দিব্যেন্দু বিশ্বাস, নয়াদিল্লি, ৭ জানুয়ারি: দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনার পর দু’দিন কেটে গিয়েছে। এখনও অধরা মূল অভিযুক্তরা। উল্টে জেএনইউ ছাত্র সংসদের সভানেত্রী এসএফআইয়ের ঐশী ঘোষ সহ ২০ জন ‘আক্রান্তে’র বিরুদ্ধেই এফআইআর দায়ের করে মামলা রুজু করেছে দিল্লি পুলিস। যার জেরে চাপা অসন্তোষ রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের একটি বড় অংশের মধ্যেই। আর এই পুলিসি তদন্তের মধ্যেই আজ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই এবিভিপিকে কার্যত ক্লিনচিট দিয়ে বলেছেন, ‘জেএনইউ কাণ্ডে অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ কোনওভাবেই জড়িত নয়।’ পুলিসি তদন্ত শেষ হওয়ার আগে কীভাবে একজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এই মন্তব্য করতে পারেন, তা নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে। যদিও আর এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রকাশ জাভরেকর জানিয়েছেন, ‘কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইতিমধ্যেই এই ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। মুখোশধারী কারা ছিল, তা খুব শীঘ্রই প্রকাশ্যে আসবে।’ এর মধ্যেই এদিন জেএনইউয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এম জগদীশ কুমার। তিনি বলেন, ‘রবিবারের ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক। কিন্তু এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কাজকর্ম চালাতে হবে। সকলে মিলে ফের নতুন করে শুরু করতে হবে।’ গোটা ঘটনার রিপোর্ট তিনি ইতিমধ্যেই দিল্লির লেফটেন্যান্ট গভর্নর এবং কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রকে পাঠিয়ে দিয়েছেন। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি চিন্তামণি মহাপাত্রের অভিযোগ, রবিবার পড়ুয়াদের উপর সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করা হয়েছে। এরই মধ্যে এদিন জেএনইউ পড়ুয়াদের প্রতি সংহতি জানাতে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা নাগাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন অভিনেত্রী দীপিকা পাড়ুকোন। ক্যাম্পাসের মধ্যে সবরমতী টি পয়েন্টে তিনি পড়ুয়াদের সঙ্গে প্রায় মিনিট দশেক দাঁড়িয়ে ছিলেন। তবে কোনও বক্তব্য তিনি রাখেননি।
ঐশী ঘোষ সহ ২০ জনের বিরুদ্ধে দিল্লি পুলিস যে এফআইআর দায়ের করেছে, সেখানে বলা হয়েছে, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের সিআইএস কার্যালয়ে ভাঙচুর চালিয়েছেন ওই ২০ জন। মারধর করা হয়েছে নিরাপত্তারক্ষীদেরও।’ ঐশীর বিরুদ্ধে দুটো এফআইআর করেছে দিল্লি পুলিস। এ ব্যাপারে ঐশী বলেন, ‘পুলিস গল্প তৈরি করছে। কিছু করার আগে আমার বিরুদ্ধে আগে প্রমাণ জোগাড় করতে হবে।’ এসএফআইয়ের সাধারণ সম্পাদক ময়ূখ বিশ্বাসের অভিযোগ, যাঁরাই আরএসএস, বিজেপির বিরোধিতা করছেন, তাঁদেরকেই মেরে ফেলার চেষ্টা হচ্ছে, অথবা মিথ্যে মামলায় ফাঁসিয়ে জেলে পাঠানো হচ্ছে। এদিন গোটা ক্যাম্পাস জুড়েই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন দুজন বাঙালি। একজন ঐশী ঘোষ, অন্যজন বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম ফ্যাকাল্টি মেম্বার সুচরিতা সেন। রবিবার হামলা হয়েছে সুচরিতা দেবীর উপরও। এদিন সুচরিতা দেবীর বিভাগীয় সহকর্মী বিক্রমাদিত্য চৌধুরী বলেন, ‘উনি বরাবরই খুব লড়াকু। যেকোনও অন্যায় দেখলেই প্রতিবাদ করেন।’ এদিন তাঁর পক্ষে পুলিসে অভিযোগ দায়ের করা হয়।
রবিবারের ঘটনার পর এদিনও ক্যাম্পাস ও তার বাইরে মোতায়েন ছিল অসংখ্য পুলিস। রাস্তাজুড়ে ছিল ব্যারিকেড। দিল্লি ক্রাইম ব্রাঞ্চের একটি দল তদন্ত করতে আজ ক্যাম্পাসে আসে। আসেন ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরাও। রবিবারের ঘটনার প্রতিবাদে সবরমতী টি পয়েন্টে সমাবেশ করে জেএনইউ শিক্ষক সংগঠন।