ব্রতীন দাস ও রবীন রায়, মাদারিহাট: একই আসনে সাড়ে আট বছর বিধায়ক থাকার ‘অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস’। সবটাই ‘স্টেজে’ মেরে দেব, এমন একটা ভাব। সেই সঙ্গে বিধায়ক থেকে সাংসদ হতেই অনেকটা বেড়ে গিয়েছিল মনোজ টিগ্গার ‘ঔদ্ধত্য’। ভরাডুবির পর মাদারিহাটে বিজেপির নিচুতলায় কান পাতলে শোনা যাচ্ছে এমনই চর্চা।
অভিযোগ, দলের কর্মীদের ‘পাত্তা’ দিতেন না মনোজ। যে চা বলয়ের মানুষ তাঁকে বারবার জিতিয়েছেন, সম্প্রতি তাঁদেরও খানিকটা ‘উপেক্ষা’ করে চলছিলেন। এরই সঙ্গে ভোটের মুখে যোগ হয় বিজেপির প্রাক্তন সাংসদ তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জন বারলার ‘বিদ্রোহ’। এই জোড়া ফলাতেই বিদ্ধ হয়ে মাদারিহাট আসন হারাতে হল বিজেপিকে, এমনটাই বলছেন দলের কর্মীরা। সঙ্গে প্রার্থী নির্বাচনও ঠিক হয়নি বলে মনে করছে গেরুয়া শিবিরের একাংশ। তাদের মতে, ‘শ্রমিক হত্যাকারী’ সিটু নেতা তারকেশ্বর লোহারের ছেলে রাহুল লোহারকে প্রার্থী করে স্বজনহারাদের ‘ব্যথা’ উস্কে দিয়েছে দল। তাছাড়া রাজ্য সরকার যেভাবে উন্নয়নের ডালি নিয়ে চা শ্রমিকদের পাশে দাঁড়িয়েছে, তাতেই উজাড় করে ভোট দিয়েছে চা বলয়।
এদিকে, উপ নির্বাচনের ফল ঘোষণার পরই ফের বিস্ফোরক বারলা। মনোজের নাম না করে তাঁর তোপ, একজনের অহংকারের জন্যই মাদারিহাটের ভোটে এই ফল হল। ‘ওয়ান ম্যান আর্মি’ দিয়ে কাজ করানোর খেসারত দিতে হল বিজেপিকে। যার সঙ্গে চা বাগান, মানুষের যোগাযোগ নেই, তিনি নেতৃত্বে থাকলে এমনটাই হবে। বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বের প্রতি ক্ষোভ উগরে দিয়ে বারলার মন্তব্য, কলকাতায় বসে সবটা ঠিক করে দেব। সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে দলের এলাকার কারও সঙ্গে কোনও কথা বলব না। এটাই যদি চলতে থাকে, আগামী দিনে আরও খারাপ হবে পরিস্থিতি।
এনিয়ে আলিপুরদুয়ারের বিজেপি সাংসদ মনোজ টিগ্গার পাল্টা মন্তব্য, কে, কী বলছেন জানি না। ভোটে হার-জিত থাকে। কোথায়, কী হয়েছে, নিশ্চয়ই তা খতিয়ে দেখা হবে। একইসঙ্গে বারলাকে উদ্দেশ করে তাঁর আক্রমণ, লিডারশিপ জেলার অধীনে থাকে। উনি তো জলপাইগুড়ি জেলার। আর বিজেপিতে গণতান্ত্রিকভাবেই সবকিছু হয়। সুতরাং ফালতু অভিযোগ করে কোনও লাভ নেই। মানুষের মন পরিবর্তনশীল। মানুষের অনেক চাওয়া-পাওয়া থাকে। ভোটে সেসব প্রভাব ফেলে।
তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ প্রকাশচিক বরাইক বলছেন, চা শ্রমিকদের ভুল বুঝিয়ে, মিথ্যে কথা বলে এতদিন মাদারিহাটে জিতেছে বিজেপি। কিন্তু এবার আর তা হয়নি। রাজ্য সরকার বাগানে চা সুন্দরী প্রকল্পে ঘর, জমির পাট্টা, ক্রেশ, পানীয় জল, জয় জোহার পেনশন সব দিচ্ছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নের উপর এবার আস্থা রেখেছেন মাদারিহাটের মানুষ।
তবে মনোজ যাই দাবি করুন না কেন, মাদারিহাটে যে ‘অঘটন’ ঘটতে চলেছে, ভোটের আগেই তার আভাস পেয়েছিল বিজেপি। মনোজের বিরুদ্ধে যে ভূরি ভূরি অভিযোগ রয়েছে, প্রচারে গিয়ে তা টের পান দার্জিলিংয়ের বিজেপি সাংসদ রাজু বিস্তা। বীরপাড়া-২ পঞ্চায়েতের মাকড়াপাড়ায় কার্যত দলের কর্মীদের ক্ষোভের মুখে পড়েন তিনি। সাংসদকে ঘিরে ধরে তাঁরা অভিযোগ করেন, ভোট দিয়ে বারবার জেতালেও মনোজ তাঁদের এলাকায় কোনওদিন আসেননি।
জয়ের পর মাদারিহাটের তৃণমূল প্রার্থী জয়প্রকাশ টোপ্পা।