গুরুত্বপূর্ণ কাজে সাফল্য। আর্থিক ও বিদ্যাবিষয়ে দিনটি শুভ। শুত্রুভাবাপন্নদের এড়িয়ে চলুন। ... বিশদ
অতুলপ্রসাদ সেনের বাড়িতে অথবা বেঙ্গলি ক্লাবের উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের আসরে রবীন্দ্রনাথ কোন শহরে আসতেন বারংবার? বাংলার বাইরে কোন শহরের আর্ট কলেজের প্রিন্সিপাল হয়ে অসিত কুমার হালদার বাঙালির শিল্পচৈতন্যকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরের মর্যাদায় উন্নীত করেছেন? পাহাড়ী সান্যালের প্রাণের শহর কোথায় ছিল? কোন শহরের নবাব ব্রিটিশের অভব্যতাকে সহ্য করতে না পেরে সব ছেড়ে রাজ্যপাট এবং সংস্কৃতিকে সঙ্গে নিয়ে কলকাতায় গিয়ে উঠলেন?
মুসখুরাইয়ে... আপ লখনউ মে হ্যায়।
ছিল লখনউ তেহজিব, অর্থাৎ সৌজন্য ও ভদ্রতা। অন্যদিকে ছিল নবাবি সংস্কৃতির খানপান গান বাজনা। ঠিক পাশাপাশি বাঙালির সাংস্কৃতিক দ্বিতীয় রাজধানী। শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, আইন ব্যবসা, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, ডাক্তার অথবা ব্যবসায়ী কিংবা শিল্প পৃষ্ঠপোষকে কারা ছিলেন অগ্রগামী? বাঙালি। লখনউয়ের বাঙালি কালচার বঙ্গসংস্কৃতির এক ঐতিহাসিক অধ্যায়। এহেন লখনউয়ের ধর্মতলা হজরতগঞ্জে যে বাঙালি দাপট জ্বলজ্বল করেছে, তায় আর আশ্চর্য কী? কিন্তু লখনউয়ের এপিসেন্টার সেই হজরতগঞ্জের বাঙালি ঐতিহ্যের শেষ শিখার নাম এস এন রয় ট্রফি শপ। একে একে নিভে গিয়েছে সব বাঙালি দেউটি। জেগে আছে এবং জ্বলে আছে একমাত্র এই প্রাচীন ঐতিহ্যপূর্ণ বাঙালি মালিকানার দোকান, যা নিজেই এক ইতিহাস বই।
হজরতগঞ্জের কেন্দ্রস্থলে এস এন রয় ট্রফি শপে আজও সত্তরোর্ধ্ব রাজকুমার রায় প্রতিদিন এসে বসেন। সামনে জনস্রোত দেখেন। এস এন রয় মানে কী? শুভেন্দ্রনারায়ণ রয়। অরুণ কৃষ্ণ রায় ছিলেন ঢাকা বিক্রমপুরের মানুষ। ১৯১১ সালে ভারতের রাজধানী কলকাতা থেকে দিল্লিতে স্থানান্তরিত হওয়ার পর অরুণ রায় আসেন কলকাতায়। তারপর লখনউ। সেই আসা। মুন্সি নওলকিশোর ভার্গবের হাতেই প্রায় গড়ে উঠল লখনউয়ের হজরতগঞ্জ। রাজকুমার রায় বললেন, ‘সেই থেকে ঠাকুরদার দোকান চালু হল। মুদ্রা, ট্রফি, শিশুদের খেলনা দিয়ে। আজ এতকাল পরও এস এন রয় ট্রফিই উত্তরপ্রদেশের প্রাচীন খ্যাতনামা স্কুল বা ক্লাবগুলির কাছে সবথেকে বিশ্বাসযোগ্য ব্র্যান্ড।’ রাজকুমার রায়ের বাবার নামেই দোকান।
লখনউয়ের বাঙালির কাহিনি কতটা চমকপ্রদ? রাজকুমার রায় গল্পের জাদুকর। জানালেন, ‘হেমন্ত চাকী বিপ্লবী প্রফুল্ল চাকীর ভাই। নাটোর থেকে হেঁটে এসেছিলেন লখনউ... জানেন সেকথা? স্রেফ বেহালা শিখতে। আমার বাবাকে তিনি ইংরেজি পড়াতেন। আর আমার বাবা শুভেন্দ্রনাথ ছিলেন এক বিস্ময়কর মানুষ। লখনউয়ে বাঙালির সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চা কেমন ছিল, একটা উদাহরণ দিলে বুঝবেন। বাবার একটা খামার বাড়ি ছিল সুলতানপুর রোডে। সেই খামারে একটি কুয়ো খোঁড়া হয়েছিল। উত্তরপ্রদেশের এক গ্রাম্য অঞ্চলে খামারবাড়ির কুয়োর গায়ে কী লেখা ছিল আন্দাজ করুন তো?’ রাজকুমার রায় হাসতে হাসতে বললেন, ‘কুয়োর সর্বত্র ছিল শেলির কবিতা!’ এই ছিল লখনউয়ের বাঙালি। আর লখনউ তেহজিব? ওই দেখুন মে ফেয়ার। ওর পাশেই ছিল রাম আদবানির বুকশপ। উৎসাহী কিশোর-তরুণদের বই নিয়ে নাড়াচাড়া করতে দেখলে রাম আদবানি নিজেই তাঁদের ওই বই কিনে দিতেন নিজের দোকান থেকে! রাম আদবানির বুকশপ নেই। ব্রিটিশ বুক শপ নেই। কফি হাউস বন্ধ। সেন অ্যান্ড সান্যাল শপ বন্ধ। লখনউয়ে আছে শুধু স্মৃতি। রোমন্থনের শেষ সংযোগসেতু ওই যে, এস এন রয় ট্রফি শপে বসে আছেন বৃদ্ধ রাজকুমার রায়! একমাত্র পুরনো লখনউ হয়ে!