হস্তশিল্পীদের কর্মে সাফল্য ও সুনাম। সন্তানের সঙ্গে মতবিরোধ হতে পারে। ধর্মকর্মে মনোযোগ বাড়বে। ... বিশদ
ব্রেজিলের তথ্যচিত্র নির্মাতা সেবাস্টিয়াও সালগাদো ও তাঁর স্ত্রী মেলিয়া ডেলউইজ ওয়ানিক সালগাদো প্রায় কুড়ি বছরের অক্লান্ত পরিশ্রমে ৩২ কোটি একর জমিতে তৈরি করে ফেলেছেন আস্ত একটি অরণ্য। তাঁর কথা গোটা বিশ্ব এখন জানে। বা এ দেশের অসমের যাদব পায়েং। ভালোবেসে গড়ে ফেলেছেন ১৩৬০ একরজোড়া একটি বন। তাঁকে ‘ফরেস্ট ম্যান অফ ইন্ডিয়া’ বলা হয়। কিংবা উত্তর প্রদেশের রাম যাদব। তিনি একা হাতে ৪০ হাজার গাছ লাগিয়ে একটি জঙ্গল তৈরি করেছেন। তিনি গাছে দেবেন বলে দূর গ্রাম থেকে কাঁধে করে বয়ে জল আনতেন। সত্যরঞ্জন জায়গার অভাবে এঁদের মতো অরণ্য বানাতে পারেননি। পেলে বানিয়ে ফেলতেন। তবে তাঁকে যাঁরা চেনেন তাঁরা তাঁকে ‘গাছ কাকু’ নামে ডাকেন। শ্যামবাজার, বাগবাজার, হাতিবাগান, কুমোরটুলি ইত্যাদি এলাকায় তিনি এই নামেই বিখ্যাত।
বাগবাজারের কাছে গ্যালিফ স্ট্রিটের হাট। সেখান থেকে প্রতি রবিবার নানা ধরনের গাছগাছালি, সার ইত্যাদি কেনেন সত্যরঞ্জনবাবু। বাড়িতে টবে বসান। একটু শক্তসমর্থ হলে সে গাছ পুরসভার কোনও পার্কে, বা রাস্তার ধারে ফাঁকা জায়গায় বা কোনও স্কুলের মাঠে বসিয়ে দিয়ে আসেন। নিয়মিত তাতে জল দিতে যান। রক্ষণাবেক্ষণ করেন। একটি ছোটখাট কাজ করে পেট চালান। রোজগারের টাকার অধিকাংশ যায় গাছের পিছনে। ভোর সাড়ে পাঁচটা নাগাদ ঘুম থেকে ওঠেন। তারপর ঘুরে ঘুরে গাছপালা রক্ষণাবেক্ষণের কাজে লেগে পড়েন।
রাজা রাজবল্লভ স্ট্রিটের বাসিন্দা বুদ্ধদেব বক্সি জানালেন, ছাত্র-ছাত্রীদের প্রজেক্টের কাজে রকমারি গাছের পাতার প্রয়োজন হয়। তখনই খোঁজ পড়ে সত্যববাবুর। তিনি সেই পাতা সংগ্ৰহ করে আমাদের দেন। মদনমোহন তলা স্ট্রিটের বাসিন্দা প্রিয়াঙ্কা দাস জানান, উনি আমাদের মুশকিল আসান। ছেলের স্কুলের প্রকৃতি পাঠে গাছপালার ভূমিকা সংক্রান্ত কোনও বিষয় থাকলে ওঁর দ্বারস্থ হই। সহযোগিতাও পাই।’ কুমোরটুলির কমলা চক্রবর্তী, কাকলি মিশ্ররা বলেন, ‘কোনও গাছের প্রয়োজন হলেই আসি। মাটি সমেত গাছ তিনি আমাদের দেন। যে কোনও গাছের পাতা দেখলেই উনি বলে দিতে পারেন সেটি কি গাছ।’
সত্যবাবু দক্ষিণ ২৪ পরগনার পাথরপ্রতিমার লক্ষ্মীপুর গ্রামে থাকতেন। মাধ্যমিক পাস করার দু’বছর পর পেটের টানে কলকাতা চলে আসেন। উত্তর কলকাতার দর্জিপাড়ার কাছে নয়নচাঁদ দত্ত স্ট্রিটে একটি বাড়িতে আশ্রয় পেয়েছিলেন। একদিন ঝড়বৃষ্টিতে গাছ ভেঙে পড়তে দেখেন। তারপর অক্টোপাসের মতো তাঁকে গ্রাস করে গাছের প্রতি ভালোবাসা। কোনও অনুষ্ঠান, রক্তদান বা স্বাস্থ্য শিবির অথবা বই বিতরণ অনুষ্ঠান কিংবা বিজ্ঞান মেলা থেকে ডাক পেলে পৌঁছে যান। চারাগাছ উপহার দেন। তিনি বলেন, ‘বিশ্ব পরিবেশ দিবসেই শুধু গাছ লাগালে হবে না। এই উদ্যোগ থাকতে হবে গোটা বছর।’
নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী লিখেছিলেন, ‘হারিয়ে গেছে মাথার উপর/ গাছের সবুজ পাতা/জ্বলছে বাজার, রাস্তা ও ঘর/ এই নাকি কলকাতা/তাই তো বলি গাছ কেটো না…।’ কবিতাটি বহু আগে পড়েছিলেন সত্যরঞ্জন। এখনও ভোলেননি। নিজস্ব চিত্র