যে কোনও কাজকর্মে সকালের দিকে বিশেষ উন্নতির যোগ। বিকেলের দিকে অবশ্য কিছু বাধা আসতে পারে। ... বিশদ
বেহালার জেমস লং সরণি সংলগ্ন মুচিপাড়ার মদনমোহনতলা বাজারে ফুটপাতের উপর রয়েছে পিন্টুবাবুর ছোট গুমটি দোকান। পান, বিড়ি, সিগারেট বিক্রি করেন। সেই দোকানেই বিভিন্ন তাকে সাজানো পিন্টুর লেখা কাব্য-কাহিনির নানা বই।
পূর্ণচন্দ্র পোহান ও উজ্জ্বলা দেবীর পাঁচ সন্তানের সর্বকনিষ্ঠ হলেন পিন্টু পোহান। তাঁর জীবনের কাহিনি যে কোনও মানুষের কাছে উদাহরণ হতে পারে। তাঁর জীবন কোনওদিনই সহজ ছিল না। শৈশব কেটেছে মাঠে গোবর কুড়িয়ে, জলাজমি থেকে শাকপাতা তুলে কিংবা পুকুর-ডোবায় নেমে মাছ ধরে। উচ্চমাধ্যমিকের পর নিজের পড়াশোনার খরচ এবং সংসার চালাতে বেহালার মদনমোহন তলার বাজারে খোলেন পানের দোকান। পড়াশোনা করার অদম্য ইচ্ছাতেই ফুটপাতে বসে পড়তেন। তিনি বলেন, ‘মাঝে ক’বছর পড়াশোনা ছেড়েই দিয়েছিলাম। কিন্তু মন মানছিল না। পানের দোকান চালিয়ে কীভাবে বেসরকারি জায়গা থেকে গ্র্যাজুয়েশন করব সেই চিন্তা মাথায় ঘুরত। তবে অনেকে ভরসা দিলেন। জেদ নিয়ে ভর্তি হয়ে গেলাম। তারপর দোকান চালাতে চালাতে শেষ করে ফেললাম পড়াশোনা। গ্র্যাজুয়েশন করলাম। তারপর মাস্টার্সও।’
ছোটবেলা থেকেই লেখক হওয়ার ইচ্ছা তাঁর। কিন্তু দারিদ্র এবং সংসার চালানোর তাগিদ সেই স্বপ্নপূরণে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তবুও দমে যাননি পিন্টু। বলেন, ‘পানের দোকানে বসে সাহিত্যচর্চা, শুনে অনেকেই হাসতেন। কিন্তু, মনের জোরে নিজের নেশাকে বাঁচিয়ে রেখেছি।’ ছোটবেলা থেকে খবরের কাগজ পড়ার ঝোঁক। সেখান থেকেই লেখক হওয়ার ইচ্ছা। এখন পানের দোকান থেকে খবরের কাগজও বিক্রি করেন। তাঁর লেখা প্রকাশিত হয়েছে বিভিন্ন নামী, আঞ্চলিক পত্র-পত্রিকায়। পিন্টুবাবুর বন্ধু সুবিমল দাস বলেন, ‘এভাবে ২৫ বছর ধরে নিজের সংসার চালানোর পাশাপাশি বই লিখেছেন উনি। সত্যিই অকল্পনীয়।’
বাংলা নিয়ে গ্র্যাজুয়েট হন। মাস্টার্স করার পর পানের দোকানে বসে লিখে ফেলেছেন ১১টি উপন্যাস এবং ২০০টি ছোট গল্প, ২০০টি কবিতা। সমস্ত লেখা তিনি লিখেছেন পান সাজতে সাজতে, বিড়ি-সিগারেট বিক্রি করতে করতে এই ছোট্ট গুমটি ঘরে বসেই।-নিজস্ব চিত্র