নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: চতুর্থবারের জন্য বাংলার ক্ষমতায় আসছে তৃণমূলই। প্রত্যয়ী বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই প্রত্যয় অবশ্যই তাঁর থেকে নতুন প্রাপ্তি নয়। বরং এবার আরও এক ধাপ এগিয়ে দলের বৈঠকে তিনি স্পষ্ট বার্তা দিলেন, ‘২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটে দুই-তৃতীয়াংশ আসন নিয়ে আমরাই ফিরব।’
বিধানসভা নির্বাচনের আগে এ বছরটাকে পুরোমাত্রায় সাংগঠনিক কাজে লাগাতে চাইছে তৃণমূল। তার সূত্র ধরেই সোমবার বছরের প্রথম বৈঠক বিধায়কদের নিয়ে সেরে ফেললেন তৃণমূল নেত্রী। বিধানসভায় ওই বৈঠকে হাজির ছিলেন তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সিও। তৃণমূলের জমানায় রাজ্যজুড়ে যে উন্নয়নের কর্মকাণ্ড হয়েছে, তা হাতিয়ার করেই ছাব্বিশের ভোটযুদ্ধে নামবে জোড়াফুল ব্রিগেড। সেই কারণে বৈঠক শুরুর আগে বিধায়কদের দেওয়া হয় মমতার লেখা ‘লিপিবদ্ধ কিছু কাজ’ বইটি। তাতে বাংলার সরকারের উন্নয়নের কর্মযজ্ঞের সবিস্তার উল্লেখ আছে। দলীয় সূত্রে খবর, বৈঠকে মমতা বলেছেন, ‘কাউকে লাগবে না। বাংলায় আমরা একাই একশো।’ অর্থাৎ বিধানসভা ভোটের এক বছর আগেই মমতা স্পষ্ট করে দিলেন, অন্য কোনও দলের সঙ্গে জোটে যাচ্ছে না তৃণমূল। এর আগেও মমতা একাধিকবার অভিযোগ করেছেন, বিজেপি-সিপিএম-কংগ্রেসের মধ্যে গোপন আঁতাত রয়েছে। মহাজোট ‘ইন্ডিয়া’র সাম্প্রতিকতম ডামাডোল তাঁকে যে আরও বেশি অসন্তুষ্ট করেছে, তা এদিনের ঘোষণাতেই প্রমাণিত। তাই মমতা বলেছেন, ‘দিল্লিতে আম আদমি পার্টিকে কংগ্রেস, আর হরিয়ানাতে কংগ্রেসকে আপ সমর্থন দিলে, এই ফলাফল হতো না।’ অলনাইন মারফত ভুয়ো ভোটার কার্ড তুলছে বিজেপি। এমন তথ্য নেত্রীর কাছে এসেছে। সে সম্পর্কে তৃণমূল বিধায়কদের সতর্ক থাকতে বলেছেন তিনি।
এদিনের বৈঠকে বিধায়কদের উদ্দেশে একাধিক বার্তাও দিয়েছেন মমতা। বুঝিয়ে দিয়েছেন, সংগঠনের খুঁটিনাটি সব বিষয় তাঁর নজরে রয়েছে। তাঁর সাফ কথা, যেখানে সাংগঠনিক রদবদল প্রয়োজন, সেখানেই তিনি করবেন। তবে এর জন্য বিধায়করা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের কাছে আগামী ২৫ তারিখের মধ্যে ব্লক, টাউনের দায়িত্বের জন্য তিনটি করে নাম জমা দিতে পারেন। ছাত্র, যুব, মহিলা, সংখ্যালঘু, এসসি-এসটি-ওবিসি নেতৃত্বের নাম জমা দেবেন বিধায়করা। নেত্রী সেটা খতিয়ে দেখার পর সিদ্ধান্ত নেবেন। বিভিন্ন জায়গায় যাওয়া এবং কাউন্সিলারদের সঙ্গে কথা বলার নির্দেশ মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে দিয়েছেন মমতা। তবে বেফাঁস মন্তব্য ও দলকে অস্বস্তিতে ফেলার মতো কাজের জন্য উদয়ন গুহ, মদন মিত্র, হুমায়ুন কবীর, বিধান উপাধ্যায়ের উদ্দেশে কড়া বার্তা দিয়েছেন নেত্রী। মালদহে দলীয় নেতৃত্বকে গণ্ডগোল অবিলম্বে মিটিয়ে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মমতার হুঁশিয়ারি, ক্ষমা বারবার করা যায় না। ইটাহারের বিধায়ক মোশারফ হোসেনের কাজের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন মমতা। নিজের এলাকায় ১০-১২ ঘণ্টা চাটাই পেতে যেভাবে জনসংযোগ সারেন মোশারফ, তা মডেল হিসেবে দেখার জন্য বলেছেন মমতা। এছাড়াও জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক সম্পর্কে মমতা বৈঠকে বলেন, ‘অন্যায়ভাবে বালুকে আটকে রেখে দিয়েছিল। ওর বিরুদ্ধে আদালতে প্রমাণই দিতে পারেনি এজেন্সি।’