নিজস্ব প্রতিনিধি, হাওড়া: হাওড়া-সিএসএমটি মুম্বই মেল বেলাইন হওয়ায় সব মিলিয়ে ১০১টি ট্রেনের পরিষেবা ব্যাহত হয়েছে। এর মধ্যে বেশ কিছু যেমন বাতিল করতে হয়েছে, তেমনই রুট পরিবর্তন ও কাটছাঁট করতে হয়েছে অনেক ট্রেনের। ফলে চূড়ান্ত দর্ভোগে পড়তে হয়েছে হাজার হাজার যাত্রীকে। মঙ্গলবার হাওড়া স্টেশনে ভুক্তভোগী যাত্রীরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। বহু যাত্রীকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা স্টেশনে শুয়ে-বসে থাকতে দেখা গিয়েছে। কয়েকদিন অন্তর এই ধরনের বিপত্তিতে যাত্রীরা তিতিবিরক্ত। রেল পরিষেবায় চূড়ান্ত অব্যবস্থা নিয়ে স্টেশনেই ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন অনেকে। যেমন, এদিন ভোলা মণ্ডল নামে এক যাত্রী বললেন, ‘গত ক’বছরে রেলকে একেবারে উচ্ছন্নে পাঠিয়ে দিয়েছে কেন্দ্রের সরকার। তা না হলে এত ঘনঘন দুর্ঘটনা কেন হবে!’  
মঙ্গলবার ভোররাতে আপ হাওড়া-সিএসএমটি মুম্বই মেল চক্রধরপুরের কাছে বেলাইন হয়ে যায়। লাইন 
থেকে ছিটকে যায় একাধিক বগি। দুর্ঘটনায় একাধিক যাত্রী জখম হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে ওড়িশার দুই বাসিন্দার। ওই ঘটনার জেরে এদিন দক্ষিণ-পূর্ব রেলের দূরপাল্লার ট্রেনগুলির পরিষেবা কার্যত বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। এদিন বিকেল পর্যন্ত ১০১টি ট্রেনের পরিষেবা ব্যাহত হয়েছে বলে রেল সূত্রে জানা গিয়েছে। এর মধ্যে বাতিল করতে হয়েছে ৬২টি ট্রেন। ১১টি ট্রেনের যাত্রাপথ কাটছাঁট করা হয়েছে এবং ২৮টি ট্রেনের যাত্রাপথে বদল ঘটাতে হয়েছে। সকাল থেকেই চরম অব্যবস্থা চলছিল হাওড়া স্টেশনে। দূরদূরান্ত থেকে যাত্রীরা স্টেশনে এসে জানতে পেরেছেন যে তাঁদের ট্রেন বাতিল। অনেকে ফিরে যান। অনেকে স্টেশনেই অপেক্ষা করতে শুরু করেন। নিউ কমপ্লেক্সের ২২ ও ২৩ নম্বর প্ল্যাটফর্মের সামনে সারাক্ষণই ছিল থিকথিকে ভিড়। ১৯ ও ২০ নম্বর প্ল্যাটফর্ম ও সংলগ্ন চত্বরেও ছিল একই অবস্থা। বহু মানুষকে প্ল্যাটফর্মে কাগজ বা প্লাস্টিক বিছিয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়। 
শ্রেয়সী ভাণ্ডারী নামে এক ভুক্তভোগী যাত্রী বলেন, ‘সকালে হাওড়া স্টেশনে ট্রেন ধরতে এসে জানতে পারি, আমাদের ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। শিলিগুড়ির বাসিন্দা আমি। এতদূর থেকে এলে আবার তো সেখানে ফিরতে পারব না। আমাকে এখন টাকা খরচ করে কোনও হোটেলে ঠেতে হবে।’ তাঁর ক্ষোভ, ‘যত দিন যাচ্ছে, রেলের অবস্থা আরও খারাপ হচ্ছে।’ বন্দে ভারতের আপাত চাকচিক্যের মোড়কে রেলের অন্য সব খামতি ও গাফিলতি ঢাকার চেষ্টা হচ্ছে বলে মনে করছেন যাত্রীদের একাংশ। বিশুদ্ধ রায় নামে এক যাত্রী বলেন, ‘২৯ মার্চ পালঘর মালগাড়ি দুর্ঘটনা, ২ জুন শিরহিদ ট্রেন দুর্ঘটনা, ১৭জুন কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস দুর্ঘটনা, ১৮ জুলাই চণ্ডীগড়-ডিব্রুগড় ট্রেন দুর্ঘটনা। তারপর মুম্বই মেল! আজকাল রেল দুর্ঘটনা তো নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে দেখছি! এখন তো ট্রেনে চাপতেই ভয় লাগে।’ ঐশ্বর্য দেব বলেন, ‘পরিষেবা এবং যাত্রী নিরাপত্তা—দু’টোরই দায় রেলের। কিন্তু তারা আদৌ এদিকে নজর দিচ্ছে কি না, বোঝা যাচ্ছে না।’ একের পর এক দুর্ঘটনার দায় নিয়ে রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবের এবার পদত্যাগ করা উচিত বলেও দাবি করেন তিনি।