হঠাৎ পাওয়া যোগাযোগের মাধ্যমে কর্ম জটিলতার অবসান ও মানসিক চিন্তামুক্তি। আয় ব্যয়ের ক্ষেত্র ঠিক থাকবে ... বিশদ
বুধবার ইএম বাইপাসে দুর্ঘটনার সূত্র ধরে প্রকাশ্যে আসে শীল লেনের রোমহর্ষক হত্যাকাণ্ড। দুর্ঘটনায় জখম দুই ভাই ও এক নাবালক সেদিন সকাল থেকে বাইপাসের ধারের বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি। তারা বয়ান দেওয়ার মতো অবস্থায় না থাকায় হত্যারহস্যকে কেন্দ্র করে একের পর এক প্রশ্ন উঠলেও জবাব হাতড়ে বেড়িয়েছে পুলিস। ঘটনার চারদিন পর ক্রাইম সিনের ‘মঙ্গল-রহস্য’ স্পষ্ট হতে শুরু করেছে। বড়ভাই প্রণয় ও তার নাবালক ছেলে সুস্থ হতেই শনিবার সকালে হাসপাতালের আইসিইউতে তাদের জেরা করতে যান হোমিসাইড শাখার এক তদন্তকারী। সঙ্গে ছিলেন ট্যাংরার থানার দুই অফিসারও। তারপরই প্রাথমিক অনুসন্ধান সিলমোহর পেতে শুরু করেছে। সূত্রের খবর, নাবালককে আলাদাভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ‘লিড’ পাওয়া গিয়েছে। এখনও সবটা খোলসা না করলেও ‘খুনি’ কে, সে বিষয়ে প্রায় নিশ্চিত তদন্তকারীরা।
পাশাপাশি, দুই ভাইকে পৃথকভাবে জেরায় পুলিস জেনেছে, প্রায় বছর দু’য়েক ধরে অনিদ্রায় ভুগছিলেন প্রসূন। চিকিৎসকের পরামর্শে নিয়মিত ঘুমের ওষুধ খেতে হতো এই ব্যবসায়ীকে। সম্প্রতি ব্যবসায় ব্যাপক মন্দা ও কোটি কোটি টাকা ঋণের কারণে আত্মহত্যার পরিকল্পনা করে দুই ভাই। পরিবারের সবাইকেই সেকথা জানিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু দুই বধূ ও সন্তানরা তাতে সম্মতি দেয়নি। প্রণয়-প্রসূনের যৌথ পরিকল্পনায় স্থির হয়, পায়েসে ঘুমের ওষুধ অধিক পরিমাণে প্রয়োগ করে সবাই মিলে আত্মহত্যা করবেন। কিন্তু, ডাক্তারের লেখা প্রেসক্রিপশন ছাড়া ঘুমের ওষুধ কেনা যায় না। তাই প্রসূনের প্রেসক্রিপশনের সাহায্য নিয়ে একসঙ্গে এক প্যাকেট (১০ পাতা) ঘুমের ওষুধ অনলাইনে অর্ডার করা হয়। সোমবার সেই অর্ডার বাড়িতে পৌঁছে দেন ডেলিভারি বয়। সূত্রের খবর, দোতলায় যখন পায়েস তৈরি হচ্ছিল, তখন তিনতলায় ঘুমের ওষুধ থেঁতো করার কাজ করছিলেন দুই ভাই। কিন্তু ওষুধ মেশানোর সময় তাঁদের দেখে ফেলে প্রিয়ংবদা। সোমবার রাতে তাকে সেই ওষুধ খাওয়াতে গেলে বাধা দেয় কিশোরী। তদন্তকারীদের অনুমান, তার জেরেই মাথায় ভারী কোনও বস্তু দিয়ে আঘাত করা হয়। মুখ চেপে পায়েস খাইয়ে দেওয়া হয়। চিকিৎসকরা বলছেন, সে কারণেই ময়নাতদন্তের রিপোর্টে মাথা, ঠোঁট, মুখ, বুকে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গিয়েছে।
লালবাজার সূত্রে খবর, এদিন পুলিসি জেরায় ফের বয়ান বদল করেছেন প্রসূন। তাঁর দাবি, ‘সবাই ঘুমের ওষুধ খায়। কিন্তু সকালে উঠে দেখা যায়, বউরা কেউ মারা যায়নি। তাই তাঁরা নিজেরাই হাত কেটে আত্মহত্যার চেষ্টা করে।’ তবে ময়নাতদন্তের রিপোর্টের সঙ্গে এই বয়ান মিলছে না। উল্টে, বারবার বয়ান বদলের কারণে প্রসূনের দিকেই ইঙ্গিত স্পষ্ট হচ্ছে। তদন্তকারীদের দাবি, প্রিয়ংবদার মৃত্যু নিশ্চিত হতেই দুই বধূকে পরিকল্পনা মাফিক খুন করা হয়। ঘুমের ওষুধ খাওয়ানো হয় প্রণয়ের ছেলেকেও। কিন্তু, তার শরীরে ‘বিষক্রিয়া’র প্রভাব সেভাবে পড়েনি। তাই তিনজন মিলে সুইসাইড করা হবে বলে গাড়ি নিয়ে বের হয় দুই ভাই। সঙ্গে প্রায় ঘোরের মধ্যে থাকা ভাইপো। তাদের দাবি, প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে চড়কিপাকেও মনমতো ‘সুইসাইড স্পট’ খুঁজে পায়নি তারা। এই যুক্তি কতটা বিশ্বাসযোগ্য? জেরা চালিয়ে যাচ্ছে লালবাজার।