জলপথ পরিবহণ কর্মে বিশেষ শুভ। হস্তশিল্পী, হিসাব-শাস্ত্রবিদ প্রমুখের কর্মে উন্নতি ও সুনাম। মানসিক অস্থিরতা থাকবে। ... বিশদ
ডায়মন্ডহারবারে বাড়ি শশধর পাত্রের। দৃষ্টি চলে যাওয়ায় আর পাঁচটা সাধারণ স্কুলে পড়ার সুযোগ হয়নি তাঁর। নরেন্দ্রপুর ব্লাইন্ড বয়েজ অ্যাকাডেমি থেকে মাধ্যমিক পাশ করার পর সাংসারের বোঝা এসে পড়ে তাঁর কাঁধে। টুকটাক বিভিন্ন ধরনের কাজ করলেও তাতে মন বসেনি তাঁর। এরপর শুরু করেন হকারি। আগে সংবাদপত্র নিয়ে ট্রেনে-বাসে হকারি করেছেন। কিন্তু ঘোরাঘুরি করে খবরের কাগজ বিক্রি করা তাঁর সম্ভব হচ্ছিল না। তাই একটু টাকা-পয়সা জোগাড় করে ডায়মন্ডহারবার স্টেশনেই একটা ছোট দোকান খোলেন তিনি। শুরু হয় নতুন অধ্যায়।
কে কোন কাগজ কিনবেন, তা বেছে দেন কী করে? কোনটা বাংলা, কোনটা ইংরেজি সংবাদপত্র সেটাই বা চেনেন কী করে? শশধরবাবুর স্পষ্ট উত্তর, স্পর্শ দিয়ে বুঝতে পারি। তবে একেকটি সংবাদপত্র একেক জায়গায় রাখি। কোনওটা উপরে, কোনওটা নীচে, কোনওটা আবার হয় ডাইনে, না হয় বাঁয়ে রাখি। ক্রেতারা এসে যে সংবাদপত্র চান, তাক থেকে সেই কাগজ বের করে দিই। কাগজ সাজিয়ে রাখার এই কৌশলেই চলে বিক্রিবাট্টা। প্রথম দিকে কিছুটা অসুবিধা হতো। তখন ক্রেতাদের বলতাম, যে কাগজ কিনতে চান, নিজেরাই সেটি বেছে নিন। এখন অবশ্য পুরোটাই রপ্ত হয়ে গিয়েছে। কোন তাকে কী আছে, মুখস্থ। ৩০ বছর ধরে এভাবেই দিন চলে যাচ্ছে।
শশধরবাবুর স্ত্রীও দৃষ্টিহীন। মাঝে মধ্যে তিনিও এসে বসেন দোকানে। কারও উপর নির্ভরশীল নন শশধরবাবু। খবরের কাগজ বিক্রি করেই একমাত্র মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন তিনি। তাঁর কথায়, ভোর থেকে বেলা পর্যন্ত সংবাদপত্র বিক্রি করি। রোজগার না করলে আমরা খাব কী? যেদিন কাগজের সংস্করণ বন্ধ থাকে, সেদিন যেন দিন কাটতেই চায় না। জীবনযুদ্ধে দম্পতির এই লড়াই, মানসিক জোর অনুপ্রেরণা জোগায় বহু মানুষকে। - নিজস্ব চিত্র