নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: কোন বাস কোথায় রয়েছে, কত গতিতে চলছে, তাতে নজর থাকবে প্রশাসনের। সরকারি হোক বা বেসরকারি, সমস্ত বাসের বেপরোয়া গতিতে রাশ টানতে চায় সরকার। তার জন্য তৈরি হবে একটি অ্যাপ। চালকরা বাস চালানো শুরু করলে সেই অ্যাপ চালু করতে হবে। ফলে, সরাসরি সরকারি সার্ভারে সেটি ‘কানেক্ট’ হয়ে যাবে। আপাতত, পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে কলকাতা, বিধাননগর ও হাওড়া মিলিয়ে ১২টি বাসরুটে এই অ্যাপ চালু হবে। সোমবার কলকাতা পুরসভায় এই সংক্রান্ত একটি বৈঠক হয়। সেখানে মেয়র তথা পুর ও নগরোয়ন্ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, পরিবহণ মন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী, ডিজি তথা তথ্য-প্রযুক্তি দপ্তরের সচিব রাজীব কুমার, কলকাতা পুলিস কমিশনার মনোজ ভার্মা, বিধাননগর ও হাওড়া পুরসভার আধিকারিক সহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন। বাস মালিক সংগঠনগুলিকেও বৈঠকে ডাকা হয়েছিল। কিন্তু, সরকারি এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে তাঁদের দাবি, সব বাস চালকের স্মার্ট ফোন নেই। তাহলে, অ্যাপ চলবে কীভাবে? সেক্ষেত্রে সরকারি সাহায্যের দাবিও তুলেছেন বাস মালিকরা।
পরে সাংবাদিক বৈঠকে ফিরহাদ হাকিম ও স্নেহাশিস চক্রবর্তী জানান, বাস চালকদের জন্য পৃথক অ্যাপ চালু হবে। আপাতত, এয়ার পোর্ট কেন্দ্রিক ১২টি রুটে সেটা পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হচ্ছে। বাস চালকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। কোন বাস কোন রাস্তায়, কত স্পিডে চলছে, তা অ্যাপের মাধ্যমে পুলিস প্রশাসন ও পরিবহণ দপ্তর দেখতে পারবে। ঠিক হয়েছে, বেশি গতিতে বাস চললে সংশ্লিষ্ট বাস চালকের কাছে সিগন্যাল পৌঁছে যাবে। এমন বেপরোয়াভাবে তিনবারের বেশি গাড়ি চালালে চালকের লাইসেন্স বাতিল করা হবে। আপাতত, কলকাতা, বিধাননগর ও হাওড়া মিলিয়ে ১২টি রুটে এই অ্যাপ চালু হলেও আগামী দিনে কলকাতা, শহরতলিসহ গোটা রাজ্যেই এমন অ্যাপ চালুর পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।
যদিও, জয়েন্ট কাউন্সিল অব বাস সিন্ডিকেটের সাধারণ সম্পাদক তপন বন্দ্যোপাধ্যায় সংবাদ মাধ্যমে বলেন, সব চালকের কাছে স্মার্ট ফোন নেই। অনেক বয়স্ক চালকও রয়েছেন। সকলের পক্ষে ফোনও কেনাও সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে সরকারি সাহায্যের দাবি করেছেন তাঁরা। পাশাপাশি, বিভিন্ন নতুন এবং পুরনো বাসের ক্ষেত্রে সরকারের যে জরিমানা বকেয়া পড়ে রয়েছে, সেগুলিও ছাড় চেয়েছেন বাস মালিকরা।
পাশাপাশি, এদিনের বৈঠকে উঠে এসেছে বাসস্টপ বা যাত্রী প্রতীক্ষালয়গুলির বেহাল দশার প্রসঙ্গ। ঠিক হয়েছে, প্রতিটি বাসস্টপ সংস্কার করে সেখানে লাগানো হবে ‘রিয়েল টাইম ডিসপ্লে’ বোর্ড। কোন বাস কোন স্টপে কখন আসবে, তা সেখানে ফুটে উঠবে। যাত্রী পরিষেবায় স্বাচ্ছন্দ্য ফেরাতে নয়ারূপে চালু হবে অ্যাপ। সেখান থেকে যাত্রীরা সরকারি, বেসরকারি বাস সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য পাবেন। অন্যদিকে, যে সব বাসস্টপে শেড নেই, সেখানেও যাত্রী শেল্টার তৈরির পাশাপাশি লাগানো হবে ডিজিটাল ডিসপ্লে বোর্ড। যেখানে বাসের সময়সূচি দেখানোর সঙ্গে বিভিন্ন বিজ্ঞাপনও চলবে। এক পুর কর্তা বলেন, প্রতিটি বাসস্টপেই এমন ডিসপ্লে বোর্ড লাগানো হবে। নিয়মিত বাসের টাইমিং জানানোর জন্য বিদ্যুৎ খরচসহ সেটা রক্ষণাবেক্ষণে যে টাকা লাগবে, তা বিজ্ঞাপন থেকেই উঠে আসবে।