নিজস্ব প্রতিনিধি, মেদিনীপুর: ‘রাস্তাশ্রী-পথশ্রী’ প্রকল্পই বদলে দিচ্ছে গ্রামীণ মানুষের জনজীবন। আগে যে রাস্তা নিয়ে ক্ষোভে ফুঁসতেন মানুষ, গত একবছরেই সেই ক্ষোভে অনেকটাই প্রলেপ দিতে সক্ষম হয়েছে তৃণমূল সরকার। ‘রাস্তাশ্রী-পথশ্রী’ প্রকল্প এবং ‘সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী’তে অভিযোগ জানিয়ে গত এক বছরে প্রায় ১৭০০টির বেশি গ্রামীণ রাস্তা পেয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা। এরমধ্যে অধিকাংশ রাস্তাই তৈরি হয়ে গিয়েছে। বাকি রাস্তা তৈরির কাজ চলছে জোরকদমে। নিজেদের সরকারের এই সাফল্যকে হাতিয়ার করেই লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে ঝড় তুলছে তৃণমূল। ২০২৩ সালের মার্চের শেষে গ্রামীণ এলাকায় নতুন রাস্তা নির্মাণ এবং মেরামতের জন্য ‘পথশ্রী-রাস্তাশ্রী’ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথম পর্যায়ে এই প্রকল্পে মোট ৫০২টি রাস্তার অনুমোদন পায় পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা। প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ হয় প্রায় ২৪৭ কোটি টাকা। এরমধ্যে প্রায় সমস্ত রাস্তার কাজ ইতিমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। এরপরেই দ্বিতীয় দফায় স্টেট ফান্ড থেকে ফের ৫৯টি রাস্তার পায় পশ্চিম মেদিনীপুর। মোট ২৬ কোটি টাকা খরচে সেইসব রাস্তার কাজও ইতিমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। এরই পাশাপাশি ‘সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী’তে অভিযোগ জানিয়ে ‘পথশ্রী-৩’ প্রকল্পে মোট ১১৪৩টি রাস্তার অনুমোদন মেলে। ভোটের আগেই সেইসব রাস্তার কাজ শুরু হয় জেলায়। ইতিমধ্যেই প্রায় ৫০ শতাংশ রাস্তার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। রাস্তা তৈরিতে খরচ হচ্ছে প্রায় ৬২৫ কোটি টাকা। শুধু তাই নয়, পঞ্চদশ ফিনান্স কমিশনের টাকাতেও বিপুল রাস্তাঘাট সংস্কারের কাজ হচ্ছে। ২০২০-২১ অর্থবর্ষ থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষ পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণে ১১৫ কোটি টাকা পাওয়া গিয়েছে। অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে, গত এক বছরে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় প্রায় ৯০০ কোটি টাকা খরচে প্রায় ১৭০৪টি গ্রামীণ রাস্তা তৈরি হচ্ছে। রাস্তা তৈরির ফলে ব্যাপক উপকৃত হচ্ছে গ্রামাঞ্চলের মানুষ। কংক্রিট ও পাকা রাস্তা দিয়ে প্রত্যন্ত গ্ৰামীণ এলাকার চাষিরা মাঠের ফসল সহজেই বাজারে নিয়ে যেতে পারছেন। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা গ্রামে গ্রামে গিয়ে ফেরি করতে পারছেন। যোগাযোগ ব্যাবস্থার উন্নতির সঙ্গে গ্ৰামীণ এলাকার অর্থনীতির বিকাশও ঘটছে। জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ নির্মল ঘোষ বলেন, ‘কেন্দ্রীয় বঞ্চনা সত্বেও এত সংখ্যক গ্রামীণ রাস্তা তৈরি একমাত্র মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পক্ষেই সম্ভব। এত রাস্তা তৈরির ফলে গ্রামীণ অর্থনীতির আমূল পরিবর্তন হয়েছে।’
মানুষের বাড়ির সামনে নতুন পাকা রাস্তা তৃণমূলকে বাড়তি অক্সিজেন দেবে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক মহল। ইতিমধ্যেই নিজেদের সরকারের বিপুল রাস্তা তৈরির এই সাফল্যকে লোকসভা নির্বাচনে আরও বড় করে প্রচার করতে চাইছে তৃণমূল নেতৃত্ব। মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলার যুব সভাপতি নির্মাল্য চক্রবর্তী বলেন, ‘একটা সময় জঙ্গলমহলের এই জেলাকে পিছিয়ে থাকা জেলা বলেই চিনত রাজ্যের মানুষ। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর হাত ধরেই এগিয়ে যাচ্ছে পশ্চিম মেদিনীপুর। সরকারের এই সাফল্য লিফলেট আকারে আমরা মানুষের বাড়িতে বাড়িতে পৌঁছে দিচ্ছি।’