন, শুক্রবার বিকেলে মায়ের ভোগপ্রসাদ বিতরণ করা হবে দর্শনার্থীদের। এছাড়াও শুক্র ও শনিবার দু’দিন ধরে সন্ধ্যায় বিভিন্ন ধরনের প্রশ্নোত্তর প্রতিযোগিতা ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে। অনুষ্ঠানে স্থানীয় শিল্পীরাই নাচ-গান করবেন। তাঁরা বলেন, প্রয়াস মূলত সামাজিক কাজের জন্য সুতাহাটায় একটি পরিচিত সংস্থা। স্বাস্থ্য শিবিরের আয়োজন, খেলাধুলোর প্রতিযোগিতা সহ বিভিন্ন কর্মসূচি চলে বছরভর।