প্রায় সম্পূর্ণ কাজে আকস্মিক বিঘ্ন আসতে পারে। কর্মে অধিক পরিশ্রমে স্বাস্থ্যহানির আশঙ্কা। ... বিশদ
১৮৯০ সালের ওই ঘটনার পর আর কখনও নরবলি হয়নি। তবে আজও পাঁঠা বলি হয় পুজোর রাতে। মুসলিম যুবক নিজামের এনে দেওয়া ফুলেই পুজো হয় মায়ের। ভোগের আয়োজনও করেন তিনি। শোল ও বোয়াল মাছের রান্না করা পদে ভোগ দেওয়া হয় মাকে। খিচুড়ি নয়, দেবীর সামনে নিবেদন করা হয় সাদা ভাত। সঙ্গে পাঁচরকম ভাজা, তরকারি, চাটনি, পায়েস, মিষ্টি। পুজো হয় তন্ত্রমতে। কারণবারি দিয়ে স্নান করানো হয় মাকে। পুজোয় অংশ নেন কাছেই ডেঙ্গুয়াঝাড় চা বাগানের আদিবাসীরা। মনস্কামনা পূরণে পায়রা, হাঁস উৎসর্গ করেন তাঁরা। সঙ্গে আনেন জিলিপি, বাতাসা, চিঁড়ে, দই। ভোগে থাকে সেসবও।
জলপাইগুড়ির রাজা দর্পদেব রায়কত আদিবাসীদের নিয়ে গোশালা মোড়ে জঙ্গলের মধ্যে এই পুজো শুরু করেন। তখন পুজোর রাতেই প্রতিমা তৈরি হতো। পরদিন ভোরের আলো ফোটার আগেই প্রতিমা বিসর্জন হয়ে যেত। পরে এই পুজোতে যোগ দেন দেবী চৌধুরানি। ময়নাগুড়িতে তিস্তা নদীর চরে ঢুসা বান্দাবাড়ি এলাকায় দেবী চৌধুরানির ধনভাণ্ডার ছিল। বার্নিশ ঘাট থেকে বজরায় চেপে তিস্তা দিয়ে জলপাইগুড়ি আসতেন তিনি। শিকারপুরে ভবানী পাঠকের ডেরায় যাওয়ার পথে ঘুরে যেতেন গোশালা মোড়ে রুকরুকা নদীর পাড়ে এই মন্দিরে। লুটের সম্পদ বিলিয়ে দিতেন আদিবাসীদের মধ্যে। প্রবীণরা বলেন, তখন রুকরুকার সঙ্গে যোগ ছিল করলা নদীর। আর করলার সঙ্গে সংযুক্ত ছিল তিস্তার। এই পথেই নিয়মিত যাতায়াত ছিল দেবী চৌধুরানির।
দেবী চৌধুরানি শ্মশানকালী মন্দির পরিচালন কমিটির সম্পাদক দেবাশিস সরকার বলেন, কমিটির উদ্যোগে একটি সেবাকেন্দ্র চলে। মহম্মদ নিজাম সেখানেই পড়াশোনা করে বড় হয়েছে। আগে ওর বাবা মহম্মদ চান্দু দেবীর পুজোর জন্য রোজ ফুল জোগাড় করে আনতেন। এখন নিজামের উপর ওই কাজের ভার। দেবীর ভোগ রান্না করার জন্য লোক রয়েছে। কিন্তু নিজাম সব আয়োজন করে। মুসলিম পরিবারটি পুজোর সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত।
রেকর্ড বলছে, দেবী চৌধুরানির এই মন্দিরের পুজোয় পাতু দাস নামে এক ব্যক্তিকে বলি দেওয়া হয় ব্রিটিশ আমলে। সেই অপরাধে ফাঁসি হয় মন্দিরের সাধক নয়নের। এরপর অনেকদিন বন্ধ ছিল পুজো। পরে অমলেন্দু মিত্র ওরফে সুকু নামে এক ব্যক্তি ঘনজঙ্গলে ঘেরা মন্দির চত্বরে এসে থাকতে শুরু করেন। নিজের মতো করে মাকালীর পুজো করতেন তিনি। ওই ব্যক্তি মারা যাওয়ার পর ফের বন্ধ হয়ে যায় পুজো। অবশেষে ২০০৩ সালে কমিটি গড়ে শুরু হয় মন্দিরের রক্ষণাবেক্ষণ। তারপর থেকে এখনও পুজো বন্ধ হয়নি।