বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
বিকিকিনি

পাখপাখালির হট্টমেলায় মংলাজোরি

জলের উপর এঁকেবেঁকে চলে গিয়েছে খাঁড়িপথ। তারই মাঝে পাখিদের আনাগোনা। নিস্তব্ধ সৌন্দর্য উপভোগ করতে চলুন যাই মংলাজোরি।

জল ছলকাচ্ছে। কখনও উথলে উঠছে পাখপাখালির মধুর বাচালতা। খাঁড়ি জলের স্নিগ্ধ শোভা নিয়ে ওড়িশার মংলাজোরি। চুপিচুপি চোখ রাখি কচুরিপানার ঝোপে। আপাত নীরব জলা ভরে উঠছে নাম না জানা পাখিদের মুখর কলতানে। পরিযায়ী পাখির দেদার মৌরসিপাট্টা মংলাজোরিতে। নলখাগরা-হোগলা-শর বনবাদার ও খাঁড়ি নিয়েই ওড়িশার চিলিকা হ্রদের উত্তরপশ্চিমে পাখিদের উপনিবেশ মংলাজোরি পক্ষীপ্রেমীদের কাছে পরিচিত নাম। রোদ্দুরের ধার নেই তেমন। পৌষালি আমেজে যোগ হয় মৃদু ভেজা বাতাস ও কিঞ্চিৎ রোদ্দুরের আলতো সোহাগ মংলাজোরির খাঁড়িবক্ষে।
বাতাসে থম ধরা জলজ গন্ধ। ঝাঁঝি ও কচুরিপানার ঝোপ লগি ঠেলে কাঠের পানসির বেয়ে চলা। শীতের আগুপিছু পরিযায়ী পাখিরা বসত গড়তে চলে আসে এই তল্লাটে। শীতের ঈষৎ প্রকাশেই হাজার হাজার ভিনদেশি অতিথি পাখিরা এসে ভিড় জমায়। কাস্পিয়ান সাগর, মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়া, লাদাখ, রাশিয়া, সাইবেরিয়া, মঙ্গোলিয়া, আফগানিস্তান, হিমালয় থেকে মংলাজোরির তুখোড় পরিবেশে হাজির হয় যাযাবর পাখিরা। বংশবৃদ্ধির প্রয়োজন তো রয়েছেই, নির্মম আবহাওয়া, খাদ্য অন্বেষণ প্রভূত কারণে এরা চলে আসে আপাত নিরাপদ ও নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে।
পাখিদের আঁতুড়ঘর মংলাজোরির প্রেক্ষাপটে রয়েছে, ‘রত্নাকর’ থেকে ‘বাল্মীকি’ উত্তরণের এক অবাক গল্প। একটা সময় গাঁয়ের চোরাশিকারিরা যথেচ্ছ পাখি মারত। ‘পাখি সংরক্ষক’ ও ‘পাখি প্রদর্শকের’ ভূমিকায় আজ তারাই রূপান্তরিত। স্থানীয় এক সজ্জন নন্দকিশোর ভূজবল, এলাকাবাসীকে বোঝাতে সক্ষম হন পাখি শিকার না করে বরং পাখিদের আতিথেয়তা ও ভরণপোষণে মনোনিবেশ করতে। ক্রমশ গ্রামবাসীরা উপযুক্ত পক্ষীবিশারদে উন্নীত হন। মৎস্যজীবিকার পাশাপাশি এখন এদের এটি সৎ পেশাও।
‘মংলাজোরি ইকো-ট্যুরিজম’-এর আওতায় গ্রাম লাগোয়া প্রায় ১০ কিলোমিটার বিস্তীর্ণ জলাভূমি। দূরে অনুচ্চ পাহাড়টিলা। অটো ভাড়া করে গ্রামের ভেতর দিয়ে জলাভূমির কাছে পৌঁছলাম। জলাভূমির মাঝ বরাবর মেঠো পথ উজিয়ে নজরমিনার ও বোটিং পয়েন্ট। জলাভূমির দুই পাড়ে সার দিয়ে ধীবরদের ডিঙি বাঁধা। জাল বোনা, গলুই ছেঁচে জল মুক্ত করা, সদ্য তোলা মাছগুলি আড়তদারকে পাইকারি দরে বিক্রিবাটা— এসবই এই তল্লাটের রোজনামচা। টিকিট কেটে পানসির ছইয়ের মধ্যে সিঁধিয়ে পা ঝুলিয়ে বসি। নল-হোগলা ঝোপের পাশ কাটিয়ে সারেং সনাতন বেহেরা লগি টেনে পানসি এগিয়ে নিয়ে চলেন। পাখিপ্রদর্শক জয় বেহেরা, আমাদের একটা সাধারণ দূরবিন হাতে ধরিয়ে দেন। বিদেশি বইয়ের পাতা উল্টে নানা পাখির অবয়ব, ডানার রকমফের, ঠোঁটের বাহার, পালকের রং চেনাচ্ছিলেন। খাঁড়িপথে ভেসে ভেসে নজরে পড়ছে হরেক দেশি-বিদেশি পাখিদের হরেক গতিবিধি। চোখের সামনে যেন টেলিভিশনের পর্দার ‘অ্যানিম্যাল প্ল্যানেট’ অথবা ‘ডিসকভারি চ্যানেল’ খুলে রাখা। পাখিদের জমাটি আড্ডা কোথাও ঝাঁকে ঝাঁকে কোথাও আবার ছড়িয়ে ছিটিয়ে তাদের অবস্থান। কিচিরমিচির ডাকে ছয়লাপ মংলাজোরির জলস্থলী।
