দক্ষিণবঙ্গ

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাস বিজড়িত গ্রামে এবার উচ্ছেদের নোটিস প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের

রাজদীপ গোস্বামী, শালবনী: প্রায় একশো বছর ধরে বসবাস। বেশিরভাগ গ্রামবাসীর সংসার চলে দিনমজুরি বা জমিতে চাষ করেই। আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্য না থাকলেও সুখ ছিল। আচমকা প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের এক নোটিসে সেই সুখ উধাও। বিষাদের সুর চারিদিকে। নোটিসটি আসলে উচ্ছেদের।  গ্রামবাসীরা অবশ্য চোয়াল শক্ত করে জানিয়ে দিয়েছেন—‘রক্ত দিতে রাজি, কিন্তু ভিটে-মাটি ছাড়ব না।’ 
শালবনী ব্লকের কমলা গ্রাম। কম করে তিনশো পরিবারের বসবাস। গ্রামবাসীদের দাবি, তিন পুরুষ ধরেই তাঁরা গ্রামে বাস করে আসছেন। এতদিন কেউ কিছু বলেনি। এখন ভিটে কেড়ে নিতে চাইছে মোদি সরকার। জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যেই প্রায় একশো বাড়িতে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের উচ্ছেদ-নোটিস এসেছে। জানাজানি হতেই জোট বাঁধছেন সকলেই। ডাক দিয়েছে আন্দোলনের। পুনর্বাসন ছাড়া উচ্ছেদ করলে ফল ভালো হবে না বলেও জানিয়ে দিয়েছেন তাঁরা। প্রয়োজনে ভিটে-মাটি রক্ষা করতে রক্ত দিতেও প্রস্তত গ্রামবাসীরা। 
শুক্রবার বেলা তখন এগারোটা। বাড়ির দাওয়ায় বসে কথা হচ্ছিল বিভা ভুঁইয়ার সঙ্গে। ক’দিন আগেই তাঁর বাড়িতে উচ্ছেদের নোটিস পাঠিয়েছে প্রতিরক্ষামন্ত্রক। তিনি বলছিলেন, ‘আমাদের পক্ষে নতুন করে জমি কিনে বাড়ি তৈরি করা সম্ভব নয়। ভিটে-মাটির জন্য জীবন বাজি রাখতেও রাজি। ওরা উঠে যাওয়ার সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে। কিন্তু একজনও গ্রামবাসী ওই সময়ের মধ্যে বাড়ি ছাড়বেন না। তাতে যা হাওয়ার হবে।’ কমলা গ্রামের সঙ্গে জড়িয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাস। ১৯৪০ সাল। প্রায় একবছর অতিক্রান্ত যুদ্ধ। কমলা এলাকায় ইংরেজরা একটি বিশেষ এয়ারপোর্ট তৈরি করে। যুদ্ধক্ষেত্রে প্রতিপক্ষকে মুখতোড় জবাব দিতেই এয়ারপোর্টটি গড়ে তোলা  হয়। ১৯৪২ সাল। কমলা গ্রামে তখন পরিবারের সংখ্যা মাত্র তিরিশটি। ইংরেজ সরকার একটি নোটিস জারি করে গ্রামবাসীদের সরে যেতে বলে। কারণ হিসেবে বলা হয়, বিশ্বযুদ্ধ চলছে। গ্রামেও বোমা-গুলি আছড়ে পড়তে পারে। তাতে বিপদ বাড়বে। অন্তত ছ’মাসের জন্য গ্রামবাসীরা যেন নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যান। ব্রিটিশদের কথা মতো কমলা গ্রামের বাসিন্দারা নানা এলাকায় বাড়ি ভাড়া অথবা নিকট আত্মীয়ের বাড়িতে চলে যান। যুদ্ধ মিটে গেলে ফের নিজেদের ভিটেতে ফিরে আসেন তাঁরা। ১৯৪৭ সালে দেশ স্বাধীন হয়। তারপর থেকে কমলা গ্রামেই শান্তিতে বসবাস করতে থাকে পরিবারগুলি। 
ইংরেজরা চলে যাওয়ার এয়ারপোর্টটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে। সেই  জমিতে তৈরি হয় টাকা ছাপানোর কারখানা। তার এক পাশেই কোবরা বাহিনীর প্রশিক্ষণ ক্যাম্প। আরও কিছুটা দূরে বিভিন্ন ফ্যাক্টরি। রাজ্য সরকারের বিভিন্ন সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের সুবিধা পেয়ে ধীরে ধীরে কমলা গ্রামের সুদিন ফিরতে শুরু করেছিল। ২০২২ সালে প্রথমবার বাসিন্দাদের উচ্ছেদের কথা জানায় প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। সেই সময় গ্রামবাসীরা প্রয়োজনীয় তথ্য নিয়ে মন্ত্রকের অফিসেও গিয়েছিলেন বলে জানা গিয়েছে। তাতে অবশ্য লাভের লাভ কিছুই হয়নি। সেটা প্রমাণ করে দিল এবারের নোটিস। 
এদিন চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে গ্রামবাসী দীপঙ্কর দত্ত বলছিলেন, ‘প্রায় একশো বছর পর ওদের জমির কথা মনে পড়েছে। এটা কোনও ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। প্রয়োজনে আমাদের এখানে মেরে ফেলে জমি নিক। কিন্তু এক ইঞ্চি জমিও আমরা ছাড়ব না। জমি সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য আমাদের রয়েছে। প্রয়োজনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হস্তক্ষেপ প্রার্থনা করব।’ জেলা তৃণমূলের সভাপতি সুজয় হাজরা বলেন, ‘কেন্দ্রের নীতিই হচ্ছে মানুষকে সমস্যার মধ্যে ফেলা।’ জেলা বিজেপির সাধারণ সম্পাদক শুভজিৎ রায় বলেন, ‘গ্রামবাসীদের বঞ্চিত করা হবে না। বিকল্প  ব্যবস্থ নেওয়া হবে বলে বিশ্বাস।’-নিজস্ব চিত্র
6h 6m ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

কাজকর্মের ক্ষেত্রে দিনটি বিশেষ শুভ। নতুন যোগাযোগ ও উপার্জন বৃদ্ধির ক্ষেত্র প্রস্তুত হতে পারে। বিদ্যায়...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৪.১৩ টাকা৮৫.৮৭ টাকা
পাউন্ড১০৪.২৭ টাকা১০৭.৯৮ টাকা
ইউরো৮৬.৪২ টাকা৮৯.৭৮ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা