বিশ্বজিৎ দাস, কলকাতা: বাজারে খোলামকুচির মতো বিকচ্ছে কম্বিনেশন অ্যান্টিবায়োটিক। দুটি বা ততোধিক অ্যান্টিবায়োটিক মিশিয়ে বাজার মাত করতে নেমেছে ওষুধ নির্মাতারা। আবার অ্যান্টিবায়োটিকের সঙ্গে মেশানো হচ্ছে অ্যান্টিঅ্যালার্জিক, ভিটামিন, অ্যানালজেসিক তথা ব্যথা কমানোর ওষুধ —কী না কী! খাওয়ার আগের মূল উপাদানের ওষুধ এইসব ‘রহস্যময় গুণসম্পন্ন’ কম্বিনেশন ওষুধের ঠেলায় রোগীরা খাচ্ছেন খাওয়ার পর। দীর্ঘদিন ধরেই বহু চিকিৎসক বলে আসছেন, বাজার চলতি অধিকাংশ ফিক্সড ডোজ কম্বিনেশন অ্যান্টিবায়োটিক বৈজ্ঞানিক দিক থেকে যুক্তিহীন। অ্যামক্সিসিলিন এবং ক্ল্যাভুলানিক অ্যাসিডের মতো হাতেগোনা ১০-১২টি বাদ দিলে বাদবাকিগুলি কোনও কাজেরই নয়। তৈরি করা হয়েছে রোগীদের অসুখবিসুখ থেকে মুক্তি দিতে নয়, বরং গুছিয়ে তাঁদের পকেট কাটতে। কিন্তু চিকিৎসকদেরই একাংশের বদান্যতায় এইসব কম্বিনেশন অ্যান্টিবায়োটিকের ‘যথার্থতা’ প্রকাশিত হয়ে যাচ্ছে মেডিক্যাল জার্নালে। অবশেষে এ নিয়ে কড়া হল কেন্দ্রীয় ড্রাগ কন্ট্রোল। ওষুধ বিষয়ক শীর্ষ নিয়ন্ত্রক সংস্থা সেন্ট্রাল ড্রাগস কন্ট্রোল স্ট্যান্ডার্স অর্গানাইজেশনের (সিডিএসসিও) শীর্ষকর্তা ড্রাগস কন্ট্রোলার জেনারেল অব ইন্ডিয়া এক নির্দেশনামায় জানিয়েছেন, সব রাজ্যকে দু’সপ্তাহের মধ্যে লাইসেন্সপ্রাপ্ত যাবতীয় কম্বিনেশন অ্যান্টিবায়োটিকের তালিকা জানাতে হবে কেন্দ্রকে। ১৬ মে জারি হওয়া ওই নির্দেশে এও বলা হয়েছে, বাজারে বৈজ্ঞানিক যুক্তিহীন কম্বিনেশন অ্যান্টিবায়োটিকের আছে কি না সেদিকে কড়া নজর রাখতে হবে। থাকলেই ড্রাগ এবং কসমেটিকস আইন অনুযায়ী শাস্তি দিতে হবে। ওইসব ভুলভাল কম্বিনেশন অ্যান্টিবায়োটিক বাতিল করার কথাও বলা হয়েছে চিঠিতে।
মেডিক্যাল কলেজের সুপার ও উপাধ্যক্ষ ডাঃ অঞ্জন অধিকারী বলেন, ডক্সিসাইক্লিনের (দাগ, ইউরিন ইনফেকশন প্রভৃতি ক্ষেত্রে ব্যবহৃত) সঙ্গে কোন যুক্তিতে মেশানো হচ্ছে ভিটামিন। এর মানেটা কী? কী উপকার হবে এতে? শুধু অ্যান্টিবায়োটিক? এছাড়াও বাজার চলতি বহু কম্বিনেশন ওষুধ আছে, যেগুলি কোনও বৈজ্ঞানিক যুক্তি ছাড়াই স্রেফ দাম বাড়ানো এবং দাম নিয়ন্ত্রণের তালিকা থেকে বের করে আনার জন্যই ছাড়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় ড্রাগ কন্ট্রালকে অনুরোধ, বাজারে থাকা সব কম্বিনেশন অ্যান্টিবায়োটিকের বৈজ্ঞানিক যুক্তি পেশ করতে বলা হোক। দেখবেন, হিমশিম খাবে ওরা! রাজ্যের ওষুধের দোকানদারদের সর্ববৃহৎ সংগঠন বিসিডিএ’র রাজ্য সভাপতি শঙ্খ রায়চৌধুরী বলেন, ভারত ছাড়া আর কোনও দেশে এত কম্বিনেশন অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার নেই। অল ইন্ডিয়া কেমিস্ট অ্যান্ড ডিস্টিবিউটর্স ফেডারেশনের সর্বভারতীয় সম্পাদক জয়দীপ সরকার বলেন, কেন্দ্রীয় ড্রাগ কন্ট্রোলের এই নির্দেশের অর্থ হল, ওরা জানেই না বাজারে কতগুলি কম্বিনেশন অ্যান্টিবায়োটিক আছে এবং এর মধ্যে কতগুলি অনুমোদনহীন! আশ্চর্য না?