কাজকর্ম ও উচ্চশিক্ষায় দিনটি শুভ। ব্যবসার উন্নতির জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ। আয় বাড়বে। ... বিশদ
একবিংশ শতাব্দীতেও জলঙ্গির প্রান্তিক দুই চরে সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবাকে কার্যত নিষ্ঠুর রসিকতাই বলা যেতে পারে। বছর দশেক আগে সরকারি আনুকূল্যে একখানি উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্র তৈরি হলেও সেখানে আসেন না কোনও স্বাস্থ্যকর্মী। চিকিৎসা পরিষেবার জন্য তাই এখনও ভরসা ফরিদবাবুর মতো গুটি কয়েক কোয়াক ডাক্তার। তাঁরাই প্রতিদিন বিএসএফের সাতপাঁচ প্রশ্নের জবাবদিহি করে গ্রামে গিয়ে চিকিৎসা পরিষেবা দেন।
জলঙ্গির পদ্মার সরু নালা পেরিয়ে বিএসএফকে জবাবদিহি করার পর অনুমতি মেলে ওই দুই জনপদে যাওয়ার। দুই চর মিলিয়ে জনসংখ্যা হাজার তিনেকের আশেপাশে। বছর দশেক আগে তাঁদের চিকিৎসার কথা মাথায় রেখে চর পরাশপুরে একটি উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্র তৈরি করা হয়েছিল। যদিও উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্র তৈরি হলেও সেখানে আসেন না কোনও স্বাস্থ্যকর্মী। অব্যবহারে উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি ভূতুড়ে বাড়িতে পরিণত হয়েছে। গোটা জনপদের সব থেকে কাছের চিকিৎসা কেন্দ্রটি প্রায় তেরো কিলোমিটার দূরে জলঙ্গির সাদিখাঁরদিয়াড়ে। সেখানে যেতে গেলেও বিএসএফকে হাজার জবাবদিহি করে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ফিরে আসতে হয়। যদিও সমস্যা খুব বেশি হলে বিএসএফও হাসপাতালে নিয়ে যেতে সহায়তা করে। কিন্তু সেই ছবিটা খুব স্বাভাবিক নয়। তাই চরের মানুষের স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখার দায়িত্ব গুটিকয়েক কোয়াক ডাক্তারের ওপরেই। প্রতিদিন সকাল এগারোটার আগেই ব্যাগে করে ওষুধ নিয়ে চরের বালিপথ পেরিয়ে তাঁরা চরে যান। এরপরে দুই চরের অলিতে গলিতে গিয়ে রোগীদের চিকিৎসা করেন। আবার সন্ধ্যা হলেই ওপারে ফিরে যান। দীর্ঘদিন ধরে অভিজ্ঞতার কারণে ছোটখাটো শারীরিক সমস্যাগুলি চট করে ধরে নিয়ে ওষুধ দিয়ে দেন ডাক্তারবাবুরা। কোন ওষুধ কখন খেতে হবে তাও বুঝিয়ে দেন। যদি কারও স্যালাইন লাগে তাও দেন। এভাবেই বছরের পর বছর ধরে ঝড়, বৃষ্টি, রোদ উপেক্ষা করেই চরের মানুষের স্বাস্থ্য রক্ষা করেন তাঁরা। জলঙ্গির ঘোষপাড়া সর্বপল্লির ফরিদ রহমান ওইরকমই একজন কোয়াক। দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে তিনি এভাবেই চরে ডাক্তারি করে আসছেন। তিনি বলেন, ২০০১ সাল থেকে তেইশ বছর ধরে এভাবেই প্রতিদিন মানুষের চিকিৎসা করি। আমি চিকিৎসা বিজ্ঞানের কিছু কোর্সও করেছি। আমার হাতেই চরের প্রচুর মানুষ সুস্থ হয়েছেন। তবে একা হাতে এত মানুষের চিকিৎসা করা কঠিন। বিশেষ করে রাতের বেলা তাদের ভীষণ সমস্যা হয়। উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি চালু হলে ভালো হয়।
চর উদয়খণ্ড কলোনির ষাটোর্ধ্ব বুদ্ধেশ্বর বিশ্বাস বলেন, এত বছর ধরে চরে বসবাস করছি। এত মানুষ এখানকার ভোটার। ভোটের সময় সব করে দিব বললেও ভোটের পর আর নেতাদের খেয়াল থাকে না। একটা উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্র তৈরি হয়েছিল তাতে কোনও ডাক্তার কিংবা স্বাস্থ্যকর্মী আসে না। জ্বর, সর্দি, কাশির জন্য ফরিদই ভরসা আমাদের। কিছু হলে ওকে ফোন করলেই বাড়িতে চলে আসে। ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি আবার চালু করা হলে ভালো হয়। নিজস্ব চিত্র