নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: প্রভাবশালী হওয়ায় ৩০কোটি টাকা ঋণখেলাপি সিরাজ খানের হোটেল ও গেস্টহাউসের দখল নিতে পারেনি ব্যাঙ্ক। নিয়ম অনুযায়ী জেলাশাসকের কাছ থেকে বঙ্গীয় গ্রামীণ বিকাশ ব্যাঙ্ক দখলের অনুমতি জোগাড় করে। তারপর প্রয়োজনীয় ফোর্স চেয়ে জেলা পুলিসের কাছে দেড় লক্ষ টাকা জমা করেন ব্যাঙ্কের রিজিওনাল ম্যানেজার। কিন্তু, জেলা পুলিস প্রয়োজনীয় ফোর্স দেয়নি। ঘটনাটি ২০২২সালের। নিয়ম অনুযায়ী ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ পুলিসকে ফি দিয়েও তাদের থেকে সহযোগিতা পায়নি। যেকারণে মেচেদায় সিরাজ খানের গেস্টহাউস এবং নন্দকুমার হাইরোড মোড়ে তাঁর হোটেলের দখল নেওয়া যায়নি। ব্যাঙ্ক কাগজে-কলমে দখল নিয়েও ফিজিক্যালি সেটা পায়নি। তাই নিলামেও তুলতে পারেনি।
ব্যাঙ্ক ডিফল্টার গ্রাহকের মর্টগেজ রাখা সম্পত্তি দখল করার জন্য জেলাশাসকের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হয়। সিরাজ খানের গেস্টহাউস এবং হোটেল দখল করার জন্য সেই নিয়ম অনুসরণ করেছিল বঙ্গীয় গ্রামীণ বিকাশ ব্যাঙ্ক। তারপর সেই সম্পত্তি দখল নেওয়ার জন্য পুলিসের সহযোগিতা লাগে। এজন্য পুলিসকে ফি দিতে হয়। আইনশৃঙ্খলার প্রশ্ন জড়িয়ে থাকায় পুলিসকে প্রয়োজনীয় ফোর্স এবং মোকাবিলা করার যাবতীয় সরঞ্জাম নিয়ে যেতে হয়। বাড়িতে কেউ অসুস্থ থাকলে তাঁকে সরানোর জন্য অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে যাওয়ার নিয়ম আছে। এজন্য ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে পেমেন্ট করতে হয়। সিরাজ খানের দু’টি সম্পত্তি দখলের জন্যও এই নিয়ম মেনেছিল ব্যাঙ্ক। কিন্তু, কোনও কারণে তৎকালীন পুলিস সুপার ফোর্স পাঠাননি। তাই সম্পত্তি দখল নিতে পারেনি ব্যাঙ্ক। এখনও মেচেদায় ওই গেস্টহাউস রমরমিয়ে চলছে। তমলুক শহরে বিতর্কিত আবাসনের প্রমোটার সিরাজ খান ২০০৮-’০৯সাল থেকে ২০১৬-’১৭সাল পর্যন্ত ২৪কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন। এখন বকেয়ার পরিমাণ ৩০কোটি টাকা। বঙ্গীয় গ্রামীণ বিকাশ ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যানের অনুমোদনে এই ঋণ মঞ্জুর হয়েছিল। বিপুল টাকা ঋণখেলাপির ঘটনায় ব্যাঙ্কে অভ্যন্তরীণ তদন্ত হয়। এনিয়ে ব্যাঙ্কের অনুমতিতে সিবিআই তদন্তও হয়েছে। নন্দকুমার হাইরোড মোড়ে সিরাজের একটি হোটেল আছে। যদিও এখন সেটি বন্ধ। এছাড়া মেচেদায় গেস্টহাউস আছে। ওই দু’টি সম্পত্তি মর্টগেজ রাখা ছিল। জেলা পরিষদের প্রাক্তন কর্মাধ্যক্ষ তথা তৃণমূল নেতা সিরাজ খানের ওই দু’টি সম্পত্তি দখল নিতে গিয়েও ধাক্কা খেয়েছে ব্যাঙ্ক।
সিরাজের জয়েন্ট ভেঞ্চারে কোটি কোটি টাকায় তৈরি তমলুক শহরে বহুতল আবাসন ভেঙে ফেলার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। বেসমেন্ট ছাড়াই সাতটি ব্লকে প্রায় দু’শো ফ্ল্যাট তৈরি হয়। ১৫২টি পরিবার বসবাস করছে। আরও বেশকিছু কমার্শিয়াল ফ্ল্যাট আছে। নিয়ম ভেঙে ফ্ল্যাট তৈরির ঘটনায় হাইকোর্টের এই নির্দেশে তোলপাড় গোটা তমলুক। এক মাসের মধ্যে ফ্ল্যাটের আবাসিকদের সমুহ টাকা ফেরতের নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। গোটা ঘটনায় সিরাজ ও অপর প্রমোটিং সংস্থা বেকায়দায় পড়েছে। বঙ্গীয় গ্রামীণ বিকাশ ব্যাঙ্কের তৎকালীন রিজিওনাল ম্যানেজার বিপ্লব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, আমরা সিরাজ খানের হোটেল ও গেস্টহাউসের দখল নেওয়ার জন্য ফোর্স পাইনি। অথচ এজন্য দেড় লক্ষ টাকা পেমেন্ট করা হয়েছিল। পুলিস সুপার সৌম্যদীপ ভট্টাচার্য বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। আমার জয়েন করার আগের ঘটনা।