যানবাহন ক্রয়বিক্রয়ে অর্থলাভের যোগ আছে। চাকরিতে উন্নতি হবে। প্রিয়জন সম্পর্কে উন্নতি। ... বিশদ
আমতার কলাতলায় বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন গৃহবধূ বর্ণালি অধিকারী। ভোট নিয়ে প্রশ্ন করলে প্রথমটায় চুপ করে থাকলেও পরে বললেন, এখানে তৃণমূল ছাড়া আর আছে কে? সারা বছর তো ওদেরই দেখা যায়। বিপদে-আপদে ডাকলে শাসকদলের নেতা-কর্মীরাই আসেন। দিদির লক্ষ্মীর ভাণ্ডার স্বাবলম্বী করেছে আমাদের। ক’দিন আগেই পরিবারের এক সদস্যের অপারেশনের প্রয়োজন হয়। স্বাস্থ্যসাথী কার্ড থাকায় কোনও অসুবিধা হয়নি। শ্যামপুরের বাসিন্দা সজল ঘরামির কথায়, গ্রামের পড়ুয়ারা আগে হেঁটে স্কুলে যেত, এখন সবুজসাথীর সাইকেল পাওয়ায় ওদের সুবিধাই হয়েছে। ফতেপুর গ্রামের মহিলা রত্না দলুই স্পষ্টই বলে দিলেন, দিদি ছিলেন বলেই তাঁর কাঁচা ঘর পাকা হয়েছে। স্বামীকেও একশো দিনের কাজের বকেয়া টাকা দিদি দিয়েছেন। আক্ষেপ একটাই, সাজদা আহমেদকে দেখেননি গ্রামের কেউ। তবে বিধায়ক বা তৃণমূলের অন্য নেতারা থাকায় সমস্যা হয় না।
উলুবেড়িয়ার ভোট ময়দানে কার্যত ফাঁকা মাঠেই লড়ছেন সাজদা। এই লোকসভার কেন্দ্রের অন্তর্গত সাতটি বিধানসভা কেন্দ্র বাগনান, শ্যামপুর, উলুবেড়িয়া উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্ব, আমতা, উদয়নারায়ণপুর ঘুরলেও বিরোধী দলের কোনও দেওয়াল লিখন চোখে পড়ল না। যেটুকু দেওয়াল লেখা, তার প্রায় সবটাই সাজদা আহমেদকে ভোট দেওয়ার আবেদন জানিয়ে। পতাকা যে ক’টা উড়ছে, তাও তৃণমূলের। হাতেগোনা কয়েকটি জায়গায় চোখে পড়ল কংগ্রেস ও বিজেপি’র পতাকা। আইএসএফ আছে নামেই, গোটা কেন্দ্রে তাদের তেমন প্রভাব চোখে পড়ল না।
যে দল যখন রাজ্যে ক্ষমতায় থেকেছে, উলুবেড়িয়া উজার করে ভোট দিয়েছে তাদের। এই কেন্দ্রের ৩৩ শতাংশ ভোটারই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ। অল্প কিছু আদিবাসী রয়েছেন। টানা সাতবার এই কেন্দ্র থেকে জিতে সাংসদ হন সিপিএমের হান্নান মোল্লা। ২০০৯ সালে প্রথম এই কেন্দ্রে জয়ী হন তৃণমূলের সুলতান আহমেদ। ২০১৭ সুলতানের মৃত্যুর পর ২০১৮ সালের উপনির্বাচনে জয়ী হন তাঁর স্ত্রী সাজদা। পরের বছরও জয়ীর শিরোপা পান তিনি। ২০০৯ ও ২০১৪ সালে এই কেন্দ্রে দ্বিতীয় স্থানে ছিল বামেরা। ২০১৯ সালে বিজেপি উঠে আসে দ্বিতীয় স্থানে। সেবার তৃণমূল পেয়েছিল ৫৩.৪ শতাংশ ভোট। সংখ্যালঘু ভোট পুরোটাই গিয়েছে শাসকদলের বাক্সে। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না বলে মনে করছে তৃণমূল নেতৃত্ব। বিধায়করা ঘরে ঘরে গিয়ে উন্নয়নের কথা তুলে ধরছেন। যাতে মার্জিন আরও কিছুটা বাড়ে। বিরোধীরা বলছেন, এই কেন্দ্রের একাধিক জায়গায় শাসকদলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব রয়েছে। তা যাতে মাথাচাড়া না দেয়, সেকারণেই বিধায়করা এখন সারাদিন খাটছেন।
তৃণমূলের এই শক্ত ঘাঁটিতে দাঁত ফোটানো যে অসম্ভব, তা প্রচারে গিয়ে টের পাচ্ছেন বিজেপি ও কংগ্রেস প্রার্থীরা। মমতার জনমুখী প্রকল্পের বিকল্প তাঁদের কাছে নেই। আম জনতা বলছে, তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর আমতায় শিল্প তালুক হয়েছে, বীরশিবপুরে তৈরি হয়েছে ৫০টিরও বেশি ছোট-বড় কারখানা। চারটি চটকলও চলছে। আমতা, উদয়নারায়ণপুর বা বাগনানের মতো এলাকায় কৃষকদের আয় বেড়েছে। কংগ্রেস প্রার্থী আজহার মোল্লা বলছেন, এখানে শ্রমিকরা ন্যূনতম মজুরি পান না। চাকরি নেই। আমতার আনিশ খানের আত্মা এখনও বিচার পাননি। বিজেপি প্রার্থী অরুণ উদয় পালচৌধুরী বলেন, উন্নয়নের পিছনেই রয়েছে দুর্নীতি। শিক্ষক নিয়োগ, আবাস— সবেতেই দুর্নীতি হয়েছে। সাংসদকে তো এলাকায় দেখাই যায় না। যদিও সাজদার বক্তব্য, এসব অপপ্রচার। তিনি সব জায়গায় যান। মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নকে দেখেই আমাকে ভোট দেবেন। নিজস্ব চিত্র