জলপাহারায় হরেক প্রজাতির পরিযায়ী। যদিও আমি পাখি তেমন চিনি না। পাখিরা ডালে এসে বসছে, ওড়াউড়ি করছে, ডানা ঝাপটে সঙ্গীকে আকৃষ্ট করার কায়দা, আকাশে অনর্গল পাক খেতে থাকা— এইসব দেখতেই ভালো লাগছে বেশ। ক্রমশ চেনা হতে থাকে হুইস্কার্ড টার্ন, উইঙ্গড জাকানা, কটন টিল, ফন্ট টেইল, লেসার হুইস্লিং ডাক, গার্গানে, রাড্ডি শেলডাক, লিটল গ্রেব, নর্দার্ন শভলার, ব্ল্যাক টেইলড গডউইট, ব্রোঞ্জ উইং জাকানা, আইবিস, ওপেন বিলড স্টক, নব বিলড ডাক, গাডওয়াল, ইন্ডিয়ান স্পট বিলড ডাক, এশিয়ান পাম সুইফট, রাড্ডি ব্রেস্টেড ক্রেক, বেইলন্স ক্রেক, প্যাসিফিক গোল্ডেন প্লোভার, গ্রেটার পেন্টেড স্নাইপ, কমন স্নিপ, কলারড প্রেটিঙ্কল, ব্রাউন হেডেড গাল, নর্দান পিন টেইলস, ইন্ডিয়ান স্কিমার, পার্পেল হেরন, কমন ম্যুরহেন, রেড শাঙ্ক, মার্স হেরিয়ার, গ্রে হেডেড সোয়াম্পহেন, লিটল ক্রমোরান্ট, ইয়েলো বিটার্ন, অসপ্রে, সাইট্রিন ওয়াগটেল, স্লেটি ব্রেস্টেড রেইল। আমি অবশ্য এইসব প্রতিনিধিস্থানীয় পাখিদের নামগুলি মাঝির কাছ থেকে শুনে শুনে নোটবইয়ে টুকে রাখছিলাম। এত বিস্তর বিদেশি পাখির তালিকা এই লেখাতে পেশ করলেও, মংলাজোরির পাখপাখালির নির্মল রাজ্যপাট এক্কেবারে চোখের নাগালে দেখতে পাওয়া, তাদের অপ্রতিম চঞ্চলতাকে নিবিড়ভাবে পরখ করা, আমাদের মতো শহুরে পর্যটকদের মন ভালো করে বইকি।
আমাদের ডিঙি-নৌকার সারেঙ বলেছিলেন, প্রচুর পাখি চলে এসেছে এখন। পক্ষীবিশারদ তো আর নই। সেই অর্থে অ্যামেচার কিংবা প্রফেশনাল বার্ড ওয়াচার বা বার্ড ফোটোগ্রাফারও নই। কেবল অপলক নিরীক্ষণ করে যাই এই জলবাসরে কোনও পাখি হয়তো ডানা ঝাপটিয়ে চকিতে জল থেকে ছোঁ মেরে ঠোঁটের ডগায় তুলে নিচ্ছে ছোট মাছ। তাদের উড়ন্ত পাখনা থেকে কী অপূর্বভাবে ছড়িয়ে যাচ্ছে জলের ছিটে। ভারি মনোরম সে দৃশ্য। এদিকে আবার গ্রামীণ কিছু পাখি যেমন শামুকখোল, মাছরাঙা, কালো বক, জলমোরগ, সারস, পানকৌড়ি, ব্রাহ্মণী হাঁস, বালি হাঁস, গাংচিল সঙ্গত দিচ্ছে অতিথি পরিযায়ীদের সঙ্গে। পাখিদের চমৎকার জমজমাট পাঠশালা। পরিবেশ ও প্রকৃতির নির্জনতাকে মর্যাদা দিয়ে নিজেদের মধ্যে কথাও বলি ফিসফিসিয়ে। 
শুধুই কি আর পাখিই দেখা! ক্যামেরার লেন্সের সঙ্গে মনের কুঠুরিতেও টুকে রাখি মংলাজোরির প্রতিটি মুহূর্তকথা। চটজলদি সোশ্যাল মিডিয়ায় চালান করে দিই সদ্য তোলা কয়েকটি ছবি। লাইক-কমেন্টস জমতে থাকে। দৃষ্টির নাগালে থাকা পাখিদের সঙ্গে মনে মনে কত যে সাধ-আহ্লাদের গল্প জুড়ি। ওরাও যে রমণীয় করে রেখেছে আমার এই ঘণ্টা তিনেকের নিপাট জলভ্রমণ। 
কীভাবে যাবেন: কলকাতা থেকে ওড়িশার ব্রহ্মপুর স্টেশনে নেমে সেখান থেকে গাড়ি নিয়ে পৌঁছতে পারেন মংলাজোরি। বিমানে যেতে চাইলে ভুবনেশ্বরে নেমে গাড়ি ভাড়া করতে হবে। কলকাতা থেকে সড়কপথেও যেতে পারেন।  
 মধুছন্দা মিত্রঘোষ
1d ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

সন্তানের স্বাস্থ্যহানির কারণে মানসিক অস্থিরতা ও উদ্বেগ। পরীক্ষায় মনোমতো ফললাভ ও নামী প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৫.৭৮ টাকা৮৭.৫২ টাকা
পাউন্ড১০৫.৬০ টাকা১০৯.৩৩ টাকা
ইউরো৮৮.১০ টাকা৯১.৪৮ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা