প্রায় সম্পূর্ণ কাজে আকস্মিক বিঘ্ন আসতে পারে। কর্মে অধিক পরিশ্রমে স্বাস্থ্যহানির আশঙ্কা। ... বিশদ
অথচ কয়েক মাস আগে এই মোদিই বলেছিলেন, ‘সিনেমা না হলে গান্ধীজিকে বিশ্ববাসী চিনতই না।’ অর্থাৎ, ফর্মুলা পরিষ্কার। মহাত্মাকে সামনে রেখেই ‘পথের কাঁটা’ সরাতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন মোদি। চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনের আগে হলেও এতটা উদ্বেগের ভাঁজ কপালে পড়ত না তাঁর। কিন্তু সাম্প্রতিক ভোটের ফল দেখিয়েছে, কংগ্রেস আর সংসদের গ্যালারিতে বসে নেই। বরং কংগ্রেস তথা মহাজোট ইন্ডিয়া আর একটু হলেই ক্ষমতার অলিন্দে প্রবেশ করার মতো অবস্থায় চলে আসত। এই অবস্থায় যদি কংগ্রেসের ভাবাবেগ এবং সাধারণ মানুষের ‘মন বদলাতে’ হয়, গান্ধীজি ছাড়া গতি নেই। সামাজিক ভেদাভেদ, আর্থিক বৈষম্য, অস্পৃশ্যতা, ধনবণ্টনের বিভাজন দূর করাই ছিল মহাত্মা গান্ধীর জীবনের ব্রত। তিনি বলেছিলেন, কোনও সভ্য সরকারের প্রধান লক্ষ্য হবে বৈষম্যহীন সমাজ ও দেশ গঠন। তাহলেই প্রকৃত ঐক্য আসবে। গান্ধীজির ঐক্যের প্রসঙ্গে এই মাপকাঠিগুলি নিয়ে কিন্তু একটিও বাক্য খরচ করেননি মোদি। অথচ, মহাত্মাকে সামনে রেখেই কার্যত অভিন্ন দেওয়ানি বিধি এবং ওয়ান নেশন ওয়ান ইলেকশনের মতো সঙ্ঘ-নির্দেশিত এজেন্ডার প্রচার চালিয়েছেন। এই ‘ভাবনা’ রূপায়ণকে ভবিষ্যৎ সাফল্য হিসেবে তুলে ধরেছেন। আর তাই এতকাল যা ছিল জল্পনা এবং সংশয়, দীপাবলির দিন তাতেই সিলমোহর দিলেন। গুজরাতে সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের ১৪৯তম জন্মজয়ন্তী পালনের একঝাঁক প্রকল্পের পাশাপাশি আনুষ্ঠানিকভাবেই যেন ঘোষণা করে দিলেন ওয়ান নেশন ওয়ান ইলেকশন এবং অভিন্ন দেওয়ানি বিধির। বল্লভভাই প্যাটেলের পাহাড়প্রমাণ মূর্তির নাম ‘স্ট্যাচু অব ইউনিটি’। সেই মূর্তির নীচেই আয়োজিত অনুষ্ঠানে মোদি ইউনিটি অর্থাৎ একতাকেই তাঁর ভাষণের ধ্রুবপদ তথা অভিমুখ হিসেবে বেছে নিয়েছেন। তবে তাঁর কাছে ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য ঘোচা, বেকারত্ব এবং কর্মপ্রাপ্তদের বিভাজন দূর করার নাম ঐক্য নয়। তাঁর কাছে ঐক্য মানে, পুরনো ভারতকে বদলে দিয়ে মোদির ভারত নির্মাণ। তাই ১৯৫১ সাল থেকে চালু থাকা ওয়ান নেশন ওয়ান ইলেকশন ১৯৬৭ সালে স্বাভাবিক রাজনৈতিক সমীকরণের উত্থান পতনের জেরে বিঘ্নিত ও ব্যর্থ হওয়া সত্ত্বেও আবার সেই পথেই দেশকে ঠেলে দিতে চাইছেন। তাকেই মোদি ঐক্য ভাবছেন। একইভাবে উত্তর-পূর্ব ভারত তথা আদিবাসীদের আচার ও ধর্মীয় সংস্কৃতিকে যে অভিন্ন দেওয়ানি বিধির আওতায় আনা যাবে না, সেকথা জানা সত্ত্বেও সম্ভাব্য অভিন্ন দেওয়ানি আইনকে ঐক্যের প্রতীক আখ্যা দিতে চাইছেন তিনি।
গান্ধীজি অবশ্য বলে যাননি এই সব ঐক্যের কথা। সঙ্ঘ বলেছে।