বান্দ্রা: এক বছরের ব্যবধান। এবার বান্দ্রায় ফিরল সুরাতের মর্মান্তিক স্মৃতি। দীপাবলি উপলক্ষ্যে বাড়ি ফেরার জন্য  ট্রেন ধরার হুড়োহুড়ি। মাত্রাছাড়া ভিড়ে মুম্বইয়ের বান্দ্রা স্টেশনে পদপিষ্ট হয়ে জখম কমপক্ষে ১০ জন। তাদের মধ্যে দু’জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আহতদের স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গত বছর দীপাবলির সময়ে সুরাত স্টেশনে ধাক্কাধাক্কি, পদপিষ্টের ঘটনায় একজনের মৃত্যু হয়েছিল। রবিবারের বান্দ্রার ঘটনা প্রমাণ করল, বছর গড়ালেও হুঁশ ফেরেনি রেলের। মহারাষ্ট্রের বিধানসভা ভোটের আগে এই ঘটনায় বিরোধীদের তীব্র আক্রমণের মুখে পড়েছে মোদি সরকার। বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধীর তোপ, পরিকাঠামোর বেহাল দশার সাম্প্রতিক দৃষ্টান্ত হল এই ঘটনা। বিরোধীদের দাবি, রেলমন্ত্রী  অশ্বিনী বৈষ্ণব কখনও বুলেট ট্রেন, রেলের ভবিষ্যত নির্মাণ নিয়ে দৃশ্যকল্প রচনাতেই ব্যস্ত। আর প্রচারের ঢক্কানিনাদে মোদি সরকারের আমলে বন্দেভারত ট্রেনই কার্যত রেলের মুখ হয়ে উঠেছে। উপেক্ষিত হচ্ছে সাধারণ যাত্রীদের পরিষেবার বিষয়টি। এর জেরেই এমন ঘটনা বারবার ঘটছে। 
জানা গিয়েছে, দীপাবলির আগে শেষ রবিবার বাড়ি ফেরার জন্য বান্দ্রা স্টেশনে বান্দ্রা-গোরক্ষপুর এক্সপ্রেস ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছিলেন যাত্রীরা। ভোর ৫টা বেজে ১০ মিনিটে ছাড়ার কথা ছিল ট্রেনটির। রাত সোয়া তিনটি নাগাদ প্ল্যাটফর্মে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে ট্রেনে ওঠার জন্য হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। অসংরক্ষিত কামরায় কে আগে বসার জায়গা পাবেন, তা নিয়েই ধাক্কাধাক্কি পড়ে যায় যাত্রীদের মধ্যে। চলন্ত অবস্থাতেই অনেকে ঝুঁকি নিয়ে ওঠার চেষ্টা করেন। তাতেই ঘটে বিপত্তি। প্ল্যাটফর্মে ভিড়ের মধ্যেই বেসামাল হয়ে পড়ে যান অনেকে। 
দুর্ঘটনার খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছন রেল পুলিসের কর্মীরা। আহতদের স্ট্রেচারে করে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। জানা গিয়েছে, আহতরা প্রত্যেকেই গোরক্ষপুরের বাসিন্দা। ট্রেনে ওঠার সময় প্ল্যাটফর্মে থিকথিকে ভিড় ও  যাত্রীদের মরিয়া ঠেলাঠেলির একাধিক ভিডিও সামনে এসেছে। ওয়েস্টার্ন রেলের তরফে যাত্রীদের বলা হয়েছে, ১৩০টি বিশেষ ট্রেন চালানো হবে। মূলত উত্তরপ্রদেশ, বিহার পর্যন্ত এই ট্রেনগুলি চলবে। তাই যাত্রীদের হুড়োহুড়ি করতে নিষেধ করা হয়েছে।
এই ধরনের ঘটনা রুখতে আগেই পশ্চিম রেলের একাধিক স্টেশনে প্ল্যাটফর্ম টিকিট বিক্রি বন্ধ করেছে মন্ত্রক। এবার নর্দার্ন রেলের দিল্লি ডিভিশনের ছ’টি স্টেশনেও প্ল্যাটফর্ম টিকিট বিক্রি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিল রেল। এর মধ্যে রয়েছে নিউ দিল্লি স্টেশনও। অর্থাৎ, ‘সি-অফ’ করার জন্য আপাতত আর কেউ স্টেশনে ঢুকতে পারবেন না। তবে নর্দার্ন রেল জানিয়েছে, প্রবীণ কোনও যাত্রী বা একা মহিলা যাত্রীকে ট্রেনে তুলে দেওয়ার জন্য কেউ স্টেশনে এলে তাঁকে এক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হবে।
এই ঘটনায় রেলমন্ত্রীকে তীব্র কটাক্ষ করেছেন উদ্ধব থ্যাকারে পুত্র তথা শিবসেনা নেতা আদিত্য থ্যাকারে। তিনি বলেছেন, ‘রিলমন্ত্রী যদি একবারের জন্যও রেলমন্ত্রী হতেন, তাহলে ভালো হতো। বর্তমান রেলমন্ত্রী কতটা অক্ষম, তা প্রমাণ করল এই ঘটনা।’ -পিটিআই