নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: মাছ উৎপাদনে দেশের মধ্যে বর্তমানে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। আগামী এক বছরে প্রথম স্থানে পৌঁছনোই লক্ষ্য রাজ্যের। এই সাফল্যের হাত ধরে স্বনির্ভর হয়ে উঠছেন বহু যুবক। গত এক বছর ধরে বাংলার প্রত্যেক ব্লকে মাছ চাষের প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করেছে রাজ্য সরকার। এই উদ্যোগ একদিকে যেমন উৎপাদন বৃদ্ধিতে সাহায্য করেছে, সেই সঙ্গে উপার্জনের দিশা দেখিয়েছে হাজার হাজার যুবককে। গত বছর প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মাছ চাষে উৎসাহিত করা হয়েছে প্রায় ২০ হাজার জনকে। এই সংখ্যা ২০২৫ সালে বাড়িয়ে ৫০ হাজারে নিয়ে যাওয়ার টার্গেট নিয়েছে রাজ্য মৎস্যদপ্তর। রাজ্যের হিসেব অনুযায়ী, প্রশিক্ষণের পর নিজের পুকুরে মাছ চাষ চালু করলে মাসে অন্তত ১৫ থেকে ১৮ হাজার টাকা উপার্জন হবে। ফলে এক বছরে তাঁদের আয় দু’লক্ষ ছাড়াবে।
রাজ্যের মৎস্যমন্ত্রী বিপ্লব রায়চৌধুরী বলেন, ‘এই প্রশিক্ষণ নিয়ে জেলায় জেলায় যুবকদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ চোখে পড়ছে। ২০২৫ সালে আমরা দ্বিগুণ যুবককে স্বনির্ভর করে তোলার করার টার্গেট নিয়েছি। মনে রাখতে হবে, মান্ধাতা আমলের পদ্ধতিতে মাছ চাষে কোনও লাভ নেই। আমরা যে প্রশিক্ষণ দিচ্ছি, তা মেনে নিজের পুকুরে মাছ চাষ করলে সংসার চালাতে আর অন্য কোনও কাজের খোঁজ করতে হবে না।’ জানা গিয়েছে, মৎস্য দপ্তরের জেলাস্তরের আধিকারিকরাই ব্লকে ব্লকে গিয়ে প্রশিক্ষণের আয়োজন করেন। প্রথমে টানা তিনদিনের প্রশিক্ষণ পর্ব চলে। তার একমাস পর ফের তাঁদের ডেকে একদিনের ক্লাস নেওয়া হয়। এই প্রশিক্ষণের জন্য একটি বইও তৈরি করা হয়েছে দপ্তরের তরফে। রাজ্যের এক অভিজ্ঞ আধিকারিক জানান, কোন মাছের জন্য কী খাবার দেওয়া উচিত, উৎপদন বৃদ্ধির জন্য কী করণীয়, কোন মাছের জন্য কোন ধরনের জল প্রয়োজন—সবই শেখানো হবে।
প্রসঙ্গত, এক সময় বাংলাকে মাছের জন্য ব্যাপকভাবে নির্ভর করতে হতো অন্ধ্রপ্রদেশের উপর। রাজ্যের এক অধিকারের মতে, এক শ্রেণির ব্যবসায়ী ব্যক্তিগত স্বার্থে আমদানি করবেনই। কিন্তু নিজস্ব উৎপাদন বৃদ্ধির ফলে রাজ্যের চিত্রটা অনেকটা বদলেছে। আগামী এক বছরের মধ্যে দেশের মধ্যে সর্বাধিক মাছ উৎপাদনকারী রাজ্য হিসেবে বাংলা উঠে আসবে বলেই তাঁর মত। তাঁর আরও সংযোজন, এখন আর বীজপোনা আমদানির প্রয়োজন পড়ে না। উৎপাদন এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে রাজ্য থেকে সামান্য রপ্তানিও শুরু হয়েছে। রপ্তানি পর্যায়ক্রমে বৃদ্ধি পাবে।