নিজস্ব প্রতিনিধি, বরানগর: পিস হাভেন থেকে স্ত্রীর দেহ বের করা হয়নি। থেঁতলে যাওয়া মুখ দেখাতে চায়নি পরিবার-পরিজনরা। অ্যাম্বুলেন্সে শুয়ে শুধুমাত্র শিশুকন্যার নিথর মুখটি দেখেছেন শোভন শাসমল। তারপর কান্না থামেনি। হাহাকার করে উঠে ওঠেন, ‘আমাদের তো এভাবে ফেরার কথা ছিল না। আমাকে সবাই ফাঁকি দিয়ে চলে গেল।’ বাবার বুকফাটা আর্তনাদ যাঁদের কানেই গিয়েছে তাঁরা চোখের জল থামাতে পারেননি। বছর শেষের দিনটি নিউ বারাকপুরের সুকান্ত সরণি কার্যত শোকস্তব্ধ হয়ে রইল। শোভনবাবু ও তাঁর মামাতো দাদা-বৌদিকে দ্রুত এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। মঙ্গলবার বিকেলে মা ও মেয়ের অন্তিম সংস্কার হয়। গত শনিবার সিকিমে মর্মান্তিক পথ দুর্ঘটনার শিকার হয়েছিলেন নিউ বারাকপুরের সুকান্ত সরণির বাসিন্দা শোভন শাসমল। তাঁর স্ত্রী পায়েল ও আড়াই বছরের মেয়ে শ্রীনিকার মৃত্যু হয়। একই গাড়িতে থাকা মামাতো দাদা, বৌদি জখম হন। তবে বেঁচে যান প্রাণে। ওই দম্পতির কন্যা বরাতজোরে রক্ষা পায়। সোমবার রাতের বিমানে পায়েল ও শ্রীনিকার দেহ এয়ারপোর্টে পৌঁছয়। তা রাখা হয় পুরসভার পিস হাভেনে। গুরুতর জখম অবস্থায় থাকা সত্ত্বেও শোভন শেষবার স্ত্রী ও কন্যার মুখ দেখতে চেয়েছিলেন। গ্যাংটক থেকে শোভন, তাঁর দাদা ও বৌদিকে নিয়ে তিনটি অ্যাম্বুলেন্স মঙ্গলবার সকাল ১০টায় নিউ বারাকপুর পৌঁছয়। তাঁদের নিয়ে যাওয়া হয় পিস হাভেনে। শোভনের দু’পা মারাত্মকভাবে জখম। অ্যাম্বুলেন্স থেকে ওঠতে পারেননি। তাই অ্যাম্বুলেন্সের পাশে মেয়ের দেহ নিয়ে আসা হয়। মেয়েকে দেখে আর্তনাদ করে ওঠেন বাবা। এরপর স্ত্রীকে দেখবেন বলে জোরাজুরি শুরু করেন। কিন্তু তাঁর পরিবার স্ত্রীর থেঁতলে যাওয়া মুখ দেখাতে চায়নি। এরপর অ্যাম্বুলেন্স এসএসকেএম হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয় তাঁদের।
বিকেলে মা ও মেয়ের দেহ সুকান্ত সরণির বাড়িতে আসে। শ্বশুর প্রতাপ শাসমল ও শাশুড়ি পিয়ালিদেবী বৌমা ও নাতনিকে শেষবারের মতো দেখেন। এরপর দেহ নিয়ে যাওয়া হয় মধ্যমগ্রামের বসুনগর পেয়ারাবাগান এলাকায়। সেখানে বাপের বাড়ি। সেখানেও কান্নার রোল ওঠে। মধ্যমগ্রামের গঙ্গানগর শ্মশানে কন্যার দেহ কবর দেওয়া হয়। কলকাতার রতনবাবু ঘাট লাগোয়া রামকৃষ্ণ মহাশ্মশানে হয় পায়েলদেবীর অন্তিম সংস্কার।
কাঁদতে কাঁদতে পিয়ালিদেবী বলেন, ‘ঠাকুর সমস্ত কিছু দিয়েছিল। আবার কেড়েও নিল। কী নিয়ে বাঁচব? নাতনির মুখ সবসময় চোখে ভাসছে।’ প্রতিবেশী কৃষ্ণেন্দু দাস বলেন, ‘আজ রাতেই শোভনের অপারেশন হবে। ভগবানের কাছে আমরা প্রার্থনা করছি ও যেন ধকল সহ্য করে নিতে পারে। আমরা ওকে বারবার বাবা-মায়ের কথা বলেছি। তাও ওকে সামলানো যাচ্ছে না।’