নিজস্ব প্রতিনিধি, শিলিগুড়ি: তিস্তা কিছুটা শান্ত। জলস্তর নেমেছে। স্রোতের তীব্রতাও কম। কিন্তু, ফুঁসছে মহানন্দা নদী। কার্শিয়াং পাহাড়ে বৃষ্টির জেরে রবিবার সকালে মহানন্দার জলস্তর প্রায় বিপদসীমার কাছ দিয়ে প্রবাহিত হয়। এই অবস্থায় পাহাড় ও সমতলে বিক্ষিপ্তভাবে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া দপ্তর। এনিয়ে সিঁদুরে মেঘ দেখছেন নদী তীরবর্তী বাসিন্দারা। তাঁদের একাংশ ঘরের আসবাবপত্র নিরাপদ জায়গায় সরাচ্ছেন। ইতিমধ্যে ময়দানে নেমেছে প্রশাসন। 
শিলিগুড়ির মহকুমা শাসক অবধ সিঙ্ঘাল বলেন, আবহাওয়া সহ নদীর গতিপ্রকৃতির উপর নজর রাখা হচ্ছে। প্রতিটি ব্লকের আধিকারিক ও কর্মীদের সতর্ক করা হয়েছে। সিভিল ডিফেন্স ভলান্টিয়ারদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। বিপর্যয় মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে প্রশাসন। 
সিকিমে প্রবল বর্ষণের জেরে আগ্রাসী রূপ নেয় তিস্তা নদী। টানা চারদিন পাহাড় ও সমতলে ত্রাস চালিয়ে তিস্তা এদিন কিছুটা শান্ত। নদীর জলস্তর নামায় কিছু জায়গায় পাড় ভাঙন দেখা দিলেও তেমন বিধ্বংসী নয়। স্রোতের সেই তীব্রতাও নেই। এমন প্রেক্ষাপটে এদিন সকালে আচমকা আগ্রাসী হয়ে ওঠে শিলিগুড়ির ‘লাইফ লাইন’ মহানন্দা নদী। ঢেউয়ে নদীর তীরবর্তী গ্রাম ও বস্তির বাসিন্দারা আঁতকে ওঠেন। স্থানীয়দের বক্তব্য, জলস্তর বাড়ায় নদী ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে। নদীতে তীব্র স্রোত। জলে পা দিয়ে দাঁড়ানো যাচ্ছে না। আর একটু জল বাড়লেই বসতি এলাকায় ঢুকবে জল। 
সেচদপ্তর সূত্রের খবর, সিকিম পাহাড়ে বৃষ্টির তীব্রতা কিছুটা কমেছে। পাশাপাশি পাহাড়ে বিভিন্ন জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের এবং তিস্তা ও মহানন্দা ব্যারেজের লকগেট খোলা রয়েছে। যারজন্য তিস্তার দাপট কিছুটা কমেছে। কিন্তু, দার্জিলিং ও কার্শিয়াং পাহাড়ে বৃষ্টি হওয়ায় এদিন সকালে মহানন্দা নদীর জলস্তর বেড়ে দাঁড়ায় ১১৪ মিটার। দুপুরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১১৪.৩০০ মিটার। এই নদীতে বিপদসীমার উচ্চতা ১১৫.৯৮ মিটার। অর্থাৎ আর কিছুটা জল বাড়লেই তা বিপদসীমা অতিক্রম করত। তবে বিকেলের পর নদীর জলস্তর কিছুটা কমেছে। 
এই অবস্থায় পাহাড় ও সমতলে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া দপ্তর। সিকিম কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দপ্তরের আধিকারিক গোপীনাথ রাহা বলেন, বিহার থেকে অসম পর্যন্ত একটি নিম্নচাপ অক্ষরেক্ষা বিস্তৃত রয়েছে। পাশাপাশি উত্তরবঙ্গে বাতাসের উপরিভাগে ঘূর্ণাবর্ত রয়েছে। এই দুইয়ের প্রভাবে আগামী তিন-চারদিন সিকিম পাহাড়ে হাল্কা থেকে মাঝারি এবং বিক্ষিপ্তভাবে কিছু জায়গায় ভারী বৃষ্টির সম্ভববনা রয়েছে। উত্তরবঙ্গের পাহাড় ও সমতলে বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। 
আবহাওয়ার এমন পূর্বাভাস ঘিরে রীতিমতো আতঙ্কিত তিস্তা, মহানন্দা, বালাসন, চামটা, পঞ্চনই প্রভৃতি নদীর তীবরর্তী গ্রামের বাসিন্দারা। সিকিম থেকে কালিম্পং, সেভক, গজলডোবা হয়ে বিস্তৃত তিস্তা নদী। শিলিগুড়ি শহরে চম্পাসারি, প্রধাননগর, গুরুংবস্তি, মাকালপল্লি, দশরথপল্লি, নৌকাঘাট প্রভৃতি এলাকা দিয়ে মহানন্দা নদী বিস্তৃত। দুই নদী সংলগ্ন বাসিন্দারা বলেন, বিপদ এখনও দূর হয়নি। পাহাড়ে বৃষ্টি হলেই বিধ্বংসী রূপ নিতে পারে তিস্তা ও মাহানন্দা। বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। তাই বাড়ির আসবাবপত্র প্রতিবেশীর দোতলা বাড়িতে, আত্মীয়ের বাড়িতে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। 
পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে শিলিগুড়ি মহকুমা প্রশাসনও প্রস্তুতি নিয়েছে। প্রশাসন সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই কলকাতা থেকে সিভিল ডিফেন্সের ওয়াটার উইংস বাহিনীর দুই সদস্যদের একটি টিম এখানে এসেছে। সংশ্লিষ্ট দলটিকে ফাঁসিদেওয়ায় রাখা হয়েছে। তাদের সঙ্গে স্পিড বোট রয়েছে। প্রায় ১৫০ জন ভলান্টিয়ারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।