নিকটজনের স্বাস্থ্য সমস্যায় মানসিক অস্থিরতা। মুদ্রণ বা সংবাদপত্রের ব্যবসা,বৃত্তি শিক্ষাকেন্দ্রের পরিচালনায় সাফল্য। ... বিশদ
ইতিমধ্যে অসমে চূড়ান্ত এনআরসি তালিকা থেকে নাম বাদ গিয়েছে ১৯ লক্ষ মানুষের। তার মধ্যে ১২ লক্ষই হিন্দু। এবার তাঁদের ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে গিয়ে প্রমাণ করতে হবে, তাঁরা এদেশেরই বৈধ নাগরিক। আর এনআরসি তালিকা থেকে বাদ যাওয়া নাম তোলাতে ফের খসবে মোটা অঙ্কের গাঁটের কড়ি। আইনজীবীদের টাকা জোগাতেই হিমশিম খেতে হবে তাঁদের। গরিব মানুষ এত টাকা কোথায় পাবেন, তা নিয়েই উঠছে প্রশ্ন। মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা গোষ্ঠী রাইটস অ্যান্ড রিস্কস অ্যানালিসিস (আরআরএজি) গ্রুপ সম্প্রতি প্রকাশ করেছে এমনই একটি সমীক্ষা রিপোর্ট। যেখানে এনআরসি খসড়া তালিকা থেকে বাদ পড়া মানুষের ফের নাম তোলানোর প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে কত খরচ হয়েছে তার হিসেব কষা হয়েছে। সেই রিপোর্টেই দেখা যাচ্ছে এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। রিপোর্ট বলছে, সমীক্ষায় যে ৬২ জনের সঙ্গে কথা বলা হয়েছিল, তারা এনআরসির শুনানিতে হাজির হয়েছিলেন। নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে গিয়ে তাঁদের মোট খরচ হয়েছে ১১ লক্ষ ৮২ হাজার টাকা, অর্থাৎ মাথা পিছু ১৯ হাজার ৬৫ টাকা। আরআরএজির ডিরেক্টর সুহাস চাকমা বলছেন, যদি এনআরসি থেকে বাদ যাওয়া ব্যক্তিরা মাথা পিছু ১৯ হাজার ৬৫ টাকা করে খরচ করেন, তাহলে খসড়া থেকে বাদ যাওয়া ৪১ লক্ষ ১০ হাজার ১৬৯ জনের মোট খরচ দাঁড়ায় ৭ হাজার ৮৩৬ কোটি ৩ লক্ষ ৭১ হাজার ৯৮৫ টাকা। নাম তোলাতে গিয়ে কেউ বিক্রি করেছেন গরু-বাছুর, আবার কেউ বেচে দিয়েছেন সাধের সুপারি বাগান, কাঁঠাল বাগান, কৃষি জমি। আর যাঁদের সে সব কিছুই নেই, তাঁরা চড়া সুদে টাকা ধার করে খরচ মেটানোর চেষ্টা করেছেন। বাচ্চা, বুড়ো, গর্ভবতী সবাই প্রায় নিশিধরার মতো দৌড়াদৌড়ি করেছেন।
এনআরসি-র পরিণাম কত নিদারুণ হতে পারে, কীভাবে লক্ষ লক্ষ বাসিন্দার নাম নাগরিকের তালিকা থেকে বাদ পড়ে যায়, অসম তার টাটকা প্রমাণ। সরকার মনে করেছে, সেখানকার ১৯ লক্ষ বসবাসকারীর কাছে নিজেদের ভারতীয় হিসেবে ‘প্রমাণ’ করার মতো যথেষ্ট নথিপত্র নেই। নিজের দেশে বাবা-ঠাকুর্দা-চোদ্দো পুরুষের ‘অস্তিত্ব’-এর কাগজপত্র তাঁরা দাখিল করতে পারেননি। তাই জাতীয় নাগরিকপঞ্জিতে তাঁদের নাম উঠল না! সোজা কথায়, যাঁদের নথিপত্র সরকারের কাছে ‘গ্রহণযোগ্য’ বা ‘যথেষ্ট’ বলে মনে হবে না, তাঁরা বংশপরম্পরায় এ দেশে বসবাসকারী হলেও পার পাবেন না। অসম সেটা বুঝিয়ে দিয়েছে।
অসমের আঁচলপাড়া গ্রামের বিজ্ঞানের শিক্ষক বছর সাঁইত্রিশের সামসুল হক নিজে একজন এনআরসির আধিকারিক, কিন্তু নিজের বোন আবিদা সিদ্দিকের নাম তালিকায় যোগ করতে হিমশিম খাচ্ছেন। সামসুলের পরিবার ইতিমধ্যেই আবিদার জন্য ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে আবেদন জানিয়েছেন। সামসুল হক জানিয়েছেন, ‘১৯৬৬-এর ভোটার তালিকায় নাম তোলার জন্য আমাদের আইনজীবী শুধু দলিলের অফিসিয়াল সার্টিফাইড কপির জন্য এক হাজার টাকা চেয়েছেন। সেই চাহিদা বেড়েই চলেছে।’ এনআরসি থেকে বাদ যাওয়া ব্যক্তির খরচ আকাশ ছোঁয়া। কারণ, যখন একটি পরিবারের মধ্যে শুধুমাত্র একজন তালিকা থেকে বাদ যান, তখন নাম তোলার প্রক্রিয়ায় শুধুমাত্র বাদ যাওয়া ব্যক্তিই নন, বরং তাঁকে এনআরসি কর্তৃপক্ষের সামনে হাজির করতে হয় পরিবারের সমস্ত প্রাপ্তবয়স্ক সদস্য কিংবা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয়দের। সেই সদস্যরা বিবেচিত হন বাদ যাওয়া ব্যক্তির সাক্ষী হিসেবে। খরচ একলাফে আরও অনেকটাই বেড়ে যায়। কারণ একবার নয়, প্রয়োজন অনুযায়ী বারবার একই প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হতে পারে বাদ যাওয়া ব্যক্তিকে। সেই সঙ্গে রয়েছে ভৌগোলিক দূরত্বের বিষয়টি। অনেক সময় এনআরসি খসড়া থেকে বাদ যাওয়া ব্যক্তিকে এনআরসি সেবা কেন্দ্রের তরফে নোটিশ পাঠানো হয়েছে, বাবা-মা কিংবা দাদু-ঠাকুমাদের উত্তরাধিকার প্রমাণে যেতে হবে অন্য জেলায়। ফলে স্বভাবতই খরচ বেড়ে যাচ্ছে বহুগুণ। কোথায় যাবেন গরিব মানুষ? প্রশ্ন তুলছেন অসমের এনআরসি-ছুটরা।