নয়াদিল্লি: দিল্লির একটি শিশু হাসপাতালে বিধ্বংসী আগুন। অগ্নিদগ্ধ হয়ে প্রাণ হারিয়েছে অন্তত সাত সদ্যোজাত। গুরুতর জখম অবস্থায় হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে আরও পাঁচ শিশু। শনিবার রাতে আতঙ্কিত পরিজনের আর্তনাদে সাড়া দিয়ে প্রথমে ছুটে যান স্থানীয়রাই। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে উদ্ধার কাজ শুরু করেন তাঁরা। অন্যথায় মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারত। খবর পেয়ে ছুটে আসে দমকল ও পুলিসও। বিবেক বিহার ফেজ ১—এর ওই হাসপাতাল থেকে শিশুদের অন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। একের পর এক অক্সিজেন সিলিন্ডার বিস্ফোরণের কারণেই আগুন দ্রুত ছড়িয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। পুলিসের তদন্তে জানা যাচ্ছে, বৈধ লাইসেন্স ছাড়াই ওই হাসপাতাল চলছিল। এমনকী সেখানে কোনও এমার্জেন্সি একজিট গেটও ছিল না। এই ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করে দোষীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। ঘটনার পর থেকে গা ঢাকা দিয়েছিলেন হাসপাতালের মালিক ডা: নবীন কিচি। রবিবার বিকেলে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অগ্নিকাণ্ডের পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন শিশুদের পরিবার-পরিজন। তাঁদের অভিযোগ, আগুন নেভানোর ন্যূনতম পরিকাঠামো ছিল না। এমনকী আগুন ছড়িয়ে পড়তেই হাসপাতাল কর্মীরাও পালিয়ে যায়। এতগুলি শিশুর প্রাণ দিয়ে তাদের গাফিলতির খেসারত গুনতে হল। দোষীদের কড়া শাস্তির জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আর্জি জানিয়েছেন এক মৃত শিশুর বাবা। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় শোকপ্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। মৃতদের পরিবারকে ২ লক্ষ টাকা আর্থিক সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করতে মুখ্যসচিবকে নির্দেশ দিয়েছেন দিল্লির লেফটেন্যান্ট গর্ভনর ভিকে সাক্সেনা। জানা গিয়েছে, বেবি কেয়ার নিউ বর্ন হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ডের ব্যাপারে শনিবার রাত ১১টা ৩২ মিনিট নাগাদ ফোন যায় দমকলের কাছে। দমকলের আটটি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে যায়। পরে যোগ দেয় আরও ১৪টি ইঞ্জিন। সদ্যোজাতদের উদ্ধার করে ইস্ট দিল্লি অ্যাডভান্স নিকু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই হাসপাতালের ডিরেক্টর জানিয়েছেন, ১২টি শিশুকে নিয়ে আসা হয়েছিল। তার মধ্যে ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর একজনের অবস্থা খুবই খারাপ। তার ওজনও মাত্র ৮০০ গ্রাম। ভেন্টিলেটারে রেখে চিকিত্সা চলছে।
দিল্লির দমকল দপ্তরের ডিরেক্টর অতুল গর্গ জানিয়েছেন, আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার পাশাপাশি উদ্ধার কাজ চালাতে বেশ কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। একের পর এক অক্সিজেনের সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হচ্ছিল। ওই পরিস্থিতিতে নিজেদের প্রাণ বাঁচিয়ে শিশুদের উদ্ধার করতে হচ্ছিল। দমকল দপ্তর সূত্রে খবর, ওই হাসপাতালের নো-অবজেকশন সার্টিফিকেট নেই। এমনকী যথাযথ অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থারও দেখা মেলেনি। এছাড়া, দিল্লির বুকে ডা: নবীন কিচির আরও কয়েকটি হাসপাতাল রয়েছে। সেগুলিও এখন প্রশাসনের রাডারে।
শনিবার রাতে হাসপাতালে দু’তলায় আগুন দেখেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন শিশুদের পরিবার-পরিজনরা। তাঁদের চিত্কার, চেঁচামেচি শুনে স্থানীয়রা ছুটে আসেন। তারাই উদ্ধার কাজ শুরু করেন। খবর দেন দমকল ও পুলিসে। স্থানীয় এক বাসিন্দার অভিযোগ, ওই হাসপাতালে বেআইনিভাবে অক্সিজেন রিফিলিংয়ের কাজ চলছিল। তার জেরেই বিপত্তি। পুলিস-প্রশাসন সব জেনেও ব্যবস্থা নেয়নি।